
অনলাইন ডেস্কঃ
ঈদুল আজহার আগে রাজধানী থেকে প্রিয়জনদের কাছে ফিরতে গিয়ে ঘরমুখো মানুষকে নানা দুর্ভোগের মুখে পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে গাজীপুর, টঙ্গী ও মহাখালী এলাকায় যানজটের কারণে যাত্রীরা দীর্ঘ সময় ধরে আটকে থাকছেন। অনেক যাত্রীকে বাস থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যের দিকে এগোতে দেখা গেছে। যানজটের পাশাপাশি অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগও পাওয়া গেছে। যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে, যা তাদের জন্য আর্থিক চাপ সৃষ্টি করছে।
অন্যদিকে, যমুনা সেতু পশ্চিম মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ। তবে এখন পর্যন্ত মহাসড়কের কোথাও যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশ ও সেনাবাহিনী যৌথভাবে কাজ করছে।
জানা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে ২৫ কিলোমিটার এলাকায় বৃহস্পতিবার ভোর থেকে থেমে থেমে সৃষ্টি হওয়া যানজট রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্তও স্বাভাবিক হয়নি।
একদিকে যানজট অপরদিকে বৃষ্টি থাকায় চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন ঈদে ঘরমুখো সাধারণ মানুষ। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন খোলা ট্রাক, পিকআপের যাত্রীরা। মহাসড়কটিতে বাস, ট্রাক, পিকআপের পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে স্বাভাবিকের চাইতে কয়েকগুণ বেশি।
ট্রাকের যাত্রী গার্মেন্টস কর্মী বগুড়ার সালাউদ্দিন মিয়া জানান, সকাল সাড়ে ৭টায় তিনি বাস না পেয়ে ৫০০ টাকা ভাড়ায় ট্রাকে উঠেছেন। এখন বিকাল ৩টায় এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এসে পৌঁছেছেন।
ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা আজমেরী গৌরী পরিবহণের যাত্রী মল্লিকা খাতুন জানান, সকাল ৮টার দিকে বাসে উঠেছেন সিরাজগঞ্জ যাওয়ার জন্য। এখন আড়াইটা বাজে। যানজটের কারণে এলেঙ্গার পৌলী পর্যন্ত এসেছেন।
যমুনা সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত যমুনা সেতু দিয়ে ৩৮ হাজার ৫৫৫টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে দুই কোটি ৫৯ লাখ চার হাজার ২৭০ টাকা।
যমুনা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির পাভেল জানান, অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ থাকায় সেতুর উপর যান চলাচল বিঘ্ন ঘটে। এ কারণে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত চারবার টোল আদায় বন্ধ রাখা হয়। বর্তমানে সেতু দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও যানবাহনের প্রচুর চাপ রয়েছে।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান জানান, মহাসড়কে ডাকাতি রোধে এবং যানজট নিরসনে ৬ শতাধিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। পাশাপাশি সেনাবাহিনী, র্যাব সদস্যরাও কাজ করছেন।
এছাড়া ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে পরিবহন সংকট ও বাড়তি ভাড়ার কারণে যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। অনেকেই ট্রাক ও বাসের ছাদে চড়েও বাড়ি ফিরছেন। যানজট নিরসনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাবাহিনী যৌথভাবে কাজ করছে। তবে যানবাহনের চাপ ও অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়ছেন।
যাত্রীদের অনেকে জানান, ঈদের আনন্দের চেয়ে বাড়ি পৌঁছানোর চিন্তাই তাদের বেশি কষ্ট দিচ্ছে। তারা আশা করছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে এই দুর্ভোগ লাঘব করবেন।
এদিকে নাড়ীর টানে ঘরে ফেরা মানুষের ঢল নেমেছে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার খ্যাত গাজীপুরের চন্দ্রায়। তবে সড়কে পর্যাপ্ত গাড়ি নেই। রাতভর যানজটে আটকে থাকায় নির্দিষ্ট সময়ে ঢাকায় ফিরতে না পারায় পরিবহন সংকটের কথা জানিয়েছেন যাত্রীরা।
খোরশেদ আলম নামে এক যাত্রী বলেন, দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও বাস পাইনি। গতরাতে অনেক গাড়ি আটকে ছিল জ্যামে। সেই বাসগুলো এখনো ফিরে আসতে পারেনি। এ কারণেই পরিবহন সংকট দেখা দিয়েছে।
বাসের জন্য অপেক্ষমান কায়কোবাদ আলম বলেন, আজ কারখানায় গিয়ে শুধু হাজিরা দিয়েই সবার সাথে অগ্রিম ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করে বের হয়েছি। বের হয়েই বৃষ্টিতে আটকা পড়েছিলাম। কোনো মতে চন্দ্রায় এসেছি। এসে দেখি উত্তরবঙ্গের অনেক গাড়ি ফেরত আসেনি। যাও আসে সেগুলোর বেশির ভাগই বুকিং করা। অনেকটা অনিশ্চয়তায় এখনো বাসের অপেক্ষায় আছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ সদস্য জানান, রাতে চন্দ্রা ও টাঙ্গাইলে প্রচুর যানজট ছিল। যানজটের কারণে গাড়িগুলো নির্দিষ্ট গন্তব্যে সঠিক সময় পৌঁছাতে পারেনি। যাত্রী নামিয়ে আবার যে সময়ে গাড়িগুলো ঢাকায় প্রবেশের কথা ছিল যানজটের কারণে সঠিক সময়ে সেই গাড়িগুলোও আসতে পারেনি। এ কারণে কিছুটা পরিবহন সংকট রয়েছে।
নাওজোড় হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকাতুল আলম বলেন, ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে হাইওয়ে পুলিশসহ র্যাব ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। পুলিশের পক্ষ থেকে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও যাত্রীদের নিরাপত্তায় ছিনতাই রোধে পুলিশের আলাদা টিম কাজ করছে।