
বিশেষ প্রতিনিধি:
কেন্দ্রীয়ভাবে আত্মপ্রকাশের দেড় মাসেও দেশের কিংসপার্টি খ্যাত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) খুলনাতে কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। রাজনৈতিক কার্যক্রম দৃশ্যমান না হলেও দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ দাবি করে বলেছেন, খুলনাতে দল গঠনে চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে। যা খুব শিগগিরই দৃশ্যমান হবে।
সূত্র বলছে, বিএনপির সাবেক নেতা, প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান, জনপ্রিয় নেতা আরিফুর রহমান মিঠু ইতিমধ্যেই দলের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছেন। জুলাই বিপ্লবে নিহত শহীদের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে মিঠু তার নতুন দলে যাত্রা শুরু করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, খুলনা- ৩ আসনে মিঠু এবার এনসিপি থেকে প্রার্থী।
নেতারা বলেছেন, দল গঠনের লক্ষে দিনরাত হোম ওয়ার্ক চলছে। দীর্ঘদিন বিএনপিতে উপেক্ষিত হয়ে আছেন এমন একজন জনপ্রিয় নেতার সাথেও কথা চলছে, এমন দাবি এনসিপির। ঈদের আগে ঢাকা থেকে আসা এনসিপির কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা আলোচিত সেই নেতার বাসভবনে গিয়ে মিলিত হয়েছেন। দীর্ঘক্ষণ দলে যোগদান, আগামী দিনের রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করেছেন।
তবে সূত্র বলছে, সেই নেতা সরাসরি হ্যা বা না এমন কিছু না বললেও তরুন এই শিক্ষার্থীদের কাছে সময় নিয়েছেন। ধারণা থেকে এনিসিপির দায়িত্বশীল এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে অন লাইন নিউজ পোর্টাল প্রথম সময় নিউজ ডটকমের সাথে আলাপকালে এমন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। কৌশলগত কারণে সেই নেতার নাম ও পরিচয় উল্লেখ না করলেও সূত্রমতে ব্যাটে বলে মিললে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী- সমর্থকদের নিয়ে সেই নেতাকে আগামী নির্বাচনে এনসিপি বা বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীদের সমর্থনে খুলনা সদর আসনে প্রার্থী হিসেবে দেখা যেতে পারে, এমন আভাস মিলেছে।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারিতে সরকারের সমর্থনে বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ ও নাগরিক কমিটির সাবেক নেতৃবৃন্দের সমর্থনে জাতীয় নাগরিক পার্টি নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল দেশে আত্মপ্রকাশ করে। সরকারের তথ্য উপদেষ্টা থেকে পদত্যাগ করে এসে নাহিদ ইসলাম এই দলের আহবায়ক হিসাবে দায়িত্ব নেন। অন্যদিকে, নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন নতুন এই দলের সদস্য সচিবের দায়িত্ব নেন।
সেই থেকেই খুলনার রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন শুরু হয়, এই দলের হয়ে খুলনাতে কে কে দায়িত্বে আসছেন বা কারা কারা নেতৃত্বে আসছেন। এদিকে, জাতীয় পার্টির বহুল আলোচিত নেতা, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক এমপি আব্দুল গফফার বিশ্বাস সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করায় তাকে নিয়েও গুঞ্জন উঠেছে, তিনিও জাতীয় নাগরিক পার্টির সাথে যুক্ত হচ্ছেন কিনা?
