
অনলাইন ডেস্কঃ
সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও ভোজ্যতেলের বাজারে সংকট কাটেনি। পাইকারি মোকাম খাতুনগঞ্জসহ চট্টগ্রামের বেশির ভাগ বাজারে মিলছে না চাহিদা মতো তেল। দোকানে সয়াবিন তেল কিনতে গিয়ে ভোক্তার লিটারে বাড়তি গুনতে হচ্ছে ১০-১৫ টাকা। তারা বলছেন, এবারের মতো কোনো রমজানে এত ভুগতে হয়নি ভোজ্যতেল নিয়ে।
রমজানের শুরু থেকে চট্টগ্রামের বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট। ভুক্তভোগীরা একের পর এক অভিযোগ তোলায় বাজার নিয়ন্ত্রণে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে মাঠে নামতে বাধ্য হন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ও জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। নগরের বেশ কয়েকটি বাজারে অভিযানে গিয়ে তেলের দেখা না পেয়ে চোখ কপালে ওঠে তাদের। পরে আমদানিকারক, উৎপাদনকারী ও আড়তদারদের নিয়ে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে জরুরি বৈঠক করেন। সংকট না কাটলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা। তবে রমজান শেষের দিকে হলেও সংকট থেকে মুক্তি মেলেনি। রমজান শুরুর আগে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে বাজারে তেল সরবরাহ স্বাভাবিক হবে বলে ঘোষণা দিলেও চিত্র ভিন্ন।
বহদ্দারহাট বাজারে স্বাভাবিক সময়ে খুচরা দোকানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বোতলজাত এক ও দুই লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল সারি সারি সাজিয়ে রাখলেও এখন নেই সেই দৃশ্য। বাজারে গিয়ে কিছু দোকানে পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল দেখা গেছে। বোতলের গায়ে ৮৫২ টাকা লেখা থাকলেও বিক্রি করা হচ্ছে ৯০০ টাকার ওপরে। সরকার প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের সর্বোচ্চ দাম ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করলেও তা কিনতে ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা। এই বাজারের প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে চকবাজারেও দেখা গেছে একই রকম চিত্র।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১৭ দিনে ১ লাখ টনের বেশি অপরিশোধিত তেল খালাস করা হয়েছে। একই সময়ে খালাস হয়েছে ২ লাখ টন সয়াবিন বীজও। সাতটি শিল্প গ্রুপ গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১১ মার্চ পর্যন্ত এসব খালাস করে। এ ছাড়া গত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত বন্দর থেকে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল খালাস হয়েছে ২ লাখ ৩২ হাজার টন। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) তথ্য অনুযায়ী, দেশে রমজানে ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকে প্রায় ৩ লাখ টন। সরকার আমদানি বাড়াতে ও দাম কমাতে আমদানিতে ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করলেও সুফল পাচ্ছে না ভোক্তা।
মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘সয়াবিন তেলের সংকটের পেছনে অসাধু ব্যবসায়ীদের হাত আছে। বাজার তদারকি করতে গিয়ে মনে হয়েছে কিছু সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী তেল সরিয়ে রেখেছে।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের উপপরিচালক মো. ফয়েজ উল্যাহ বলেন, ‘এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী তেল নিয়ে কারসাজি করছে। তারা চাহিদা মতো তেল সরবরাহ না করে নিজেদের গুদামে মজুত করছে।’
বহদ্দারহাটের আরএন ট্রেডিংয়ের মালিক মো. নওশাদ বলেন, ‘এখনও চাহিদা মতো তেল পাচ্ছি না। কয়েক সপ্তাহ আগে বুকিং দেওয়া তেল এখনও দোকানে আসেনি। তেল দিতে গড়িমসি করছে বেশির ভাগ কোম্পানি।’