
অনলাইন ডেস্কঃ
ইসরাইলি বাহিনীর অব্যাহত আক্রমণে শুক্রবার গাজা উপত্যকায় কমপক্ষে ৮২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে ৩৪ জন মানবিক সহায়তার অপেক্ষায় থাকা সাধারণ মানুষ। কেন্দ্রীয় ও দক্ষিণ গাজার বিভিন্ন সহায়তা কেন্দ্রের আশেপাশে এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।
সর্বশেষ হামলায় দেইর আল-বালাহ শহরের পশ্চিমাঞ্চলে একটি বাড়িতে ইসরাইলি বিমান হামলায় বহু মানুষ হতাহত হন। এর মধ্যে শুধু মধ্য গাজাতেই নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩৭ জন। তাদের ২৩ জন ছিলেন খাদ্য সহায়তার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা দরিদ্র ফিলিস্তিনি। গাজা সিটিতে নিহত হয়েছেন আরও ২৩ জন এবং দক্ষিণ গাজায় নিহত হয়েছেন ২২ জন। দক্ষিণাঞ্চলের নিহতদের মধ্যে ১১ জন সহায়তা প্রত্যাশী বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ইসরাইলের এসব হামলার শিকারদের অধিকাংশই ছিল দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হওয়া সাধারণ মানুষ। তারা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন পরিচালিত খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের সামনে অপেক্ষা করছিলেন। গত ২৭ মে থেকে বিতরণ কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে এসব সহায়তা কেন্দ্রের আশেপাশে ইসরাইলি আক্রমণে বহু মানুষ নিহত হয়েছেন।
গাজা সরকারের মিডিয়া অফিসের মহাপরিচালক ইসমাইল আল-থাওয়াবতা বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত মোট ৪০৯ জন সহায়তা প্রত্যাশী নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও ৩,২০৩ জন।
জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন-এর বিতরণ ব্যবস্থার তীব্র সমালোচনা করেছে। তারা একে ব্যর্থ এবং বিপজ্জনক আখ্যা দিয়ে বলছে, গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন খাদ্য বিতরণের নামে গাজায় মানবিক সংকটকে আরও ঘনীভূত করছে।
জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, গাজা এখন মানবসৃষ্ট খরার মুখোমুখি। পানির পরিশোধন ও সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় শিশুরা এখন পিপাসায় মৃত্যুর ঝুঁকিতে।
জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এল্ডার বলেন, মাত্র ৪০ শতাংশ পানি উৎপাদন সুবিধা এখন কার্যকর রয়েছে। শিশুদের মৃত্যু হতে শুরু করেছে, শুধু পিপাসার কারণে।
এল্ডার বলেন, আমি গাজায় এমন অসংখ্য মায়ের কথা শুনেছি, যারা তাদের শিশুকে খাবারের জন্য লাইনে পাঠিয়েছিলেন, আর সে ফিরে এসেছে রক্তাক্ত শরীরে। তিনি উল্লেখ করেন, একটি ঘটনায় এক কিশোর একটি ট্যাংকের গোলার আঘাতে আহত হয়ে পরে মারা যায়।
তথ্যের অপ্রতুলতা এবং বিতরণ কেন্দ্রের কার্যক্রম ঘিরে বিভ্রান্তি এই হতাহতের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এল্ডার বলেন, অনেক সময় জানা যায়, সহায়তা কেন্দ্র খোলা, কিন্তু পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় জানানো হয়, কেন্দ্রটি বন্ধ। গাজায় ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন থাকায় বহু মানুষ সঠিক তথ্য পায় না।
এরই মধ্যে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন বুধবার দাবি করেছে, তারা তিনটি বিতরণ কেন্দ্রে তিন মিলিয়ন খাবার বিতরণ করেছে কোনো ‘ঘটনা’ ছাড়াই। তবে এটি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
এদিকে গাজায় ইসরাইলের চলমান যুদ্ধের মধ্যেই ইরানের সঙ্গে তাদের পাল্টাপাল্টি বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোগান শুক্রবার ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার যুব ফোরামে দেওয়া বক্তব্যে বলেন, গাজায় গণহত্যা এবং ইরানের সঙ্গে সংঘর্ষ এক ভয়াবহ মোড় নিচ্ছে। এই উন্মত্ততা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত।
তিনি আরও বলেন, ইসরাইল আজ হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অভিযোগ করেছে, অথচ তারাই গাজায় ইতিমধ্যে ৭০০টিরও বেশি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে। এ ধরনের দ্বিমুখী নীতির মাধ্যমে তাদের যুদ্ধনীতি বৈধতা পায় না। এরদোগান আবারও যুদ্ধবিরতির দাবি জানান।
গাজায় বর্তমানে মানবিক সংকট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। একদিকে যেমন খাদ্য, পানি ও ওষুধের তীব্র সংকট, অন্যদিকে সহায়তা নেওয়ার চেষ্টায়ও জীবন যাচ্ছে সাধারণ মানুষের। আন্তর্জাতিক মহলের সমালোচনার মুখেও ইসরাইলের হামলা থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।