জানা গেছে, এমন আলোচনায় খুলনার প্রভাবশালী বিশ্বাস পরিবারের বেশ কয়েকজন নেতা, একজন সাবেক মেয়র, একজন সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র, বেশ কয়েকজন কাউন্সিলররাও রয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে শেখ বাড়ির এক সময়ের খুব ঘনিষ্ট, থানা পর্যায়ের একজন নেতা যিনি ঘোষণা দিয়ে পদত্যাগ করে আওয়ামী লীগ ছেড়েছিলেন সেই নেতার নামও শোনা যাচ্ছে। সেই নেতা আগস্টে বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীদের কোটা বিরোধী আন্দোলনকে সমর্থন করে আওয়ামী লীগ ছেড়ে খুলনা শহরে আলোচনার ঝড় তুলেছিলেন।
এনসিপি সূত্র জানিয়েছে, খুলনাতে সিনিয়র অনেক রাজনৈতিক নেতাদের সাথেই তাদের আলোচনা চলমান। তাদের অপেক্ষায় খুলনা এনসিপি অপেক্ষমান। অন্য দল থেকে নেতারা নতুন এই দলে আসলে এক হিসাব, না আসলে আরেক হিসাব। খুলনাতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আল শাহরিয়ার, নগর সদস্য সচিব জহরুল জেলা শাখায় তাসলিম আহমেদ, জেলা সদস্য সচিব সাজেদুল ইসলাম বাপ্পি, আহমেদ হাসিব রাহাত, সাইফ নেওয়াজ প্রমুখ নেতারা দলের জেলা ও নগরে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন। সম্ভাব্য নেতা হিসাবে এরাই আলোচনায় রয়েছেন৷
সূত্র বলছে, প্রচলিত ধারায় খুলনাতে এখুনি সভাপতি- সাধারণ সম্পাদক করা হচ্ছে না। কয়েকজন মিলে স্টিয়ারিং কমিটির আদলে একটি সাংগঠনিক টিম থাকবে, যেখানে সম্মিলিত ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে দলের কার্যক্রম চলবে, পাশাপাশি নগরীর সমস্ত ওয়ার্ডে ওয়ার্ড ইউনিট করা হবে।
আসন্ন খুলনা সিটি করপোরেশনে মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচন, জাতীয় নির্বাচন, জেলা পরিষদ নির্বাচন এমনকি স্থানীয় সরকার পর্যায়ে জেলার বিভিন্ন উপজেলা- ইউপি নির্বাচনেও জাতীয় নাগরিক পার্টি অংশ নেবে। নগরীর ময়লাপোতা মোড় থেকে শিববাড়ি রোডের মধ্যে সুবিধাজনক কোন এলাকাতে দলের অফিস খোঁজা হচ্ছে।
নব গঠিত দলের নেতারা দাবি করেছেন, একটি জনকল্যাণমুখী রাজনীতি তারা খুলনাবাসীকে উপহার দিতে চান। ক্লিন ইমেজের নেতাদের নিয়ে দল গঠনের লক্ষে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। গেলো রমজানে খুলনা ক্লাবে অত্যান্ত ব্যয়বহুল ইফতার পার্টির আয়োজন করে ইতমধ্যেই এনসিপি খুলনাবাসীর নজরে এসেছে। ব্যয়বহুল ইফতার পার্টি প্রসঙ্গে দলের নেতারা বলেছেন, নিজেদের দেওয়া চাঁদার টাকা, বিভিন্ন শুভাকাঙ্খীদের কাছ থেকে স্পন্সর নিয়ে তারা ইফতার পার্টি দিয়েছেন। রাজনৈতিক কালচারের অংশ ও সমাজের এলিট শ্রেণীদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতেই তাদের এই প্রয়াস।
সূত্র বলছে, রুপসা ঘাটে টোল ফ্রি করতে তারা ইতমধ্যেই কর্মসূচি দিয়েছেন। পাশাপাশি খুলনা উন্নয়নে তাদের নানামুখী পরিকল্পনা রয়েছে। দলের নেতারা বলেছেন,আড়াইশো বেড হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি, মৃতপ্রায় শিল্পাঞ্চল নগরী খুলনাকে আবারো শিল্পনগরী হিসাবে গড়ে তোলার জন্য এনসিপি কাজ করে যাবে।
খুলনাতে আধুনিক স্টেডিয়াম নির্মাণসহ বর্তমানে বয়রা স্টেডিয়ামকে সংস্কার, সোনাডাঙ্গা থেকে জয়বাংলা মোড় পর্যন্ত রাস্তার দ্রুত উন্নয়ন, গল্লামারি ও সেনহাটি ব্রিজের দ্রুত নির্মাণ কাজ সম্পন্ন, খুলনাতে এয়ারপোর্ট বাস্তবায়নের দাবিতে এনসিপি রাজনৈতিক কর্মসূচি দিতে যাচ্ছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ বা তাদের দোসর বাদে যে কোন সুস্থ মানুষ এনসিপি করতে পারবে, আলোচনাকালে এমনটি যোগ করেছেন নেতারা।