
অনলাইন ডেস্কঃ
৫ আগস্ট ছাত্রজনতার আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হলে ড. মুহাম্মাদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। প্রথম দিকে মানুষ ভেবেছিলো ইউনূস সাহেব নিজের ইমেজকে কাজে লাগিয়ে দেশের অভূতপূর্ব পরিবর্তন সাধন করবেন। দেশের অর্থনীতির চাকা দ্রুত গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে তার বিপরীত। দিন দিন দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। হাজার হাজার শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিলিয়ন বিলিয়ন বিদেশি বিনিয়োগের কথা বললেও বাস্তবে কিছুই হয়নি।
দেশে এক বছরের ব্যবধানে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার। একই সঙ্গে কমেছে কর্মক্ষম ও কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠী। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৪-এ উঠে এসেছে এ চিত্র।
সম্প্রতি প্রকাশিত জরিপ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে বেকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ২০ হাজার, যা ২০২৩ সালে ছিল ২৪ লাখ ৬০ হাজার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বেকার বেড়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার। শুধু শেষ তিন মাসেই (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর) নতুন করে বেকার হয়েছে ৬০ হাজার মানুষ।
প্রকাশিত জরিপ অনুযায়ী, ২৬ লাখের মধ্যে দেশে পুরুষ বেকারের সংখ্যা ১৮ লাখ, আর নারী বেকার ৮ লাখ ২০ হাজার জন। বর্তমানে দেশে বেকারত্বের হার ৩.৬৫ শতাংশ। পুরুষ বেকারের হার দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং নারী বেকারের হার ৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
কৃষি, সেবা ও শিল্প—সব খাতেই কমেছে কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠী। নারীর চেয়ে উল্লেখযোগ্য হারে পুরুষ বেকারের সংখ্যা বেড়েছে বেশি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম দিকে ৩৫ লক্ষ লোকের নতুন কর্মসংস্থান তৈরির কথা বললেও উপরন্তু দিন দিন বেকার সমস্যা প্রকট হচ্ছে। যা দেশের জন্য একটা অশনিসংকেত।
বিগত ১০ মাসে ১১ বার বিদেশ সফরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা খরচ হলেও চোখে পড়ার মতো কোন অর্জন নেই। ১০ মাসে কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার অধিবেশনে অংশগ্রহণ ছাড়া তেমন কোন রাষ্ট্রীয়ভাবে দ্বিপক্ষীয় বিদেশ সফর ছিলো না। বিদেশে গিয়ে সেলফ মার্কেটিং ও সেমিনারে বক্তব্য দেয়া ছাড়া বাংলাদেশ কিছুই অর্জন করতে পারেনি। সরকারের প্রথম দিকে বিদেশি বিনিয়োগের ব্যাপারে আস্ফালন করলেও দিন দিন বিদেশি বিনিয়োগ নিম্নমুখী হচ্ছে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত দশ মাসে ১১টি দেশ সফর করেছেন। সম্প্রতি তিনি যুক্তরাজ্যে ১১তম সফর শেষে দেশে ফিরেছেন। আমেরিকা, আজারবাইজান, মিশর, সুইজারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন, থাইল্যান্ড, কাতার, ভ্যাটিকান সিটি, জাপান এবং সম্প্রতি যুক্তরাজ্য। প্রধান উপদেষ্টার এই সফরের তালিকা বেশ দীর্ঘ। যুক্তরাজ্য বাদে বাকী দশটি সফরে প্রায় ২৬০ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে এবং ৭০ দিন সময় অতিবাহিত করেছেন। যুক্তরাজ্য সফরে তার সফর সঙ্গী ৩৭ জন।
প্রধান উপদেষ্টার জন্য ভিআইপি রুমের ৪ দিনের হোটেল ভাড়া ৩ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। কিন্তু প্রশ্ন হলো- এইসব সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ কী অর্জন করেছে? যুক্তরাজ্য সফর থেকে তিনি বিশ্বব্যাপী শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং পরিবেশ-প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আজীবন অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের দেয়া হারমনি পদক লাভ করেন।
মূলত: ১১টি সফরের একটিও কোন দেশের আমন্ত্রণে সফর করেননি ইউনূস। এরপরেও এইসব সফরকে দেশের অনেক মিডিয়া ও সরকারের তল্পিবাহকেরা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচার করেছে যে, বিরাট অর্জন করে ঘরে ফিরেছে ইউনূস। বাস্তবে যা থ্রি জিরো কিংবা শতাধিক জিরোর সমষ্টি বৈ কিছু নয়।
প্রকৃতপক্ষে এইসব সফরে স্বল্পমেয়াদি প্রচারণা ও ব্যক্তিগত ইমেজ নির্মাণ ছাড়া দেশের জন্য বাস্তবিক অর্জন প্রায় শূন্য। বরং ইউনূসের এইসব সফর অধিকাংশ ক্ষেত্রে পশ্চিমা বিশ্বকে খুশি করা, তাদের স্বার্থ রক্ষা করা, এবং নিজের ব্যক্তিগত প্রচারণা ও ব্র্যান্ডকে বৈশ্বিকভাবে আরও শক্তিশালী করার জন্য হয়েছে বলেই দৃশ্যমান হয়।
আমরা যদি অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখি, তাহলে বড় অর্জনের কথা বলতে গেলে হয়তো জাপানের ১.০৬ বিলিয়ন ডলারের অর্থায়নের কথা আসবে। তবে এটিও সাবেক সরকারের আমলে গৃহীত বাংলাদেশের রেল প্রকল্প ও বাজেট সহায়তার ধারাবাহিকতা মাত্র। নতুন কোনো বড় বিনিয়োগ চুক্তি হয়নি। জাপানের এই অর্থায়নও মূলত পূর্ব পরিকল্পিত এবং আওয়ামীলীগ সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্তের প্রতিফলন মাত্র।
জাপানের আগে চীনের সঙ্গে ৯টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এরমধ্যে অধিকাংশই সাহিত্য, সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও সাংবাদিকতা সংশ্লিষ্ট। বড় কোনো শিল্প প্রকল্প বা বাজার সম্প্রসারণের বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। চীন সফরে এসব সমঝোতা স্মারক সই নিয়ে খোদ অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) বলেছিল, ‘প্রধান উপদেষ্টার মতো হাই-লেভেল ভিজিটে এসব ছোটখাট চুক্তি সমীচীন নয়’। চীন সফর ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের মাধ্যমে বরং চীনের স্ট্র্যাটেজিক আগ্রহের দিকেই বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নেওয়ার বার্তা দিয়েছে মুহাম্মদ ইউনূস।
অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্য সফরগুলোতেও (কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত) বড় বিনিয়োগ আসার আশ্বাস ছাড়া দৃশ্যমান কিছু আসেনি। সংযুক্ত আরব আমিরাতে শুধু একটি সম্ভাব্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। বাস্তবায়ন অনেক দূরের বিষয়। কূটনৈতিকভাবে ইউনূসের সফরগুলো রাষ্ট্রের পয়সা খরচ করে তাঁর ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর প্রচেষ্টা ছাড়া ভিন্ন কিছু নয়।
যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে দেখা করলেন, ছবি তুললেন। কিন্তু বাংলাদেশ কোনো বিনিয়োগ পেয়েছে, বা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী হয়েছে তেমনটা প্রমাণ পাওয়া যায় না। বরং একে একে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের নাগরিকদের যাতায়াত-ভ্রমণ ও অবস্থান আরও কঠিন হবার খবরই পাওয়া যাচ্ছে।
ভ্যাটিকানের সফরে ইউনুস তার “থ্রি জিরো” দর্শন তুলে ধরলেন। সেখানে তার ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ড প্রচার পেলেও বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কোনো লাভ হয়নি। অথচ সেখানে গিয়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে। ব্যক্তিগত প্রচার চালানোর ছাড়া কিছুই নয়।
সর্বশেষ যুক্তরাজ্য সফরে গিয়ে ‘কিংস চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ করার কথা দেশীয় মিডিয়ার মাধ্যমে দেশবাসীকে জানানো হয়েছে। ২০২৪ সালে চালু হওয়া কিংস চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ডস মূলত বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিদের বিশেষ সম্মাননা স্বরূপ সম্মানিত করা হয়। ড. ইউনূস এই সম্মাননা পেতেই পারেন। এটা রাষ্ট্রের তেমন কোন কল্যাণ বয়ে আনবে না। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার-এর সাথে সাক্ষাতের কথাও জানানো হলেও বহু চেষ্টায়ও শেষমেশ সাক্ষাৎ তিনি পাননি। সফরকালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের কোনো বৈঠক হয়নি, যা ঘিরে কিছুটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
মঙ্গলবার (১০ জুন) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক ব্রিটিশ এমপির বরাতে জানান, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী তখন কানাডা সফরে ছিলেন এবং এ কারণে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তার সাক্ষাতের কোনও সময় নির্ধারিত হয়নি। কিন্তু বাস্তবে ওই সময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লন্ডনেই অবস্থান করছিলেন। যদি বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে যদি নাই পারেন তাহলে কেন যুক্তরাজ্য সফরে গিয়েছিলেন?
অনেকে ধারণা করছেন , হয়তো বিএনপি নেতা তারেক রহমানের সাথে বৈঠক করতেই এই সফর করছেন। আইনের দৃষ্টিতে যদি ব্যাখ্যা করা হয় তাহলে তারেক রহমান একজন দণ্ডিত ও পলাতক ব্যক্তির সাথে সাক্ষাতে ইউনূসের দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ব্যক্তিগত লাভ থাকলেও দেশের কোন লাভ নেই। তাছাড়া তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে ঢাকায় বসেই এই সাক্ষাৎ হতে পারতো। ইউনূস একদিকে তারেক রহমানকে দেশে ফিরতে দিচ্ছেন না, অপরদিকে ক্ষমতায় থাকার জন্য তারেক রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করতে লন্ডন সফরে চলে গেলেন রাষ্ট্রের অর্থ অপচয় করে। এবারের লন্ডন সফর যেনো ” রথও দেখা হলো কলাও বেঁচা হলো”।
এখন মূল প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের এই কঠিন সময়ে এই বিদেশ সফরগুলো আদৌ দেশের স্বার্থে হয়েছে কি না? যখন রেমিট্যান্সে ধীরগতি, বৈদেশিক ঋণ শোধের চাপ বাড়ছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটে রয়েছে- তখন প্রধান উপদেষ্টার এই সফরগুলো দেশের অর্থনীতিতে কোনো তাৎপর্যপূর্ণ স্বস্তি আনতে পারেনি।
বরং সফরগুলো ব্যক্তিগত পুরস্কার গ্রহণ, পশ্চিমাদের প্রশংসা কুড়ানো এবং বাংলাদেশকে এক ধরনের ‘ওয়েস্টার্ন প্রক্সি স্টেট’-এ পরিণত করার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ড. ইউনূস যেভাবে পশ্চিমাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য নিজেকে ব্যবহার করছেন- তা বাংলাদেশকে আরও পরনির্ভরশীল করে তুলছে।
বিশ্বব্যাপী ওয়াশিংটন-লন্ডন-ব্রাসেলস জোটের স্বার্থের সঙ্গে বাংলাদেশকে মিলিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়ায় ড. ইউনূস এখন নিঃসন্দেহে একজন অন্যতম মুখ্য মাধ্যম। এই প্রক্রিয়ায় দেশের সার্বভৌম সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষমতা খর্ব হচ্ছে। তার সফরে কোথাও ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা, রোহিঙ্গা সংকট বা গঙ্গা-তিস্তা জলবণ্টন চুক্তির মতো জ্বলন্ত ইস্যুগুলো গুরুত্ব পায়নি এবং এসব সমস্যার কোনো অগ্রগতিও হয়নি।
অনেকেই বলে থাকেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস বর্তমানে পশ্চিমা লবির একজন ‘সেল-আউট’। তার বিদেশ সফরের ফ্ল্যাশি ছবি দেখে বাংলাদেশের উগ্র ধর্মাশ্রয়ী রাজনৈতিক শিবিরের লোকেরা খুব আনন্দ পেতে পারেন; কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এগুলো বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় স্বার্থের পরিপন্থী। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্ন সভায় মন্তব্য করেছেন, বর্তমান দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের চেয়েও খারাপ ; যদি তা-ই হয় তাহলে কিভাবে তিনি শত শত কোটি টাকা খরচ করে বিদেশ সফর করছেন। এটা কি দেশের জন্য ক্ষতিকর নয় কি?
বাংলাদেশের নীতি-নির্ধারণ এখন যেন ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক এনজিও প্রজেক্টে রূপ নিচ্ছে বলে অনেকেই মন্তব্য করেন। আর এ ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টাকেই দায়ী করছেন অনেকে। দেশীয় গণমাধ্যমে তিনি যেন এক বিশ্বনাগরিক, যার এক পায়ে হোয়াইট হাউজ, আর অন্য পায়ে ডাউনিং স্ট্রিট, কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশের মাটিতে তার শিকড় ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং ক্রমাগত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছেন আন্তর্জাতিক পরিসরেও।
এসব কি তিনি টের পাচ্ছেন নাকি তাঁর আমাত্যবর্গ অবহিত করছেন? সম্ভবত কোনোটাই হচ্ছে না।
লেখক: মো. জাহিদুর রহমান
সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট
বিশেষ দ্রষ্টব্য: লেখকের এই লেখা তার একান্তই নিজস্ব, এই লেখার সাথে প্রথম সময়ের পলিসির কোন সম্পর্ক নেই, প্রথম সময়ের এজন্য কোন দায় দায়িত্ব নেই।