
অনলাইন ডেস্কঃ
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অন্যতম প্রবর্তক এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের স্মরণে কুমিল্লায় নির্মিত ম্যুরাল ভাঙচুরের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশের ৫২ জন বিশিষ্ট নাগরিক।
অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, শনিবার (২৮ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে তারা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এটি শুধু একটি শিল্পকর্ম ধ্বংসের ঘটনা নয়, বরং ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং আমাদের জাতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতির ওপর পরিচালিত নগ্ন আঘাত।’
তারা বলেন, ইউনেস্কোর স্বীকৃতিপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণায় রফিকুল ইসলামের ভূমিকাই ছিল কেন্দ্রীয়। তাঁর প্রতি এমন অপমান জাতিগত গৌরব, চেতনা ও বিবেকের ওপর আঘাত বলেও অভিহিত করা হয়।
বিবৃতিদাতারা অভিযোগ করেন, জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে নির্মিত ম্যুরাল ভাঙচুর ঠেকাতে প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে, এমনকি ঘটনার পরেও তারা নীরবতা পালন করছে, যা দুঃখজনক ও প্রশ্নবিদ্ধ।
তাদের মতে, এই হামলা শুধু একটি ম্যুরাল নয়, বরং বাংলাদেশের উদার গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী চক্রান্তের অংশ।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রাজধানীর বিজয় সরণিতে অবস্থিত ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’ ভেঙে তথাকথিত ‘জুলাই গণমিনার’ নির্মাণের উদ্যোগ অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
তারা বলেন, ‘নতুন প্রতীক নির্মাণে রাজধানীর অন্য উন্মুক্ত জায়গা ব্যবহার করা যেতো, কিন্তু একটি ঐতিহাসিক স্মারকের ওপর এমন হস্তক্ষেপ অপ্রয়োজনীয় এবং জাতির ইতিহাসবিরোধী।’
বিশিষ্টজনরা অবিলম্বে ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানান। পাশাপাশি, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের স্মারকসমূহ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও নাগরিক সমাজের দায়বদ্ধতা পুনর্ব্যক্ত করেন।
বিবৃতিতে সম্মতি দিয়েছেন ৫২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি। তারা হলেন— ১. এম এম আকাশ, অর্থনীতিবিদ, ২. বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন নবী, একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক, ৩. বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক খান, কথাসাহিত্যিক, ৪. জাকির তালুকদার, কথাসাহিত্যিক, ৫. সালাহউদ্দিন বাদল, কবি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, ৬. অজয় দাশগুপ্ত, সাংবাদিক ও লেখক, ৭. বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইমাম, বিশিষ্ট শিল্পী, ৮. বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদুর রহমান, কথাশিল্পী ও বিটিভির সাবেক ডিডিজি, ৯. ড. মকবুল হোসেন, রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী, ১০. শাহেদ কায়েস, কবি ও মুক্তচিন্তক, ১১. সরকার আবদুল মান্নান, কবি ও প্রাবন্ধিক, ১২. সন্তোষ রায়, কবি ও প্রাবন্ধিক, ১৩. শওগাত আলী সাগর, প্রবাসী সাংবাদিক, ১৪. রফিকুর রশীদ, কথাসাহিত্যিক, ১৫. ঝর্ণা রহমান, কথাসাহিত্যিক, ১৬. সেজান মাহমুদ, কথাসাহিত্যিক ও চিকিৎসাবিজ্ঞানী, ১৭. ডা. আতিকুল হক, চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ, ১৮. ড. মুকিদ চৌধুরী, কথাসাহিত্যিক ও গবেষক, ১৯. হোসেন দেলওয়ার, কবি, ২০. মোজাম্মেল হক নিয়োগী, কথাসাহিত্যিক, ২১. গোলাম মোর্শেদ চন্দন, কবি, ২২. মোহাম্মদ আনওয়ারুল কবীর, কবি, গল্পকার ও অধ্যাপক, ২৩. হামীম কামরুল হক, কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষক, ২৪. শামীম আশরাফ, শিক্ষক, ২৫. স্বকৃত নোমান, কথাসাহিত্যিক, ২৬. আরিফ নজরুল, কবি ও প্রাবন্ধিক, ২৭. ড. মোহাম্মদ মাহমুদ হাসান, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, আইন ও লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগ, কার্লটন ইউনিভার্সিটি, কানাডা, ২৮. মনি হায়দার, কথাসাহিত্যিক, ২৯. সরদার ফারুক, কবি, ৩০. ফজলুল কবিরী, কথাসাহিত্যিক ও সাহিত্য-সমালোচক, ৩১. আবদুল্লাহ আল ইমরান, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক, ৩২. শফিক হাসান, কথাসাহিত্যিক ও ছোটকাগজ সম্পাদক, ৩৩. আলমগীর মাসুদ, কবি ও সম্পাদক, ৩৪. ড. মাসুদ পথিক, কবি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা, ৩৫. আরিফুর রহমান, কথাসাহিত্যিক, ৩৬. মেহেদী হাসান শোয়েব, লেখক, প্রকাশক ও সাংবাদিক, ৩৭. আবদুল্লাহ আল মামুন, পিএইচডি গবেষক, কানাডা, ৩৮. শামস সাইদ, কথাসাহিত্যিক, ৩৯. বিনয় কর্মকার, কবি, ৪০. সালাহ উদ্দিন মাহমুদ, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক, ৪১. মিলন সব্যসাচী, কবি, ৪২. এ কে এম মাহতাব উদ্দীন, মানবাধিকার কর্মী, ৪৩. গিরীশ গৈরিক, কবি ও সাংবাদিক, ৪৪. সমর চক্রবর্তী, কবি ও সাংবাদিক, ৪৫. পিকলু চৌধুরী, নির্মাতা, ৪৬. গোলাম মুজতবা মর্তুজা, সাংবাদিক, ৪৭. নিশাত বিজয়, সাংবাদিক, ৪৮. জহিরুল হক বাপি, লেখক, ৪৯. নাদিম ইকবাল, চিত্রপরিচালক, ৫০. অনিরুদ্ধ দিলওয়ার, কবি ও ছোটকাগজ সম্পাদক, ৫১. রাফায়েত চৌধুরী, সমাজচিন্তক ও সংগঠক এবং ৫২. রাশিদা স্বরলিপি, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন