
অনলাইন ডেস্কঃ
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে রাজনীতিতে বিতর্ক বাড়ছে। এই ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি এখন আলোচনার কেন্দ্রে। দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি পিআর পদ্ধতির কঠোর বিরোধিতা করছে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বেশকিছু রাজনৈতিক দল এই পদ্ধতির পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। ফলে পিআর পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর পক্ষে-বিপক্ষের বক্তব্য রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়াচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫৫টি। এর মধ্যে বিভিন্ন কারণে চারটি দলের নিবন্ধন বাতিল রয়েছে এবং আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে। ফলে ৫০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ১৮টি দল পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের পক্ষে। বিপক্ষে অবস্থান ২৮টি দলের। চারটি দল তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি। কিছু দল আংশিকভাবে এই পদ্ধতির পক্ষে। বিপক্ষে থাকা দলগুলো মূলত বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী। এর বাইরে জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি) পিআর পদ্ধতির পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছে। মূলধারার ইসলামী দলের মধ্যে পাঁচটি দল পিআর পদ্ধতির পক্ষে, দুটি বিপক্ষে এবং দুটি দল অবস্থান পরিষ্কার করেনি।
পিআর পদ্ধতি নিয়ে কোন দলের কী অবস্থান: পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), তৃণমূল বিএনপি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি (বিএমজেপি) ও বাংলাদেশ কংগ্রেস।
অন্যদিকে, বিদ্যমান নির্বাচন ব্যবস্থার পক্ষে রয়েছে বিএনপি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, গণফোরাম, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ), বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি (নিম্নকক্ষ বিদ্যমান ব্যবস্থায় এবং উচ্চকক্ষ পিআর), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম (নিম্নকক্ষ বিদ্যমান ব্যবস্থায় এবং উচ্চকক্ষ পিআর), বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি), নাগরিক ঐক্য (নিম্নকক্ষ বিদ্যমান ব্যবস্থায় এবং উচ্চকক্ষ পিআর), গণসংহতি আন্দোলন (নিম্নকক্ষ বিদ্যমান ব্যবস্থায় এবং উচ্চকক্ষ পিআর)।
ইসলামী দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্ট পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষে। আর ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এই পদ্ধতির বিপক্ষে রয়েছে। তবে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও ইসলামী ঐক্যজোট এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, এই পদ্ধতির প্রবক্তাই হলো জাতীয় পার্টি, কিন্তু এই স্বল্প সময়ে এই পদ্ধতিতে নির্বাচন অসম্ভব। তাই আগামী নির্বাচন এই পদ্ধতিতে না হয়ে প্রচলিত পদ্ধতিতেই হোক। তবে পিআর নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম বলেন, বাংলাদেশে যে প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হয়, সেখানে মানুষ ব্যালট পেপারে ভোট দেবে সেটাই উত্তম। নতুন কোনো পদ্ধতির আশ্রয় নিলে তা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হবে। সরকারি প্রভাবমুক্ত, অবাধ নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে এতেই দেশের অর্ধেক ঝামেলামুক্ত হবে। মানুষ দেশের মালিকানা বুঝে নিতে চায়, প্রচলিত সাংবিধানিক পদ্ধতিতে ভোট চায়।
জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, এই পদ্ধতিতে নির্বাচন করতে হলে তো সংবিধান সংশোধন করতে হবে, সেজন্য সংসদ চালু থাকতে হবে। এখন তো সংসদই নেই।
তরীকত ফেডারেশন বলেছে, সাংবিধানিক উপায়ে নির্বাচন চাই, অসাংবিধানিক কোনো উপায়কে সমর্থন করতে পারি না।
বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ বলছে, সংবিধানের বাইরে তারা কিছু চায় না। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-ইনু), সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টির নেতারা বলছেন, ঐকমত্য কমিশন যেহেতু তাদের কাছে কোনো মন্তব্য জানতে চায়নি, তাই তারা এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেবেন না।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ১৯৯০ সাল থেকেই আমরা এই দাবি করে আসছি। তবে এখন যে সময় আছে, তাতে এই পদ্ধতিতে নির্বাচন সম্ভব নয়। এখন প্রচলিত পদ্ধতিতেই নির্বাচন হওয়া উচিত।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সহ-সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, নির্বাচন গণতন্ত্রের একটি অংশ। এজন্য দুটি পদ্ধতি আছে। একটি বর্তমানে যা আমাদের দেশে চালু আছে, অন্যটি (পিআর) নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। প্রচলিত পদ্ধতিতে সংখ্যালঘু দ্বারা সংখ্যাগুরু শাসিত হয়। আর এই সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচনে জনগণের প্রতিনিধিত্ব থাকে। তবে এই পদ্ধতিরও কিছু নেতিবাচক দিক আছে। তবে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারলে তা ইতিবাচক।
মুক্তি জোট, ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি এই পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়। এ নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা না হওয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, জাকের পার্টি, গণফ্রন্ট ও বিকল্প ধারা।
ইসলামী দলগুলোর অবস্থান:
গত ২৮ জুন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় মহাসমাবেশ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সেখানে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পিআর পদ্ধতির বিষয়টি বেশ জোরালোভাবে তুলে ধরেন বিভিন্ন দলের নেতারা। সেদিন ডান ব্লকের ১০টি রাজনৈতিক দল একমঞ্চে উঠে পিআর পদ্ধতির ব্যাপারে দাবি তুলে ধরে নেতারা বলেছেন, পিআর পদ্ধতি না হলে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না।
বিএনপিও ওই ঘটনায় পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। ওইদিনই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘পিআর পদ্ধতির দাবি তুলে একটি গোষ্ঠী নির্বাচনকে পিছিয়ে দিয়ে জাতির সর্বনাশ করতে চাচ্ছে। পিআর পদ্ধতি কই থেকে আসে? কে দেয় বুদ্ধি আপনাদের? এ সমস্ত কু-পরামর্শ নিয়ে, এই দেশ ও জাতিকে ধ্বংস করার জন্য একদল লোক আজকে মাঠে নেমেছে।’
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, ‘প্রতিটি রাজনৈতিক দলের তার কথা বলার রয়েছে। সে তার মতো চেষ্টা করবে। কিন্তু সিদ্ধান্ত নেবে দেশের জনগণ। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক মূল্যবোধে বিশ্বাস করলে আগামী নির্বাচনে এটা (পিআর পদ্ধতি) জনগণের কাছে নিয়ে যেতে হবে। এর জন্য প্রথমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যেতে হবে। অর্থাৎ জনগণের ভোটে একটি সরকার গঠন করতে হবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের ফলে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলো কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে। কারণ, রাজনৈতিক মহলে তখন আলোচনা উঠেছে, রাজনীতিতে বিএনপির গুরুত্ব বেড়েছে, অন্য দলগুলোর গুরুত্ব কমেছে। অনেকের মতে, এমন পরিস্থিতিতে দলগুলোকে এক করে দেয়। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী নেপথ্যে থেকে ইসলামপন্থিদের সংগঠিত করার উদ্যোগ নেয়।
এরই অংশ হিসেবে নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনা করে অবশেষে গত শনিবার ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশে এক মঞ্চে ওঠেন তারা। ওই মঞ্চ থেকে বক্তৃতাকালে বিএনপিকে ইঙ্গিত করেই বিভিন্ন কথা বলা হয়। রাজনৈতিক চিত্রটা এমনভাবে উঠেছে, এই দলগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে বিএনপি। ফলে ওইদিনই এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যারা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়, তাদের উদ্দেশ্য আছে। তারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন সম্ভব নয়। এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া।’
এদিকে ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে চলতি মাসের ১৯ জুলাই জামায়াতে ইসলামী বিশাল শোডাউনের পরিকল্পনা করছে। এরপর বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, গণঅধিকার পরিষদও মহাসমাবেশ করতে পারে। এই দলগুলো একমঞ্চে উঠবে। তারা পিআর পদ্ধতির ব্যাপারে আরও কঠোর অবস্থানে যেতে চায়। এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে শুধু বিএনপি নয়, নির্বাচন প্রশ্নে সরকারও দ্বিধান্বিত হতে পারে। কারণ, প্রধান উপদেষ্টা তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, সংস্কার কাজ শেষ করতে পারলে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে অসুবিধা নেই। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি ধরে নিয়েছে যে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। কিন্তু এই দলগুলো যদি পাল্টা চাপ সৃষ্টি করে, সেক্ষেত্রে নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়েও জটিলতা তৈরি হতে পারে।
