
বিশেষ প্রতিনিধি, খুলনা থেকে
খুলনাতে এক রেস্টুরেন্টের নারী মালিকের সাথে বাড়ি ভাড়া চুক্তি লঙ্ঘন করে অন্যের সাথে নতুন করে চুক্তি নবায়নের অভিযোগ উঠেছে। আলোচিত এই বাড়িওয়ালা পেশায় একজন আইনজীবী। গত আওয়ামী লীগ সরকারে তিনি দফায় দফায় খুলনা আদালতে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ছিলেন। রেস্টুরেন্টের নতুন করে চুক্তি নবায়নের ফলে নারী উদ্যোক্তা রেস্টুরেন্ট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পথের ফকিরে পরিণত হয়েছেন। গত কয়েক মাসে তিনি কয়েক কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। রেস্টুরেন্টের মালিকানা হারানোর পর থেকে দখলদার ইতমধ্যেই দোকানে সাইনবোর্ড পর্যন্ত পরিবর্তন করেছে।
জানা গেছে, নারী উদ্যোক্তা শরিফা খাতুন ঘটনার বিচার চেয়ে প্রশাসন ও ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। তিনি ইতমধ্যেই ঘটনার প্রতিকার চেয়ে খুলনা থানা, স্থানীয় যৌথ বাহিনী বরাবর অভিযোগ করেছেন। বাড়িওয়ালা প্রভাবশালী ও আইনজীবী হওয়ায় কাঙ্খিত সুফল তিনি পাননি। ফলে, চুক্তিনামা লঙ্ঘন, প্রতারণা, রেস্টুরেন্ট দখল, বিভিন্ন সময়ে হুমকি ধামকি দেয়া ও রেস্টুরেন্ট ফিরে পেতে তিনি আজ আইনি লড়াইয়ে আশ্রয় নিয়ে তার বাড়িওয়ালা সেই আইনজীবীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা খুলনার আদালতে করতে যাচ্ছেন। এই ঘটনায় গত রাতে বাড়িওয়ালা সেই আলোচিত আইনজীবীকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন না ধরায় তার বক্তব্য পাওয়া যায় নি।
সূত্র বলছে, নূর কাচ্চির মালিকপক্ষ আসাদুজ্জামান নূরের কাছ থেকে পাওয়ার অব এটর্নির বলে স্ত্রী শরিফা কাদের বর্তমানে নুর কাচ্চির মালিক। নূরের দুই স্ত্রী বিদ্যমান। প্রথম স্ত্রীর ছেলে এখন রেস্টুরেন্ট দখল করে নিয়ে চালাচ্ছেন। আইন ও দোকান ভাড়ার চুক্তিমতে রেস্টুরেন্টের মালিক এখনও দ্বিতীয় স্ত্রী শরিফা।
অন লাইন নিউজ পোর্টাল প্রথম সময় নিউজ ডটকমের সাথে আলাপকালে নূর ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী উভয়েই বলেছেন, তাদের প্রথম স্ত্রীর সন্তান বখে গেছে। সে একজন নেশাখোর ও মাদকাসক্ত। পিতা বা পরিবারের প্রতি কোন শ্রদ্ধাবোধ- সম্মান নেই। পিতার অবাধ্য সন্তান হওয়ায় পিতা তার রেস্টুরেন্ট দ্বিতীয় স্ত্রী শরিফা কাদেরকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়ে রেস্টুরেন্ চালাতে দিয়েছেন। চালাচ্ছেন। শরিফা সেই সুবাদেউ এতো দিন রেস্টুরেন্ট চালিয়ে আসতেছিলেন৷
নূর ও শরিফা দম্পতি অভিযোগ করেছেন, গত বছরের জানুয়ারিতে বাড়িওয়ালা আইনজীবী ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তাদের কাছে দেড় কোটি টাকা লোন হিসাবে এডভান্স চায়। রেস্টুরেন্ট চালাতে গিয়ে এর আগেই সেখানে এই দম্পতির ৩০ লাখ টাকা অগ্রিম রাখা আছে। টাকা দেয়া সম্ভব না, সামর্থ্যের বাইরে এমন কথা তাকে বারবার জানানোর পরেও বাড়িওয়ালা নানান টালবাহানা করতে থাকেন। ব্যাংকের কাছে বাড়ি বন্ধক আছে, এমন সেন্সিটিভ কারণ দেখিয়ে রীতিমতো ব্লাকমেইল করতে থাকে।
এর মধ্যেই জুলাই আগস্ট শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলন চলে আসলে নূর কাচ্চির মালিক আসাদুজ্জামান নূরকে আওয়ামী লীগের দোসর সাজিয়ে বাড়িওয়ালা তাকে খুলনা ছাড়া করতে বাধ্য করেন। স্ত্রী শরিফা বাড়িওয়ালার নিয়মিত হুমকি- ধামকিতে এবং দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে এক পর্যায়ে অসহায় হয়ে পড়েন। এই দম্পতির অভিযোগ, বৈষম্য বিরোধী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভুল বুঝিয়ে তাদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া হয় পরিকল্পিতভাবে।
চুক্তির মেয়াদ আরও তিন বছর বাকি থাকা সত্বেও অবিশ্বাস্যভাবে তার প্রথম পক্ষের ছেলের সাথে বাড়িওয়ালা চুক্তি করেন। শরিফা অভিযোগ করেছেন, তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই, বাড়িওয়ালা আমার সাথে চুক্তি নবায়ন করবে না তবে সেটা বাড়িওয়ালা আমাকে লিখিত বা মৌখিকভাবে অন্তত তিন মাস আগে জানাবে। আমার সাথে চুক্তি বাতিল করবে। আমার অগ্রিম দিয়া টাকা তিনি আমাকে ফেরত দেবেন, অথচ বাড়িওয়ালা এসব কিছুই করেননি।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আইনের লোক হয়ে তিনি এই বেআইনি কাজটি কিভাবে করলেন, তা আদৌ বোধগম্য নয়। সেখানে আমার বেশ কয়েকটি ফ্রিজ, বেশ কয়েকটি এসি, অন্যান্য কোটি টাকার সরঞ্জামাদি রয়েছে। কোটি টাকার ডেকোরেশন রয়েছে। এই রেস্টুরেন্ট তিল তিল করে গড়েছি। সেটাই সুকৌশলে দখলে নিয়েছে বাড়িওয়ালা।
কান্নাজড়িত কন্ঠে এই নারী উদ্যোক্তা বলেন, আমি এর বিচার চাই। আমার কাগজপত্র দেখা হোক। যদি কাগজপত্র বলে আমি সঠিক, সেটার নায়্য বিচার চাই। একটি চুক্তি বহাল থাকা অবস্থায় আরেকটি চুক্তি কিভাবে করেন, সেটা তদন্ত হোক। বাড়িওয়ালা আইনজীবী হওয়ার প্রেক্ষিতে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমার সাথে যে অবিচার করেছে, তার বিচার চাই।