
কয়রা, খুলনা প্রতিনিধি:
খুলনার কয়রা উপকূলীয় অঞ্চল ।এখানকার অধিকাংশ সুন্দরবন ও কৃষি কাজের উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্ভয় করে । উপজেলা সদর থেকে জেলা শহরের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার ।উপজেলা একমাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে , ভাল কোন হাসপাতাল ও ক্লিনিক না থাকায় প্রতিনিয়ত জেলা শহরে চিকিৎসা নিতে হয় নিম্ন আয়ের এ সব মানুষদের । রোগীদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে দ্বিগুণ ভাড়ায় চলছে খুলনার কয়রার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স।
উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালকের বিরুদ্ধে এমনটাই অভিযোগ স্থানীয়দের।সরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ১০ টাকা হলেও নির্ধারিত সেই ভাড়ার তোয়াক্কা না করে দ্বিগুণ ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এই অ্যাম্বুলেন্স চালকের বিরুদ্ধে। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টি প্রকাশ্যে হলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তা দেখছেন না। সেবা নিতে আসা ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, অ্যাম্বুলেন্স চলাচলে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকলেও তা অনুসরণ করেন না চালক আব্দুল মজিদ। অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে পথে বাণিজ্য করেন তিনি। রেফার করা হাসপাতালে রোগী পৌঁছে দিয়ে ফেরার পথে প্যাসেঞ্জার তুলে নেন। ইচ্ছামতো অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে মুমূর্ষু রোগীর কাছ থেকে। রোগী ফেরত না আসলেও ফিরতি ভাড়া নিয়ে থাকেন । হেরফের হলে নানা অজুহাতে বন্ধ রাখা হয় অ্যাম্বুলেন্স।
নানা তালবাহানায় তার নির্ধারিত ভাড়া না দিলে হতে হয় ভোগান্তির শিকার। এতে সময় মতো উন্নত চিকিৎসা না পাওয়ায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। স্থানীয়দের দাবি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য ও হয়রানি বন্ধ করে সরকারি নিয়ম ও সরকার নির্ধারিত ভাড়া নেয়া হোক । উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ন্ত্রিত দুটি ,একটি সরকারি ভাবে দেওয়া ও একটি জাইকা থেকে পাওয়া একটি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে।
দীর্ঘদিন একজন চালক দিয়ে রোগীদের জন্য চলে অ্যাম্বুলেন্স সেবা কার্যক্রম। হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে ৯০- ১৩০ জন রোগী বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা নেন। তবে অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজন হয় গড়ে ৩-৪ জনের। এ হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে জেলা শহর খুলনা ,সাতক্ষীরা ,যশোর নিয়মিত রোগী নিয়ে যাওয়া হয়। খুবই কম ঢাকায় রোগী নিয়ে যাওয়া হয়।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির কর্মকর্তাদের দাবি বাড়তি টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই ।জেলা শহরে নিতে ২০০০-২৫০০ টাকা নেওয়া হয়। রোগীর আর্থিক অবস্থা দেখে সাথে সাথে রোগী ও তাদের স্বজনদের এখন টাকা নিয়ে রসিদ দেওয়া হয়। মহারাজপুর গ্রামের বাসিন্দা রাকিব হাসান জানান,অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিয়ে ভোগান্তি শিকার সেবা নিতে আসা অধিকাংশ রোগী ও রোগীর স্বজনরা।কয়েক দিন আগে আমার এক প্রতিবেশী অসহায় অসুস্থ রিকশা চালককে নিয়ে হাসপাতালে যান তার দুই মেয়ে ও স্ত্রী তার অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাতেই রেফার করেন।
রাতেই জেলা শহরে নিতে অ্যাম্বুলেন্স এর চালকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি রাতের দোহাই ৪০০০ চান। অসহায়ত্বের কথা বার বার বলার পরও তিনি টাকা না কমিয়ে নানা তালবাহার পথে ৩৫০০ টাকার চুক্তিতে খুলনা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর তিনি মারা যান। হয়রানি না করে কয়েক ঘণ্টা দেরি না করলে হয়ত অসহায় মানুষটি বেঁচে যেত।
প্রতিনিয়ত অ্যাম্বুলেন্স চালক দ্বারা সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তিনি হয়রানি বন্ধে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। কয়রা মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের নয়ানী গ্রামের বাসিন্দা জাকারিয়া হোসেন বলেন, কিছুদিন আগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে আমার জামাইয়ের মেয়েকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের চালক আব্দুল মজিক ৩ হাজার টাকা ভাড়া নিয়েছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মাছুম বিল্লাহ বলেন, গত শনিবার রাতে আমার এক আত্মীয় গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্মরত চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য শহরে চিকিৎসা নিতে বলেন। ওই রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক আব্দুল মজিদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ৩৫০০ টাকা ভাড়া চান৷ রোগীর পক্ষে এতো টাকা বহন করা সম্ভব নয় চালককে জানালে তিনি সব কিছু বাড়তি, এর কম যেতে পারবেন না বলে জানিয়ে ৩৫শ টাকা হলে যাবেন না হয় অন্য ব্যবস্থা করেন।
কয়রা সদরের আল আমিন ইসলাম বলেন , আমার এক ভাবি অসুস্থ থাকায় তাকে জেলা শহরে নিতে অ্যাম্বুলেন্স চালককে ফোন দিয়ে ভাড়া জানতে চাইলে তিনি ৩৫০০ টাকা চান। পরে স্থানীয় এক ব্যক্তির অ্যাম্বুলেন্স ৩০০০ টাকা দিয়ে নিয়ে যাই। বিষয়টি নিয়ে কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক আব্দুল মজিদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগটি স্বীকার করে বলেন, আমাদের সরকারি বাজেট না থাকায় আমরা ঢাকা যাই না। হাসপাতাল থেকে ২হাজার টাকা নির্ধারণ করা। আমরা কিছু খরচের জন্য চেয়ে নিই।
তিনি বলেন, ৩৫০০ টাকা নেওয়ার কথা সঠিক নয়। গাড়ির তেলের সঙ্গে আরও অনেক খরচ হয়। তবু কোনো রোগীকেই চাপ দিয়ে ভাড়া নেওয়া হয় না। তাঁরা খুশিমতো যা ভাড়া দেন তা নেওয়া হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রেজাউল করিম বলেন, ইতিপূর্বে কয়েকটি বিষয় জানার পর আমরা চালককে লিখিত ও মৌখিক ভাবে সতর্ক করেছি । অতিরিক্ত ভাড়ার নেওয়ার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। কিলোমিটার প্রতি ১০ টাকা নির্ধারিত এর বেশি নিলে আমাদের জানানোর অনুরোধ।
নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত নিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খুলনা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোছা. মাহফুজা খাতুন বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার তো কোনো সুযোগ নেই। রোগী নিয়ে গেলে রোগীর স্বজনরা খুশি হয়ে টিপস দিলে সেটা অন্য বিষয়। তবে রোগীদের জিম্মি করে যদি অতিরিক্ত ভাড়া নেয় সেটা অন্যায়। বিষয়টিখোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে, এমনটি জানান তিনি।