
অনলাইন ডেস্কঃ
গ্রেপ্তার এড়াতে নিজ বাসা ছেড়ে মগবাজারে একটি বাসায় আত্মগোপন করেছিলেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। গত রোববার (২২ জুন) রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় বিএনপির পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের রাতেই সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপরই তিনি সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে আত্মগোপনে যান।
মগবাজারের যেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেটি মূলত তার নিজের বাসা না। ডিবি পুলিশ বলছে, তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল যে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই মগবাজারে তার অবস্থান শনাক্তের পর নজরদারিতে রাখা হয়। নজরদারির মধ্যেই আজ ডিবি পুলিশের একটি দল তাকে গ্রেপ্তার করে।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছেন ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন ও গোয়েন্দা-দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি (কাজী হাবিবুল আউয়াল) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ছিলেন। তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ না করা সত্ত্বেও নির্বাচনের আয়োজন এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করতে না পারা, শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত ডামি ক্যান্ডিডেট ও জাতীয় পার্টিকে দিয়ে নির্বাচন করানো, এমনকি নির্বাচনের দিনে ভোটের পরিসংখ্যান নিয়ে দ্বিচারিতা করা। ভোটের পরিসংখ্যান সংক্রান্ত যে বিশ্লেষণ তা নিয়ে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দেওয়া, পরবর্তী সময়ে সাংবিধানিক পদে থেকে সংবিধান ও নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে যারা নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন তাদের গেজেট প্রকাশ করা। এসব অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তাকে রাজধানীর মগবাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, মগবাজারে যেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেটি মূলত তার বাসা নয়। আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল যে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি তিনি মগবাজারে রয়েছেন। সেখানে নজরদারির মধ্যেই আজ তাকে ডিবি পুলিশের একটি দল গ্রেপ্তার করে।
গত ২২ জুন আরেক সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদাকে গ্রেপ্তারের পর হাবিবুল আউয়ালকেও গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে ডিবি পুলিশ। তিনি কি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন— জানতে চাইলে ডিএমপির এ যুগ্ম পুলিশ কমিশনার বলেন, যেহেতু আমরা তাকে একটি ভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করেছি অর্থাৎ তার অবস্থান নিজ বাসগৃহে ছিল না। আমরা বলতে পারি যে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় আমরা তার তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে অবস্থান নিশ্চিত হয়ে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।
বিএনপির পক্ষ থেকে রাজধানী শেরেবাংলা নগর থানায় দায়ের করা মামলায় আসামি ২৪ জন। সেই মামলায় অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে ডিএমপি কী পদক্ষেপ নিচ্ছে— জানতে চাইলে নাসিরুল ইসলাম বলেন, আমরা আইনানুগ পদক্ষেপ নিচ্ছি। যেহেতু মামলা হয়েছে, অভিযুক্ত সবার বিষয়ে আমাদের গোয়েন্দা তৎপরতা আছে। অবস্থান শনাক্ত করতে পারলে গ্রেপ্তার করতে পারব।
মগবাজারে কার বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে— জানতে চাইলে তিনি বলেন, মোবাইল নম্বরের ভিত্তিতেই আমরা তার অবস্থান শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করেছি। তার মোবাইল বন্ধ অবস্থা থেকে একবার ওপেন করা হলে আমরা তার অবস্থান শনাক্ত করতে সক্ষম হই। তবে, বাসাটি কার সেটি বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যে নির্বাচন দিয়ে বিতর্কিত স্বৈরাচারী শাসনের শুরু, সেই নির্বাচনের সময়কার সিইসি কাজী রকিব উদ্দিন একই মামলার আসামি। তাকে গ্রেপ্তার করা হবে কিনা— জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এই মামলার এজাহারভুক্ত সব আসামিকে গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি ও কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। আমরা সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত পেলে গ্রেপ্তার করব।
গ্রেপ্তার হাবিবুল আউয়ালকে আজই আদালতে প্রেরণ করা হচ্ছে কিনা— জানতে চাইলে ডিবির এ যুগ্ম কমিশনার বলেন, এই মামলা শেরেবাংলা নগর থানার। তদন্তকারী কর্মকর্তা আসবেন। প্রথম অবস্থায় কাউকে গ্রেপ্তারের পর কিছু ইনিশিয়াল ম্যানেজমেন্ট থাকে। সেসব শেষ করে যদি তদন্তকারী কর্মকর্তা মনে করেন, আজই আদালতে প্রেরণ করা সম্ভব তাহলে সেটা করা হবে। আর যদি সেটা আজ সম্ভব না হয় তাহলে কালকে তাকে কোর্টে প্রেরণ করা হবে।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ আমলে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে অনিয়ম-কারচুপির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে আসামি করে মামলা করে বিএনপি। মামলার মোট আসামি ২৪ জন। এর মধ্যে আছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক ৪ আইজিপি।
গত ২২ জুন রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. সালাহ উদ্দিন খান বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলা নম্বর-১১।
মামলার আসামিরা হলেন- সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ, তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার মো. আবদুল মোবারক, আবু হানিফ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী, শাহ নেওয়াজ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে. এম. নূরুল হুদা, তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, তৎকালীন পুলিশের আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী, তৎকালীন ঢাকা মহানগরের পুলিশ কমিশনার, সাবেক ডিজি র্যাব ও সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, সাবেক এসবি প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম, সাবেক ডিজিএফআই প্রধান (নাম অজ্ঞাত), সাবেক এনএসআই প্রধান ও সাবেক ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নূরুল আলম, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবীব, আলমগীর হোসেন, আনিছুর রহমান ও তৎকালীন নির্বাচন সচিব (নাম অজ্ঞাত)।
একই দিন রাতেই (রোববার) সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সেদিন রাজধানীর উত্তরার বাসায় ঢুকে একদল লোক নূরুল হুদাকে বের করে আনেন। জুতার মালা পরিয়ে তাকে হেনস্তা করে পুলিশে সোপর্দ করে। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, দিনের ভোট রাতে করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় বিএনপির দায়ের করা মামলায় নূরুল হুদাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই মামলায় গত সোমবার নূরুল হুদার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।