
অনলাইন ডেস্কঃ
জুলাই আন্দোলনের পটভূমি রচনার প্রধান নায়ক তারেক রহমান বলে দাবি করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বুধবার (২৫ জুন) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি দাবি করেন। জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা সহায়তায় গঠিত ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
রিজভী বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের পটভূমি রচনার প্রধান নায়ক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আমরা দেখেছি যখন ছাত্র জনতা বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তখন তিনি দলের সকল নেতাকর্মীকে নির্দেশ দিয়েছেন তাদের সঙ্গে আন্দোলনে সক্রিয় থাকার জন্য। কখনো তিনি লন্ডন থেকে বক্তব্যের মাধ্যমে, কখনো আমাদের মাধ্যমে ছাত্র জনতার আন্দোলনে পাশে থাকা নির্দেশ দিয়ে। এই আন্দোলনে ছাত্রদলের অনেক নেতা-কর্মী, সমর্থক আত্মহুতি দিয়েছেন গণতন্ত্রকে ফেরানোর জন্য।’
বিডিআর হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘বিডিআর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে যারা তদন্তে আছেন তারা নানা কারণেই গোপনীয়তা রক্ষা করছেন। যদিও তারা বলছেন- রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, কিন্তু বিশেষ কারণে নামগুলো এখনও বলছেন না। তবে, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা যে আছে, এইটা বলছেন তারা। তার মানে পরিকল্পিতভাবে পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল। হয়তো কারও স্বার্থে, প্রভুদের স্বার্থে অথবা অন্য কোনো স্বার্থে এই ঘটনা ঘটিয়েছিল তখন যারা রাষ্ট্র ক্ষমতা ছিল।’
তিনি বলেন, ‘এমন দেশতো এই দেশের মানুষ চায়নি। যে দেশ যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হতে এতো মানুষের প্রাণহানি এত ক্ষয়-ক্ষতি সেই দেশে নিজের দেশের সরকার জোর করে ক্ষমতায় থাকতে গিয়ে নানা ধরনের প্রলপ তৈরি করেছিল এবং তারা যে বয়ান তৈরি করত সেই বয়ানগুলোও ছিল পরিকল্পিত। যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বিপক্ষের শক্তি এমন নানা ধরনের কথা বলে গোটা দেশটাকে প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে প্রতি সেকেন্ডে ওরা বিভাজন করে রেখে গেছে।’
রিজভী বলেন, ‘অনেক পুলিশ কর্মকর্তাকে গুম করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে অনেকেই অস্বীকার করেছেন এবং যারা অস্বীকার করেছেন তাদের নামসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে এ ধরনের নথিও পাওয়া গেছে। আর যারা রাজি হয়েছেন তারা তো গুম খুন করেছেন শেখ হাসিনার নৈকট্য লাভের জন্য। যেসব পুলিশ কর্মকর্তা গুম করতে অস্বীকার করেছেন, ডিপার্টমেন্টের উচিত তাদের পুরস্কৃত করা। কারণ তারা শেখ হাসিনার হিংস্রতার মধ্যেও গুম করতে অস্বীকার করেছেন।’
রিজভী বলেন, ‘পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডসহ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়া উচিত। আর যারা শেখ হাসিনার হিংস্রতার মধ্যেও অন্যায় কাজ করেনি তাদেরকে পুরস্কৃত করা উচিত। এটা করার জন্য সরকারকে অনুরোধ করব।’
তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে এই পর্যন্ত নানাভাবে নানা কারণে ১৭৭ জন মানুষের হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। যারাই এ সমস্ত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তারা যে দলেরই হোক, যে মতেরই হোক সরকারের উচিত আইনের মাধ্যমে তাদের বিচার করা। সরকার আইন-শৃঙ্খলা দেখবে, কোনো পার্টির রং দেখবে না, কে ক্ষমতাশালী ব্যক্তি, কে ক্ষমতাশালী ব্যক্তি নয়, কে ধনী, কে গরিব- এটা বিবেচনা করবে না। তাদের উচিত কারা অপরাধ করছে তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় বিচার করবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে রিজভী আরও বলেন, ‘সরকারের কাছে মানুষ আইনের শাসন প্রত্যাশা করে। আপনারা দৃষ্টান্ত রেখে যাবেন যাতে করে নির্বাচিত সরকার আসলে আপনাদের ভালো দৃষ্টান্তগুলো চিহ্নিত করে আরো ভালো কিছু করার চেষ্টা করে। কেন এই সময়ে এসে এতো খুন জখম হবে, কেন এতো ডাকাতি, চুরি হত্যাকাণ্ড ঘটবে? এসব বিষয়ে সরকারকে আরও বেশি তৎপর হতে হবে। বলা হচ্ছে পুলিশের মধ্যে এখনো আস্থা ফিরে আসেনি কেন আস্থা ফিরবে না?’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, প্রথমেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। একটি নির্বাচিত সরকারের অধীনে যদি স্থানীয় নির্বাচন হয় সে নির্বাচনের ক্রেটিবিলিটি বাড়বে। যারা নির্বাচিত হবেন তারা দেখাবেন যে নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে। ১৬-১৭ বছর মানুষ ভোট দিতে পারেনি। সেই কারণে জাতীয় নির্বাচন আগে হওয়া বাঞ্ছনীয়। এ বিষয়ে বিএনপির মতামত অত্যন্ত সুস্পষ্ট।’
আমরা বিএনপি পরিবারের সদস্য সচিব কৃষিবিদ মোকছেদুল মোমিন মিথুনের সভাপতিত্বে সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম রনির সঞ্চালনায় এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার আশরাফউদ্দিন বকুল প্রমুখ।