
বিশেষ প্রতিনিধি:
দেশের রুগ্ন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চলছে চরম আস্থার সংকট। বাড়ছে হতাশা। সম্প্রতি বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারের কফিন নিয়ে আন্দোলনেও নেমেছেন। এমন নাজুক পরিস্থিতিতে রুগ্ন পুঁজিবাজারে গতি ফেরাতে বড় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এক্ষেত্রে সরকারি মালিকানাধীন লাভজনক ও কৌশলগত কোম্পানির শেয়ার সরাসরি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে বাজারে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এসব কোম্পানির ৫ শতাংশ শেয়ার বাজারে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আর এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ।
গত বৃহস্পতিবার (২২ মে) অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী, এবং এতে আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক ও আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিরঞ্জন চন্দ্র দেবনাথ।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে সরকার শেয়ার বাজারে নতুন করে আস্থা ও উদ্দীপনা সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগের পরিবেশকে আরও শক্তিশালী করবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী।
তালিকাভুক্তির প্রস্তাবে যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলো হচ্ছে- নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, বাখরাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি, জালালাবাদ গ্যাস সিস্টেম, সিলেট গ্যাসফিল্ড, বাংলাদেশ গ্যাসফিল্ড, রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি, লিকুফায়েড পেট্রোলিয়াম গ্যাস, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি (ইঞঈখ), টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড, টেলিফোন শিল্প সংস্থা (ঞঝঝ), বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, সোনারগাঁও হোটেল, ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, কর্ণফুলী পেপার মিলস, চিটাগং ডকইয়ার্ড, বাংলাদেশ ইনস্যুলেটর অ্যান্ড স্যানিটারিওয়্যার ফ্যাক্টরি, প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি, ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ।
এর আগে ১১ মে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস শেয়ারবাজারের পুনর্জাগরণের লক্ষ্যে পাঁচটি মূল নির্দেশনা দেন, যার বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করতেই ২২ মে’র বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
নির্দেশনাগুলো হলো:
১. সরকারি মালিকানাধীন বহুজাতিক কোম্পানিকে বাজারে আনা।
২. তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারে ব্যবধান বাড়ানো (৫% থেকে ১০%)।
৩. বিদেশি বিশেষজ্ঞ এনে শেয়ারবাজার সংস্কারে গতি আনা।
৪. অনিয়মে জড়িত শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা।
৫. দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের উৎস হিসেবে ব্যাংকের পরিবর্তে শেয়ারবাজার ব্যবহার।
এসব নির্দেশনার বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য সর্বোচ্চ ছয় মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
বৈঠকসূত্রে জানা গেছে যে, যেসব বড় ও সম্ভাবনাময় কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না, তাদের উপর জোর না করে বরং প্রণোদনা দিয়ে উৎসাহিত করার কৌশল গ্রহণ করা হবে। এর মাধ্যমে তারা বাজারে আসার জন্য উৎসাহিত হবে, যা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে সহায়ক হবে
বিএসইসি অতিরিক্তভাবে জানিয়েছে যে, আগামী বাজেটে তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করের ব্যবধান ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এই প্রস্তাবটি কার্যকর হলে, বড় কোম্পানিগুলোর বাজারমুখী হওয়ার সম্ভাবনা আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পত্তির লক্ষ্যে তিন ছকে বিভক্ত হচ্ছে এনআইডি সেবা
জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) তথ্য-উপাত্ত সংশোধনের আবেদন দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পত্তির লক্ষ্যে তিনটি ছকে বিভক্ত করা হয়েছে। সাধারণ, প্রবাসী ও চাকুরিজীবী শ্রেণিতে ভাগ করে পৃথক তিনটি তদন্ত প্রতিবেদন ‘ছক’ সচিবালয়ের অনুমোদনক্রমে চূড়ান্ত করা হয়েছে জানা গেছে।
এছাড়া যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া কোনো এনআইডি সংশোধনের আবেদন বাতিল করা যাবে না বলে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সংস্থাটির এনআইডি অনুবিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান নির্দেশনাটি মাঠ কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছেন।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নাগরিক সেবা সহজ ও গতিশীল করার লক্ষ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন আবেদন ‘ক, খ, গ’ ক্যাটাগরিতে বিভাজনের মাধ্যমে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং সিস্টেম (আদর্শ পরিচালন পদ্ধতি) অনুসরণ করে নিষ্পত্তি করার জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ক্ষমতায়ন করা হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা সংক্রান্ত বিভিন্ন সভার সিদ্ধান্ত এবং পরিপত্রে স্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও পাঠ পর্যায়ে ‘ক, খ, গ’ ক্যাটাগরির আবেদনের নিষ্পত্তির হার কাক্সিক্ষত পর্যায়ে না পৌঁছানোয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।
এছাড়া অনেক আবেদন দীর্ঘদিন ধরে অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে। এমনকি আবেদনের শ্রেণি বিভাজন না করেও রেখে দেওয়া হয়েছে। এতে নাগরিক সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। এমতাবস্থায়, নিষ্পত্তিকারী কর্মকর্তাদের ১০টি অঞ্চল থেকে ক্যাটাগরি বিভাজন বা অ্যাসাইন হওয়ার পর নিষ্পত্তিকারী কর্মকর্তাদের শুধু তার আওতাভুক্ত আবেদন নিষ্পত্তি (অনুমোদন/আংশিক অনুমোদন/বাতিল) করতে হবে; দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তার আওতাভুক্ত আবেদন নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অপারগ হলে আবেদন সংশ্লিষ্ট সকল কার্যক্রম (যথাযথ দলিলাদি সংযোজন ও যাচাই এবং তদন্ত/শুনানি গ্রহণ) সম্পন্ন করে পরবর্তী ধাপে পাঠাতে হবে; মাঠ পর্যায়ে তদন্ত না হলে অথবা যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া কোনো আবেদন বাতিল করা যাবে না।
ইসি জানায়, এনআইডি সার্ভারে সাড়ে ১২ কোটির মতো নাগরিকের তথ্য রয়েছে। এদের অনেকেরই এনআইডিতে নানা ভুল থাকায় সংশোধনের আবেদন পড়ছে প্রতিদিন। দ্রুততার সঙ্গে এনআইডি সংশোধন না হওয়ার কারণে অনেকে ভোগান্তিতে পড়ছেন। জনভোগান্তি কমিয়ে এনআইডি সেবা সহজ করার জন্যই এ নির্দেশনা মাঠ প্রশাসনে পাঠিয়েছে ইসি।