
অনলাইন ডেস্কঃ
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জন ও চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কয়েকজন নেতা। সংকট উত্তরণে তারা সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন জাতীয় স্বার্থে সবাইকে একমত হতে হবে। তবে দুই ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগের বিষয়ে বিএনপির দাবিকে তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কৌশল এবং গণ-অভ্যুত্থান চেতনার পরিপন্থি বলে উল্লেখ করেন। এনসিপি নেতাদের অভিযোগ, যেনতেনভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিএনপি। যা জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থি।
উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, বিএনপির মতো বড় দল সবকিছু বাদ দিয়ে শুধু নির্বাচন নিয়ে কথা বললে আমরা আশাহত হই, বাংলাদেশ আশাহত হয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন।
সারজিস আলম লেখেন, বিএনপির সালাহউদ্দিন ভাই বলেছেন-চলমান সংকট সমাধানের একমাত্র পথ নির্বাচনি রোডম্যাপ দেওয়া। এই মুহূর্তে বিএনপি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। সেই হিসাবে তাদের কাছে আমাদের এবং বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। তাদের দায়বদ্ধতাও সবচেয়ে বেশি।
তিনি লেখেন, সমাধানের একমাত্র পথ হিসাবে যখন নির্বাচনি রোডম্যাপের কথা বলা হয়, তখন জুলাই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করা সাধারণ জনগণ আশাহত হয়, শহীদ পরিবারের সদস্যরা আশাহত হয়, আহত যোদ্ধারা আশাহত হয়। কোটি মানুষ যে আকাঙ্ক্ষাকে সামনে রেখে ৫ আগস্টে জীবনের মায়া না করে রাজপথে নেমে এসেছিল তাদের স্বপ্নভঙ্গ হয়।
তিনি আরও লেখেন, সালাহউদ্দিন ভাইসহ বিএনপির কাছে আহ্বান থাকবে, নির্বাচনের রোডম্যাপ চাওয়ার পাশাপাশি গণহত্যার বিচারের রোডম্যাপ চান। দেশের মৌলিক সংস্কারের রোডম্যাপ চান, জুলাই গণহত্যার নির্দেশদাতা খুনি হাসিনার বিচারের রোডম্যাপ চান।
অপরদিকে শুক্রবার এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে সারজিস আলম বলেন, আমরা অবশ্যই এটা মনে করি বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারকে একটা চাপ দেওয়া হচ্ছে, দ্রুত যাতে নির্বাচনটা হয়। এজন্য তারা যমুনার (প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন) সামনে চলে আসবে। অবরুদ্ধ করে রাখবে, এটা একটা ভালো চেষ্টা নয়।
তিনি বলেন, দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এবং মাহফুজ আলমের পদত্যাগ চাওয়াটা অনেকটাই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অন্য কোনো কারণই নেই। যদি আমাদের মধ্যে কোনো মতবিরোধ থাকে, রাজনৈতিক দলের অবস্থানগত বিরোধ থাকে আমরা যেন নিজেদের মধ্যে আলোচনার মধ্য দিয়ে সুন্দর একটা জায়গায় যেতে পারি।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ নেতাদের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ ও আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বোঝাপড়া এবং আমাদের ঐক্যের জায়গাটা আরও বৃদ্ধি করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, যেনতেনভাবে একটা নির্বাচন করে তারা (বিএনপি) ক্ষমতায় যেতে চাচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টাকে ব্যবহার করে বা তার ঘাড়ে চড়ে কেউ এ ধরনের কাজ করবে এটা তিনি মানতে পারছেন না। এ কারণেই তিনি পদত্যাগসংক্রান্ত এমন মন্তব্য করেছেন।
তিনি আরও বলেন, দুই ছাত্র উপদেষ্টা গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসাবে সরকারে আছেন। তাদের পদত্যাগের কোনো বাস্তবতা নেই। তারা যদি চলে যায় তবে বর্তমান সরকার এক-এগারোর সরকার হয়ে যাবে। তাই সবাইকে একটা অভিন্ন জায়গায় আসতে হবে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছেড়ে জাতীয় স্বার্থের ক্ষেত্রে একমত হতে হবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে এনসিপির অন্যতম নেতা এবং দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘জুলাইয়ের ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তির প্রতি আহ্বান, যে বিভাজনটা অপ্রত্যাশিতভাবে আমাদের মধ্যে এসেছিল, সেই বিভাজনকে দেশ ও জাতির স্বার্থে মিটিয়ে ফেলতে হবে। এ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য এবং পতিত ফ্যাসিবাদের নগ্ন দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র থেকে মুক্তির জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, মনে রাখবেন আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতনে দেশে-বিদেশে অনেকে নাখোশ হয়ে আছে। এই নাখোশ বান্দারা আমাদের বিভাজনের সুযোগ নিতে আজকের এই অস্থিতিশীল দিন এনেছে। আমরা সবাই এক হয়েছিলাম বলে দীর্ঘ দেড় যুগের শক্তিশালী ফ্যাসিবাদকে তছনছ করতে পেরেছিলাম। আমরা খণ্ড-বিখণ্ড হলে পতিত ফ্যাসিবাদ ও তার দেশি-বিদেশি দোসররা আমাদের তছনছ করার হীন পাঁয়তারা করবে।
দেশের প্রতি দায়িত্বের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশ ও জাতির প্রতি দায় এবং দরদ আছে বলেই আমরা এক হয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়েছিলাম। দেশ ও জাতির জন্যই এক হয়ে আমাদের স্বদেশকে বিনির্মাণ করতে হবে। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থের জন্য এই ঐক্য নয়, বরং আমাদের দেশের জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই।