
অনলাইন ডেস্কঃ
একের পর এক আন্দোলন। সেনাপ্রধানের বক্তব্য। সেই সাথে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জন। এই গুমোট পরিস্থিতি কাটাতে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৈঠকে বসেন প্রধান উপদেষ্টা। যদিও আধা ঘণ্টার বৈঠকের আগে ও পরে দল এবং সরকারের বক্তব্যে কোনও পার্থক্য দেখা যায়নি।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, আধা ঘণ্টার আলোচনায় রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পর্কোন্নয়নে সরকার সাময়িক স্বস্তি পেলেও দীর্ঘ মেয়াদে কাজে আসবে না। তাদের মতে, উষ্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে নিজেদের ত্রুটিগুলো দূর করতে হবে। জবাবদিহিতা আনতে হবে সরকারের কাজে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা অব্যাহত রাখার পরামর্শ তাদের। পাশাপাশি সংস্কার প্রক্রিয়ায় সরকারকে দলগুলোর সহায়তা করা দরকার বলেও মনে করেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসনিম সিরাজ মাহবুব বলেন, হয়তো কিছুদিন ভালো চলবে। প্রধান উপদেষ্টার তরফ থেকে যে কাজগুলো করতে হবে সেগুলো যদি উনি ঠিকমতো না করেন তাহলে এই পথ তো মসৃণ হবে না। এই অসন্তোষ অনেকাংশে কমানো যায় দুইটি জিনিস করলে। একটা হচ্ছে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দিলে আর একটা হলো নির্বাচনের রোডম্যাপ দিলে।
রাজনীতি বিশ্লেষক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, হয়তো বেশ কয়েকদিন অপেক্ষা করবে। কিন্তু সরকার যদি এই পরিস্থিতির পরিবর্তন চায়, তাহলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে হবে। না হলে তাদের মধ্যে এই যে সন্দেহ অথবা একে অপরের সাথে অসহযোগিতা এটা কমবে না।
বিশ্লেষকদের মত, ৫ আগস্টের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনও সন্তোষজনক নয়। তার ওপর সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টাও রাজনৈতিক দলের কাছে আস্থা হারিয়েছেন। কারও কারও মন্ত্রণালয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতিও নেই। পরিস্থিতির উন্নয়নে এসব বিষয়ে সরকারের ভূমিকা রাখা দরকার।
কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বললেন, সরকার জনগণের সহযোগিতা তখনই পাবে যখন তার জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে, তা সরকারের ভাবা উচিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এস এম আলী রেজা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর কিছু দাবি থাকে রেটোরিক। কৌশলগত কারণে তাদের অনেকগুলো দাবি করতে হয়। সরকারের দরকার এগুলোকে একটু কম গুরুত্ব দিয়ে বিশ্লেষণ, ব্যাখ্যা করা এবং কিছু দাবিতে সাড়া প্রদান করা।
নির্বাচনের পাশাপাশি সংস্কারের কথাও বারবার বলে আসছে সরকার। তবে তার সবটাতে ঐকমত্য নেই রাজনৈতিক দলগুলোর। বিশ্লেষকরা বলছেন, এক্ষেত্রে ছাড় দিতে হবে দুই পক্ষকেই। দেশের স্বার্থে ভবিষ্যতে স্বৈরশাসক হয়ে ওঠা ঠৈকাতে সহায়তা করা উচিত দলগুলোর।
তাসনিম সিরাজ মাহবুব বলেন, দলের স্বার্থে আঘাত পড়লে প্রতিপক্ষ তো হবেই। যেমন, পরপর দুইবার প্রধানমন্ত্রী হলে পরে আর হতে পারবেন না। আমার কাছে মনে হয় যে স্বার্থের আঘাত পড়লেই এটা হচ্ছে। আর যেটা পছন্দ হচ্ছে সেটা নিয়ে তো উনারা চেঁচামেচি করছেন না।
অধ্যাপক এস এম আলী রেজা বলেছেন, কিছু কাজ রাজনৈতিক দলের। আবার রাজনৈতিক দলেরও কিছু কাজ এই সরকারকে দিয়ে করিয়ে নেয়া উচিত। কিন্তু আমি কতগুলো অ্যাভিনিউ রাখবো, কারণ আপনি অনেকগুলো অ্যাভিনিউ খোলা রাখলে সবটাই কনসেন্ট্রেট করতে পারবেন না।
এদিকে, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বর্তমান সরকার ব্যার্থ হলে সে দায় সবার। তাই ঐক্যবদ্ধভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলার পরামর্শ বিশ্লেষকদের।