
বিশেষ প্রতিনিধি, বাগেরহাট থেকে ফিরে:
এম এইচ সেলিম একজন বেঈমান। ভাই নামের কলংক। তিনি দলের সাথে, দলের নেতা-কর্মীদের সাথে বেইমানি করেছেন। বাগেরহাট বিএনপি নেতা-কর্মীরা তাকে কোনদিনও ক্ষমা করবে না। এই কথাগুলো বলেছেন বাগেরহাট সদর আসনের সাবেক এমপি এম এইচ সেলিমের আপন ছোট ভাই জেলা বিএনপির সমন্বয়ক মোহাম্মদ আব্দুস সালাম।
জানা গেছে, সেলিম ও সালাম আপন দুই ভাই। সেলিম সিলভার সেলিম নামেই পরিচিত। সেলিম ও সালাম দুই ভাইই দেশের ধনাঢ্য ম্যানপাওয়ার ব্যবসায়ী। দুই ভাই এখন দুজন দুজনার প্রতিদ্বন্দ্বী। সেলিম দলের জেলা শাখার সভাপতি ছিলেন। ২০০১ এর নির্বাচনে বাগেরহাট সদর আসনের এমপি নির্বাচন করে বিজয়ী হন। সেই সময়ে দাপুটে নেতা ছিলেন। এই আসনেই এবার এমএইচ সেলিমের আপন ছোট ভাই আব্দুস সালাম বিএনপি থেকে আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী। বর্তমানে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করা সালাম এর আগে জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন।
সূত্র বলছে, ২০০৬ সালে বিএনপি ক্ষমতাচ্যুত হলে জেনারেল মইনের তত্ত্বাবধানে সেনাশাসিত ওয়ান ইলেভেন সরকার ক্ষমতায় আসে। দুর্নীতি- ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা মামলায় সিলভার সেলিম গ্রেফতার হয়ে যান। এর পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে।
টানা পনেরো বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। কারামুক্ত হয়ে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী সিলভার সেলিম আওয়ামী লীগের সাথে হাত মেলায়। বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন। আওয়ামী লীগের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সাথে মিলেমিশে ব্যবসা- বানিজ্য করেন। নিজের নামে মামলা প্রত্যাহার করিয়ে নেন সব।
ব্যবসা- অঙ্গন থেকে দলে এসেছিলেন সিলভার সেলিম। পরে নেতা হয়েছেন। আরও পরে এমপি হয়েছেন। জানা গেছে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পরে সিলভার সেলিম নতুন করে সক্রিয় হয়েছেন। আবারও সদর আসনে প্রার্থী হতে চান৷ বাধ সেধেছেন আপন ছোট ভাই সালাম। মাঠ এখন টোটালি ছোট ভাই সালামের নিয়ন্ত্রণে। বড় ভাইয়ের জন্য স্পেস দিতে নারাজ সালাম। বিএনপির নেতাকর্মীরাও সিলভার সেলিমের পরে ক্ষুদ্ধ- বিরক্ত।
এর আগে ছোট ভাই সালাম বাগেরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। সম্মেলনের লক্ষে বাগেরহাটে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি রয়েছে। আগামীতে সম্মেলন হলে সালাম আবারও সভাপতি হবেন এটা অনেকটা নিশ্চিত। জানা গেছে, দলের গ্রিন সিগনালের আশায় ইতমধ্যে লন্ডন থেকে ঘুরে এসেছেন সিলভার সেলিম। সেখানে সাড়া মেলেনি। দুই ভাইয়ের মাঠ দখল নিয়ে ১৪৪ ধারা পর্যন্ত গড়িয়েছে। সেখানে হেরেছেন বড় ভাই সিলভার সেলিম, জিতেছেন ছোট ভাই সালাম।
জনশ্রুতি আছে, তারেক রহমানের সাথে দেখাও করেছেন সিলভার সেলিম। দলে সক্রিয় হওয়া বা আগামীতে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন, এমন সিগন্যাল এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মেলে নি। ফলে, তার নিজ নিজ বলয়ের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভাকাঙ্ক্ষীরা চরমভাবে হতাশ। গেলো ঈদে আর বাগেরহাট যান নি সিলভার সেলিম।
সূত্র বলছে, সিলভার সেলিম ওয়ান ইলেভেনের পর থেকে দলে নিস্ক্রিয়। সেই সময়ে গ্রেফতারের পরে সেনাবাহিনীর হাতে ব্যাপক মারধরের শিকারও হন তিনি। জেল থেকে বের হয়ে আর দলমুখি হন নি। দলের জেলা সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। গত দুই দশক ধরে দলের পরিচয় তার কাছে কেউ দিলে তিনি তাকেই ধমক দিতেন। বিএনপিকে গালিগালাজ দিতেন। জোর গলায় বলেছেন, আমি বিএনপি করি না।
দলের লোকজন তার কাছে আসলে তিনি বলতেন, সালাম বিএনপি করে, তোমরা ওর কাছে যাও। বেগম জিয়া- তারেক রহমানকে নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছেন। জীবনে কোন দিন বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারবে না এমন কথা গর্বের সাথে বলেছেন এক সময়ের জেলা সভাপতি, বাগেরহাট সদর আসনের সাবেক এমপি সিলভার সেলিম। সেই সেলিম এখন দলে ফিরতে মরিয়া। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে আগ্রহী। আগে বেগম জিয়া- তারেক রহমানকে নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে, কটাক্ষ করে কথা বার্তা বললেও এখন তাদের নেতা মানছেন। দলে ফিরে এমপি প্রার্থী হতে নানা কৌশল অবলম্বন করছেন।
বাগেরহাটের নিজ বাসভবনে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, সাবেক এমপি সিলভার সেলিমের আপন ছোট ভাই, মোহাম্মদ আব্দুস সালাম বলেছেন, সেলিম সাহেব আমার নিজের ভাই, কিছুই বলার নেই। সালাম জানান, তার ভাই রাজনৈতিক স্বার্থ ছাড়া কিছুই দেখেন না। এক পা আগান না।
সালাম আরও বলেছেন, সে আমার ভাই নামের কলংক। দলের দু:সময়ে তিনি আমাদের সবাইকে ছেড়ে আলাদা ছিলেন। আওয়ামী লীগের সাথে তাল মিলিয়ে চলেছেন। ব্যবসা বাগিয়েছেন। নিজের বিরুদ্ধে আনিত মামলাসমূহ আওয়ামী লীগের সাথে মিলে মিশে নিস্পত্তি করেছেন। অভিযোগের সুরে সালাম বলেছেন, ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি নতুন করে তৎপরতা শুরু করতে চেয়েছিলেন। বাগেরহাট বিএনপির লোকজন তাকে অলরেডি লাল কার্ড দেখিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, সিলভার সেলিম, লন্ডন ও ঢাকাতে অবস্থানরত আরও দুই একজন নেতাকে সাথে নিয়ে বাগেরহাট বিএনপিকে কলুষিত করতে চাইছেন। তারা ডার্টি গেম মঞ্চস্থ করতে চাইছে। দৃঢ়তার সাথে আব্দুস সালাম বলেছেন, তাদের এই স্বপ্ন কোনভাবেই পূরণ হবার নয়।
সাবেক এমপি এমএইচ সেলিমের যে কোন রাজনৈতিক অপতৎপরতার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে বাগেরহাট বিএনপি।
আলাপকালে তরুন এই নেতা জানান, বাগেরহাটে বিএনপি আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। নেতা-কর্মীরা কঠিন ইস্পাতের মতো ঐক্যবদ্ধ। জেলার সর্বত্র অধিকাংশ ইউনিটে কমিটি হয়ে গেছে। কেন্দ্র থেকে তারিখ ও নির্দেশনা পেলেই জেলা সম্মেলন করা হবে।
আওয়ামী লীগের টানা পনেরো বছর শাসন আমলে বাগেরহাটে কোন উন্নয়ন হয় নি এমন দাবি সালামের। দল ক্ষমতায় গেলে জেলার পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন, খানজাহান আলি মাজার ও ষাট গম্বুজ মসজিদের উন্নয়ন, শহরে আধুনিক পার্ক, ওয়াকওয়ে নির্মাণ, রাস্তাঘাট উন্নয়ন- সংস্কারে তিনি ভুমিকা রাখবেন।
উল্লেখ্য রোজার আগে স্থানীয় বিএনপির বাধার মুখে সিলভার সেলিম জোর পূর্বক বাগেরহাটে ঢুকতে গেলে স্থানীয় প্রশাসন ১৪৪ ধারা পর্যন্ত জারি করে। তারপর থেকে তিনি আর বাগেরহাটমুখি হননি।