
অনলাইন ডেস্কঃ
নির্বাচনী প্রচারণার সময় প্রতিশ্রুতির প্রেক্ষিতে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ ও অঞ্চলের পণ্যে যতটা শুল্ক রয়েছে, সেই দেশের পণ্যে পাল্টা বাড়তি শুল্ক আরোপের পদক্ষেপ নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরই অংশ হিসেবে প্রায় অধিকাংশ দেশের ওপর সর্বনিম্ন ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে মার্কিন প্রশাসন। বাদ যায়নি যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্ররাও।
বুধবার (২ এপ্রিল) হোয়াইট হাউজের রোজ গার্ডেনে দেয়া এক ভাষণে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, দশকের পর দশক ধরে আমাদের দেশ লুটপাট, শোষণ এবং নিপীড়নের শিকার হয়েছে, তা বন্ধ করার সময় এসেছে। আর দিনটিকে আগেই যুক্তরাষ্ট্রের “লিবারেশন ডে” হিসেবে ঘোষণা করেছেন তিনি।
ট্রাম্প যাদের ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন, এর মধ্যে ভারত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভিয়েতনামের মতো যুক্তরাষ্ট্রের বড় বাণিজ্যিক অংশীদারেরাও রয়েছে। ঘোষণা অনুযায়ী, ভারতের ওপর ২৭ শতাংশ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর ২০ শতাংশ এবং ভিয়েতনামের ওপর ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের পণ্য আমদানির ওপর ৩৪ শতাংশ এবং দেশটির একসময়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ মিত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
তবে ট্রাম্পের সর্বশেষ শুল্ক আরোপের তালিকায় নেই রাশিয়া, কানাডা, মেক্সিকো, উত্তর কোরিয়া, কিউবা ও বেলারুশসহ আরও কয়েকটি দেশের নাম। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে শত্রু দেশ হিসেবে পরিচিত রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার ওপর কেন শুল্ক আরোপ নির্ধারণ করা হয়নি তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানা প্রশ্ন।
তবে তালিকায় নাম না থাকলেও দেশগুলোর পার পাবার কোনো সুযোগ নেই। প্রতিবেশী দুই দেশ কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর আগে থেকেই ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া কানাডার জ্বালানির ওপর আরোপ রয়েছে ১০ শতাংশ শুল্ক।
এছাড়া রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া, কিউবা ও বেলারুশের নাম কেন নতুন শুল্কারোপ তালিকায় নেই, তার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, এসব দেশের ওপর আগে থেকেই বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ কারণে দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য খুবই সামান্য।
এ ছাড়া দেশগুলো আগে থেকেই উচ্চ শুল্কের মধ্যে রয়েছে। তাই তাদের সঙ্গে অর্থপূর্ণ বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে ওঠা সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।
তবে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক আলোচনা দেশটির ওপর শুল্কারোপ না করার অন্যতম কারণ হতে পারে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। এ বিষয়ে ভারতভিত্তিক বিনিয়োগ প্ল্যাটফর্ম জিরাফের সহপ্রতিষ্ঠাতা সৌরভ ঘোষ বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে পুতিনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে চান, তবে তাকে রাশিয়ার প্রতি সমর্থনমূলক আচরণ করতে হবে।
এ ছাড়া সৌরভ ঘোষ ব্যাখ্যা দিয়ে আরও বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এশিয়ার দেশগুলোর বাণিজ্য ঘাটতি বেশি, তাই স্বাভাবিকভাবে তালিকায় তাদের নামই বেশি। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২৯ হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার। চীনের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে