
অনলাইন ডেস্কঃ
টানা চার মাস বন্ধ খুলনা প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালযয়ের (কুয়েট) একাডেমিক কার্যক্রম। কবে নাগাদ শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে সেটাও অনিশ্চিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ সহস্রাধিক শিক্ষার্থী হতাশ, উদ্বিগ্ন এবং উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। ক্লাসে ফিরতে তারা অস্থির। স্টুডেন্টদের ক্যারিয়ার লাইফের কথা চিন্তা করে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করার ফরিয়াদ জানিয়ে কুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং(ইইই) বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ ওবায়দুল্লাহ।
তার নিজের ফেসবুক আইডিতে কুয়েটে ঘটে যাওয়া ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ঘটনার বর্ণনা দিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন। পাঠকদের জন্য হুবহু সেটা তুলে ধরা হলো। পোস্টে ওবায়দুল্লাহ লিখেছেনঃ
‘আপনাদের সত্যিই কোনো হুশজ্ঞান নেই। দু:খিত।
দুইমাস তদন্ত করে একটা রিপোর্ট দিলেন যেখানে যারা হামলা করেছে তাদের ব্যাপারে কোনো কথা নেই। তারা বহিরাগত তাই তাদের ব্যাপারে আপনারা কিছু করতে পারবেন না। ভালো কথা।
তারপর বহিস্কার করলেন স্টুডেন্টদের, যেখানে ছাত্রদলের সমর্থিতদের (যারা লোকাল বিএনপিকে ডেকে এনে ছাত্রদের মারলো) সাথে একই পাল্লায় মাপলেন আন্দোলনকারীদেরকেও ৷ আন্দোলনকারীদের মাঝে যারা শিক্ষক লাঞ্চনা করলো তাদের সাথে জুড়ে দিলেন আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদেরকেও নেতৃত্ব দেয়ার অপরাধে। আপনাদের সত্যিই হুশজ্ঞান নাই। দু:খিত।
এরপর শিক্ষা উপদেষ্টার কথায় সেই বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করলেন সিন্ডিকেট মিটিং এর মাধ্যমে। তারপর নতুন ভিসি আসলো, তখন আবার সেই প্রত্যাহারকৃত বহিস্কারাদেশ নতুন নামে ওপেন করলেন, আগেও একই জিনিস ছিলো। আত্মপক্ষ সমর্থন করা, পরে দিলেন শোকজ। দুইটা প্রায় একই। আপনারা তো চাইলেই ছাত্রদলের যারা বহিরাগতদের বা দলীয় নেতা-কর্মীদের ডেকে এনে এমন হামলা করিয়েছে তাদের বিচার আলাদা, শিক্ষক লাঞ্চনার বিচার আলাদা আর হামলাকারীদের বিচার আলাদাভাবে করতে পারতেন। তা করলেন না। উলটো একটা দমন-পীড়নের শাসন শুরু করলেন। আপনাদের আসলেই হুশজ্ঞান নাই। দু:খিত।
এরপর নতুন ভিসিও পদত্যাগ করলো কোনো সুরাহা না পেয়ে। আমরা শোকজ লেটারও জমা দিলাম শুধু একটা রিকুয়েষ্ট করেছিলাম যেনো কারো উপর নতুন করে আর জুলুম করা না হয়। অনেকের ধারণা শোকজ লেটার জমা দিলেই তো হয়, স্যাররা কাউকে অন্যায়ভাবে শাস্তি দিবেন না। হ্যা, এটা আমরাও বুঝি বাট মানতে কষ্ট হয় যখন দেখি মামলা করার জন্য ইনফরমেশন গুলোও আমাদের ভার্সিটি থেকে প্রোভাইড করা হয়। তদন্ত রিপোর্ট ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে চলে যায়, সিসিটিভি ফুটেজ ছাত্রদলের পেইজে আপলোড হয়,আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অপরাধে বহিস্কার করা হয়, রেজাল্ট নেয়ার হুমকি দেয়া হয়, তখন আর বিশ্বাস হতে চায়না যে আবার জুলুম করবে না।
আমরা কি শিক্ষক লাঞ্চনার বিচার চাইনি? যেদিন নতুন ভিসি এসেছে সেদিন থেকেই বারবার ক্ষমা চাওয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে কেউ যদি প্রকৃতপক্ষে শিক্ষক লাঞ্চনা করে থাকে তাহলে তার বিচার করুন। সাথে ১৮ ফেব্রুয়ারীর হামলাকারীদেরও বিচার করুন। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় এই বিচার করতে পারবে না তাহলে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে হলেও সেটার বিচার করুন। আপনারা এটাকে ভুলভাবে নিয়েছেন এবং কিছু শিক্ষার্থীদেরকে এটার বিপরীতে দাড় করালেন। এতে ক্ষতি কাদের হলো। আমাদেরই তো ক্ষতি হলো, নিজেদের মাঝে রেষারেষি বাড়লো আর ফাঁকে দিয়ে বেচে গেলো হামলাকারীরা। এটায় হয়তো আপনাদের চাওয়া ছিলো।
আপনারা কি কখনো বলেছেন আমাদের ক্যাম্পাসের ভিতর ঢুকে রামদা দিয়ে,পিস্তল দিয়ে যারা হামলা চালালো তাদের বিচার আমরা না পারলে যারা পারে তাদের দিয়েই করানো হোক। কখনো বলেন নি। সেই হামলার বিচার চাইতে কোনোদিন সংবাদ সম্মেলন করেননি, কোনো মানববন্ধন করেননি। কিছুই না৷ ইভেন অনেকের কথা এমনও ছিলো যে মাইর তো দিবেই, বাহিরে চলে গেছে মারামারি করতে। অনেকেই আবার শিবিরের উপর দায় দিয়ে দাও টাইপ কথাবার্তা বলেছেন।
একটা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছ এমন আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়।
এইযে ৪ মাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো একাডেমিক কার্যক্রম চলছে না এর কৈফিয়ত কে দিবে? ১৮ ফেব্রুয়ারীর পরও আমরা ক্লাস অফ চাইনি। আপনারা অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস অফ করে দিলেন। হল ভ্যাকেন্ট করে দিলেন। এরপর ৪ মে থেকে ক্লাস শুরুর নোটিশ দিলেন বাট ক্লাসে গেলেন না বিচারের দাবিতে। বিচার করুন, অপরাধীদের বিচার করুন, তাই বলে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য বিচার? অল্প কিছু স্টুডেন্ট এর জন্য পুরো ৫০০০ স্টুডেন্ট এর ক্যারিয়ার, লাইফ এভাবে আটকে থাকবে? আপনারা তো আলোচনার মাধ্যমে বা যেকোনো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করতে পারেন। কয়টা ছেলেকে শাস্তি দিলেই ক্লাসে যেতে বাধা নাই এমনভাবে কেনো আটকে আছে? এমনও তো হতে পারে আপনাদের দেয়া শাস্তি হাইকোর্টে টিকলো না। তাহলে কেনো এভাবে সবাইকে আটকে রাখা? সত্যিই হুশজ্ঞান নেই।
প্লিজ এবার ক্লাস শুরু করুন। যারা প্রকৃতপক্ষে অপরাধী তাদের বিচার করবেন অবশ্যই। তাই বলে এভাবে ক্লাস পরীক্ষা সব বন্ধ করে না।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তো কোনোকিছুই সামাল দিতে পারছে না। তাই তাদের কাছে আর কি কৈফিয়ত চাইবো। আপনারাই অন্তত স্টুডেন্টদের ক্যারিয়ার, লাইফের কথা চিন্তা করে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করুন প্লিজ।
আল্লাহ সহায় হোক’।