পিআর পদ্ধতি নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘বিশ্বের ৬০-৬২টি দেশে পিআর পদ্ধতিতে ভোট হয়। আমরাও সবাই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের ব্যাপারে একমত। কেননা, পিআর পদ্ধতিতে ভোট কারচুপি, পেশি শক্তি ও কালো টাকার ব্যবহার এবং কেন্দ্র দখলের সুযোগ থাকে না। প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে দলের এমপি নির্বাচিত হবেন। এখানে ব্যক্তি নয়, দলের স্বার্থ থাকে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের দাবি জানাতে থাকব। কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আমরা প্রথম তুলেছিলাম এবং নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থার দাবি বাস্তবায়ন হয়েছে। আশা করি, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিও জনগণ মেনে নেবে একদিন।’
ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি জানালেও রাজপথে কোনো সংঘাত হবে না। কারণ প্রত্যেক দলের আদর্শ, দর্শন ও নীতি ভিন্ন থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। ফ্যাসিজম ও স্বৈরতন্ত্র মোকাবিলার একমাত্র নিরাপদ পদ্ধতি হলো পিআর। এই পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে ভবিষ্যতে আর কেউ ফ্যাসিস্ট হওয়ার সুযোগ পাবে না।’
বিএনপির পিআর পদ্ধতি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের তো অনেক ভোটব্যাংক। নির্বাচন হলে তারা ৮০ ভাগ আসন পাবে। জনগণ যদি ভোট দেয়, তাহলে তারা ক্ষমতায় যাবে। ৮০ ভাগ আসন পেলে ৮০ শতাংশ ভোট পেতে হবে। ৩০ বা ৪০ শতাংশ ভোট পেয়ে ৮০ ভাগ আসন নিয়ে নেবে, এটা তো হতে পারে না।’
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘আমরা আংশিক পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই। বর্তমান ব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটে না। তাই ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিনিধি নির্বাচনে আংশিক পিআর পদ্ধতিতে নিম্নকক্ষে ও পূর্ণ পিআর সিস্টেম উচ্চকক্ষে চালু করা প্রয়োজন। আমরা বিশ্বাস করি, দেশের স্বার্থে একটি শক্তিশালী ও গঠনমূলক বিরোধী দল থাকা প্রয়োজন। বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার রাজনীতি বাংলাদেশে চলবে না ইনশাআল্লাহ।’
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমাদ আব্দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি তো অনেক বিষয়েই দ্বিমত পোষণ করছে। তাদের সঙ্গে অনেক মতামত মিলছে না। তবে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতেই সবকিছু করা হবে।’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে এখন নিম্নকক্ষে পিআর করার সময় পাওয়া যাবে না। সময়ের বিবেচনায় আমরা এখন নিম্নকক্ষে পিআর চাই না। কারণ, এখানে ঐকমত্য হওয়ারও ব্যাপার রয়েছে। কিন্তু উচ্চকক্ষে পিআর চাই।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষ সামগ্রিকভাবে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত নয়। এবার উচ্চকক্ষে সেটা শুরু করলে পরবর্তীকালে আমরা অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিম্নকক্ষেও সিদ্ধান্ত নিতে পারব।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘পিআর পদ্ধতি এখন পর্যন্ত আলোচনার বিষয় নয়, কোনো কোনো দলের রাজনৈতিক দাবি। এখন উচ্চকক্ষে পিআরের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এর পক্ষে আমরা অবস্থান নিয়েছি।’
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘আমরা পিআর ব্যবস্থার পক্ষে। কিন্তু ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে যখন দলীয়ভাবে আমাদের সংলাপ হয়, তখন জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছানোর সুবিধার্থে আমরা একটু ছাড় দিতে সম্মত হই। উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা গেলে আমরা নিম্নকক্ষে প্রচলিত ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট বা এফপিটিপি পদ্ধতিতে ভোট হওয়ার ব্যাপারে সম্মত হই।’
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘আনুপাতিক হারে নির্বাচন হলে বাংলাদেশে ভবিষ্যতে কোনো স্বৈর সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে না। সব মিলিয়ে ভবিষ্যতে ফ্যাসিবাদী স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা ঠেকানোর জন্য এটি একটি কার্যকর মাধ্যম হতে পারে।’
বিশ্লেষক মত: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ, আঞ্চলিক দল নেই এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা নয়। অথচ পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের জন্য এ তিনটি শর্ত লাগে। দেশে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন হলে নতুনভাবে জটিলতা তৈরি হবে। এই মুহূর্তে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন করতে গেলে সরকার কাজই করতে পারবে না। সুতরাং এই ইস্যুতে আরও বিশদ আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। তিনি বলেন, পিআরের প্রকারভেদ রয়েছে। বিশ্বের ৭০টি দেশে পিআর পদ্ধতি চালু রয়েছে। তবে একেক দেশের পদ্ধতি একেক রকম।
সূত্রঃ কালবেলা