
বিশেষ প্রতিনিধি:
আগামীকাল খুলনাতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ উদ্যোগে তারুণ্যের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। জানা গেছে, রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের সমন্বয়ে খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দানে বিকাল ৩ টায় এই সমাবেশ হবে। এই সমাবেশে সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন অংশ যোগ দেবে বলে জানা গেছে।
তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে হবে তারুণ্যের মহামিলন, এমন মন্তব্য করে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, সাবেক ছাত্রনেতা শফিকুল আলম তুহিন বলেছেন, এখানে সমবেত হবেন খুলনা ও বরিশাল বিভাগের নানা শ্রেণি-পেশা, বিশ্বাস, মতাদর্শ ও সামাজিক পটভূমি থেকে উঠে আসা তরুণ-তরুণীরা। যারা স্বপ্ন দেখেন একটি আধুনিক, ন্যায্য ও মানবিক বাংলাদেশের। তাদের সঙ্গে থাকবেন বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নিবেদিত প্রাণ নেতাকর্মী ও সমর্থকবৃন্দ।
তুহিন আরও বলেছেন, যারা গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। যারা গত ১৬ টি বছর দেশনেত্রী, গনতান্ত্রিক আন্দোলনের আপসহীন নেত্রী বেগম জিয়া ও তারুন্যের অহংকার, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিক নির্দেশনায় ও পরামর্শে আন্দোলনে রাজপথে ছিলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে হটিয়েছেন।
তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ নিয়ে খুলনা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মিরাজুর রহমান মিরাজ বলেন, বিগত ১৬ বছর বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, বাকস্বাধীনতা ফিরে পাওয়ার জন্য, হারানো গণতন্ত্রকে পুন:রুদ্ধারের জন্য এবং একটি দৃশ্যমান ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করেছে। ১৭ তারিখের সমাবেশের মাধ্যমে তরুণরা একাত্মতা প্রকাশ করবেন। এই সমাবেশ থেকেই তারুণ্যের রাজনীতির নতুন অধ্যায়ের অগ্রযাত্রা শুরু হবে।
মহানগর যুবদলের আহবায়ক আব্দুল আজিজ সুমন বলেছেন, দেশের জনসংখ্যার বড় অংশই তরুণ। জুলাই -আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে ছিলেন এই তরুণেরা। দেশের নানাবিধ কাজে আমরা এখনও পুরোপুরিভাবে তরুণদের যুক্ত করতে পারি নাই। বিএনপি এই তরুণদের মেধা, জ্ঞান এবং তাদের স্বপ্নকে ধারণ করতে চায়। পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে তরুণদের দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে চায়।
তিনি আরো বলেন, তারুণ্যের ভবিষ্যৎ ভাবনা ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ প্রথম কোন রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির এক যুগান্তকারী কর্মসূচি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এই আয়োজন নিশ্চয়ই একটি মাইলফলক। এই কর্মসূচি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অভিনব নেতৃত্ব এবং নির্দেশনার উজ্জ্বল স্মারক।
মহানগর বিএনপির মিডিয়া সেলের আহবায়ক মিজানুর রহমান মিলটন বলেছেন, দেশের নানাবিধ কাজে আমরা এখনও পুরোপুরিভাবে তরুণদের যুক্ত করতে পারি নাই। অথচ দেশের জনসংখ্যার বড় অংশই তরুণ, যারা রাষ্ট্র গঠনে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তারুণ্যের ভবিষ্যৎ ভাবনা ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ কেবল রাজনৈতিক কর্মসূচি নয় বরং এটি একটি প্রজন্মের সঙ্গে সংলাপ গড়ার সেতুবন্ধন।
এই উদ্যোগে আমাদের সম্ভাবনাময় তরুণদের সংযোগের মাধ্যমে আগামীর পথচলার দিক খুঁজে পাওয়া যাবে। সেমিনার ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত সময় পার করছে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। একই সাথে অভিভাবক সংগঠন বিএনপির নেতাকর্মীরাও দুইদিনে কর্মসূচি সফল করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। প্রতিদিন প্রস্তুতি সভা, নগরীতে পোষ্টারিং, মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে।
খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তানজিম বিশ্বাস বলেছেন, তারুণ্যের সমাবেশের চালিকা শক্তিই হচ্ছে দেশের ছাত্রস্মাজ৷ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির অভিনব কর্মসূচি উল্লেখ করে তানজিন বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায়, বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনে শরিক রাজনৈতিক দলগুলো ঘোষিত ৩১ দফা রূপরেখা বাস্তবায়নে তরুণ সমাজকে নীতি-প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী কর্মসূচি। জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল ও ছাত্রদলের যৌথ আয়োজনে দেশের চারটি বিভাগীয় কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে ধারাবাহিক সমাবেশ। গত ১০ মে চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে প্রথম অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৭ মে খুলনার সমাবেশে তরুণদের ব্যাপক উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে। তরুণদের মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। দক্ষতানির্ভর ও কর্মমুখী মানবসম্পদ হিসেবে দেশের তরুণ প্রজন্মকে গড়ে তুলতে হবে।
সূত্র বলছে, খুলনার পরে ধারাবাহিকভাবে একই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে বগুড়া ও ঢাকায়। এসব সমাবেশে রাজনৈতিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার তরুণ প্রতিনিধি, শিক্ষার্থী, চিন্তাবিদ, উদ্যোক্তা ও বক্তারা অংশ নেবেন। আলোচনায় উঠে আসবে তারুণ্যের ক্ষমতায়নে একটি আধুনিক, মানবিক ও নিরাপদ বাংলাদেশ গঠনের রূপরেখা।
এদিকে সমাবেশকে সফল করতে বিএনপির কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক, খুলনা- ৩ আসনের এমপি প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুল, কেন্দ্রীয় বিএনপির তথ্য এ গবেষণা সম্পাদক ও খুলনা- ৪ আসনের এমপি প্রার্থী আজিজুল বারি হেলাল, সাবেক ছাত্রনেতা ও খুলনা- ১ আসনের এমপি প্রার্থী জিয়াউর রহমান পাপুল প্রমুখ নেতারা খুলনা এসেছেন। সমাবেশ সফল করতে স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দের সাথে সিরিজ মিটিং করছেন। সমাবেশ সফল করতে বেশ কয়েকটি উপ কমিটি করা হয়েছে। সমাবেশের পরে বর্ণাঢ্য সংস্কৃতি সন্ধ্যায় দেশের প্রখ্যাত সংগীত শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করবেন।
সাবেক ছাত্রনেতা ও খুলনা- ১ আসনের এমপি প্রার্থী জিয়াউর রহমান পাপুল বলেছেন, শহীদ জিয়ার পথ ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের রাজনৈতিক কাঠামোয় গুণগত পরিবর্তনের জন্য নিরলসভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সেই পথ ধরেই তিনি তরুণদের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে চান। তরুণদের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলে কেউ আর এই দেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারবে না।
বিএনপি মঞ্জু গ্রুপের নেতা প্রফেসর আরিফুজ্জামান অপু আলাপকালে বলেছেন, এই সমাবেশে আমরাও যোগ দেবো। নগর রাজনীতি ও বর্তমান নেতৃত্বের সাথে দ্বন্দ থাকলেও দলের প্রতি আমরা সব সময়ে বিশ্বস্ত। দলের প্রতিটি কর্মসূচি বিশ্বস্ততার সাথে পালন করে আসছি। অতীতের সমাবেশগুলোতে আমাদের নজরকাড়া অংশগ্রহণ ছিলো। এবারেও থাকবে। এটা দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি। প্রফেসর অপু জানান, আমরা তেঁতুলতলা মোড়ে জমা হয়ে পরে সার্কিট হাউস ময়দানের সমাবেশের আশেপাশে পৃথক অবস্থান নিয়ে বসবো।
জানা গেছে, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের আওতাধীন সব জেলা থেকেই তিন অঙ্গ সংগঠনেরই প্রতিকী অংশগ্রহণ থাকছে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে নগরী সেজেছে নতুনভাবে। ব্যানার- ফেস্টুন- প্যানার কারণে শিববাড়ি ও আশেপাশের এলাকা ধরে সাজ সাজ রব। জেলা ও নগর বিএনপির নেতারা দিন রাত কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
যুবদল- স্বেচ্ছাসেকদল ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা সমাবেশে যোগ দিতে খুলনা যাচ্ছেন। কেউ কেউ ইতমধ্যেই পৌঁছে গেছেন।। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুলের এই সমাবেশে যাবার কথা থাকলেও চিকিৎসার জন্য বর্তমানে ব্যাংকক অবস্থান করায় তিনি খুলনা যাচ্ছেন না। তবে স্থায়ী কমিটির সিনিয়র একাধিক নেতা সমাবেশে যোগ দিতে খুলনায় যাচ্ছেন।