
অনলাইন ডেস্কঃ
নানান ইস্যুতে সরকারের ভেতরে-বাইরে অস্থিরতা। নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নিলে অস্থিরতা দূর হবে-সবাই এমনটি ভাবছে। কিন্তু কাংখিত সংস্কার না হলে, রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন না আনলে সবকিছুই কিন্তু আগের মতো হয়ে যাবে। জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, রাজনৈতিক কর্মীরাও বাদ যাবে না।
আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছর খুলনার রাজপথে বিএনপি সক্রিয় ছিল। দলের নেতৃত্ব পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু কর্মীরা রাজপথ ছাড়েনি। অনেকেই মনে করেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে দলটির ক্ষমতায় যাওয়া শুধু নির্বাচনের অপেক্ষা মাত্র।
বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ায় খুলনার নির্বাচনী আসনগুলোতে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের আনাগোনা বেড়েছে। বিত্তশালী, ব্যবসায়ী ও মৌসুমী নেতারা এলাকায় আসছে। খুলনা-১, খুলনা-৪, খুলনা-৬ আসনে বেশ কয়েকমাস ধরেই নয়া প্রার্থীদের তৎপরতা দৃশ্যমান হচ্ছে। সাড়ে ১৫ বছর হাজারো মামলা, জেল-জুলুমের সময় কর্মীদের পাশে তাদের কাউকেই দেখা যায়নি।
গত ২৯ মে প্রায় ১৮ বছর পর খুলনা মহানগর বিএনপির কর্মসূচিতে দেখা গেল মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আলী আজগর লবীকে। আজ খুলনা-৫ আসনে একটি কর্মসূচিতে অংশ নিলেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেছে, হাইকমান্ডের সিগন্যাল পেয়েই তিনি কাজ শুরু করেছেন।
কর্মীদের কি এখন প্রশ্ন করার সুযোগ আছে-বিএনপির মতো বড় একটি দলের মহানগর আহ্বায়ক হিসেবে ১৮ বছরের দুঃসময়ের দিনগুলোতে তার ভূমিকা কি ছিল ?
পুরানো ধারার রাজনীতিতে কর্মীদের ঘাম-রক্তের চাইতে নেতাদের কাছে টাকার মূল্যায়ন ছিল বেশি। অবশ্য ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে আসলে একশ্রেণীর নেতাদের পকেট ভারি হয়। সুযোগ সন্ধানীদেরও ভাগ্য খোলে।
অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমরা চাই, এই ধারার অবসান ঘটুক। রাজনৈতিক দল, সরকার কাঠামো এবং রাজনীতির প্রচলিত চিন্তা ধারায় সংস্কার আসুক। এটা আসতেই হবে, কাংখিত সংস্কার না হলে আবারও সব দুর্বৃত্তদের দখলে যেতে বাধ্য।
একটি ঘটনা বলে শেষ করি।
১৫ বছরের আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ব্যস্ত সময় পার করা নেতারা হয়তো দিনটির কথা ভুলে গেছেন।
বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় হয় ২০১৮ সালে ৮ ফেব্রুয়ারি এবং ওই দিনই তাকে জেলে যেতে হয়েছিল।
দলের চেয়ারপারসনকে জেলে নেওয়ার বিষয়ে বিএনপি কঠোর, পুলিশও ছিল মারমুখী। উত্তেজনা থেকে খুলনাও বাদ যায়নি।
৮ ফেব্রুয়ারি সকালে কেডি ঘোষ রোডে বিএনপি অফিসের সামনে গিয়ে দেখি কাটাতার দিয়ে প্রায় শতাধিক পুলিশ সদস্য, সাজোয়া যান, জলকামান দিয়ে পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে। ব্যাপক তর্জন-গর্জনের পরও উপস্থিত মাত্র মঞ্জু ভাই, মরহুম দুলু ভাইসহ ১০/১৫ জন নেতাকর্মী। নগন্য উপস্থিতি দেখে পুলিশ তেমন অ্যাকশানে যায়নি। গল্প আর আড্ডায় সময় যাচ্ছে।
হঠাৎ সিটি করপোরেশনের দিক থেকে একটি মিছিল স্লোগান দিতে দিতে দলীয় কার্যালয়ের দিকে এগিয়ে আসছে। আচমকা ঘটনা দেখে পুলিশ-সাংবাদিক সবাই তাজ্জব। ওই সময় আন্দোলন দমনে পুলিশ লাঠিপেটার সঙ্গে সরাসরিগুলি করতো।
‘আমার নেত্রী আমার মা, জেলে যেতে দেব না’ তীব্র এই স্লোগানের শব্দে চারদিকে কাপছে, পুলিশ অস্ত্র নিয়ে তৈরি হচ্ছে। আমরা নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছুটছি। ততক্ষণে মিছিল থানার মোড়ে কাটাতারের বেড়ার কাছে চলে এসেছে।
ওরা পুলিশের সামনে এসেই বসে পড়লো এবং জেলা যুবদলের সভাপতি রুবায়েত পুলিশের সামনে বুকে পেতে দিয়ে চিৎকার করতে থাকলো গুলি করেন, গুলি করেন বলে। জেলা ছাত্রদলের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক তুহিন, জাবিরসহ কয়েকজন অফিসারদের সামনে হাত তুলে কাদছে আর বলছে আমাদের গ্রেপ্তার করুন। মৃদু ধস্তাধস্তির পর পুলিশ লাঠিচার্জ ও গুলি ছুড়ে করে ওদের তাড়িয়ে দেয়।
আজ মোড়ে মোড়ে মাইক বাজিয়ে ড্যাগ চড়িয়ে যারা জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎবার্ষিকী যারা পালন করছে, এরা কেউই সেদিন পার্টি অফিসের ধারে কাছে ছিল না। ১৫ বছর হরতাল, অবরোধ বিক্ষোভে ওই পয়েন্টগুলোতে কাউকে কি দেখা গেছে ?
একবছর আগে এই মোড়েই আওয়ামী লীগের মাইক বাজতো, ড্যাগ চড়তো। অর্থের উৎস হয়তো একই।
রাজনীতিতে সংস্কার আনতে হবে। না হলে বন্দুকের সামনে চিতিয়ে দেওয়া বুক এবং টাকার মধ্যে ওজন হলে- রুবায়েতরা হেরে যাবে। রাজনীতিও হেরে যাবে।
লেখক: হাসান হিমালয়, দৈনিক সমকালের খুলনা ব্যুরো চীফের ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই লেখা লেখকের একান্তই নিজস্ব, লেখকের লেখার সাথে প্রথম সময় নিউজ ডটকমের পলিসিগত কোন সম্পর্ক নেই।