
অনলাইন ডেস্কঃ
বিবিসি বাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। তিনি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নিতে পারা না পারার প্রশ্ন, বিএনপির প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট এনসিপির অভিযোগের বিষয়ে কথা বলেছেন।
আজ রোববার (১৩ জুলাই) সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করে বিবিসি বাংলা।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের প্রতি বিবিসি বাংলার প্রশ্ন, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম বিচার শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত নিষিদ্ধ করেছে সরকার, তার অর্থ কি নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না তারা?
এর জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নাসির উদ্দিন বলেছেন, ‘উনাদের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত। যদি বিচার শেষ হয়, যদি শাস্তি না দেওয়া হয়, নিষেধাজ্ঞা দেওয়া না হয়; সরকারের যে সিদ্ধান্ত সে অনুযায়ী তাদের রেজিস্ট্রেশন রাখাই তো মিনিংলেস হয়ে যায়। তারা কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে পারবে না। এ জন্য আমরাও রেজিস্ট্রেশন স্থগিত করে দিয়েছি।’
যদি তারা নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে তখন নির্বাচন অন্তর্ভূক্তিমূলক হলো কি-না সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে?
এ সম্পর্কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘সে প্রশ্ন তো উঠতেই পারে, স্বাভাবিক। আমাদের চিন্তা হলো- যারা ভোটারস আছে, পার্টিসিপেন্টস অব ভোটার, নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে চাই। এখন ইনক্লুসিভের ডেফিনিশন তো একেকজনের কাছে একেক রকম।’
আপনার কী মনে হয়, আওয়ামী লীগের যে সমর্থকগোষ্ঠী তারা সবাই ভোটে আসবে, ভোট দেবে?
নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমি তো আশা করি তারা আসবে। এদের সমর্থকগোষ্ঠী আছে তো। তারা যে একেবারেই আসবে না এটা আমরা মনে করি না। লার্জ নম্বর অফ দেম পার্টিসিপেট ইন দ্য ইলেকশন, নট অ্যাজ অ্যা ক্যান্ডিডেট, বাট অ্যাজ এ ভোটার।’
জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের কথাও বলছেন কেউ কেউ। আপনার কী মনে হয় এটা হতে পারে?
প্রধান নির্বাচন কমিশনার নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে স্থানীয় সরকারে ৬১ জেলা পরিষদ আছে। ৫৬৫টি আছে উপজেলা, পৌরসভা আছে ৩৩০, সিটি করপোরেশন আছে ১২টা, ইউনিয়ন কাউন্সিল আছে ৪৫৯২টা। এই ইলেকশনগুলোতে খুব সহিংসতা হয়। দেখা যায় যে এক বাড়ি থেকে দুই জন দাঁড়ায়ে গেছে, এজন্য খুব সহিংসতা হয়, খুব খুন খারাপি হয়। এই জন্য এই ভোটগুলো ধাপে ধাপে করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে সবকিছু মবিলাইজ করতে সুবিধা হয়। পাঁচ, ছয় বা সাত ধাপে এগুলো করা হয়। ধাপে ধাপে করতে গেলে দেখা যায় যে এটা দশ মাস থেকে এক বছর সময় লাগে কমপক্ষে। এখন আমাদের জাতীয় নির্বাচনের আগে তো সেই সময় তো নাই।
কোনো কোনো দল আপনাদের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে, যেমন এনসিপি। আপনারা কি নিজেদের নিরপেক্ষ বলবেন?
নাসির উদ্দিন বলেন, “অবশ্যই নিরপেক্ষ। আমাদের- ইট ইজ অ্যা কমিটমেন্ট গিভেন টু দ্য নেশন। যেদিন আমি শপথ নিয়েছি সেদিনই আমি কমিট করেছি, সুপ্রিম কোর্টের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে শপথ নিয়েছি। এমনকি আমার অফিসে যারা কাজ করেন, গত দোসরা মার্চ প্রথম রোজায় ভোটার দিবসে সবাইকে হাত তুলে শপথ করিয়েছি যে- আপনারা সবাই একটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষভাবে কাজ করবেন, এমন ওয়াদা আমাকে দেন। পহেলা রমজান অধিকাংশ রোজাদার হাত তুলে শপথ করেছে।
সুতরাং ইসি নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছে, ওই রাজনৈতিক বক্তব্য এগেইন দিতে পারে। সময়ের বিবর্তনে যখন দেখবে আমরা কাজ করছি নিরপেক্ষভাবে, আস্তে আস্তে যখন আমাদের কাজকর্ম আরও সম্প্রসারিত হবে, তারা রিঅ্যালাইজ করবে যে না- এই নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ আছে। তাদের আস্থা আমাদের ওপর আসবে।”
তাদের একটা অভিযোগ যে আপনারা বিএনপির প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট। বিএনপির সাথে আপনার কি সম্পর্ক আছে?
প্রধান নির্বাচন কমিশনার নাসির উদ্দিন বলেন, “আমি তো বিএনপির সদস্যও না, কোনো নেতাও না। কারও প্রতি আমাদের যে দুর্বলতা আছে, এটা বলতে পারে পলিটিক্যাল স্টেটমেন্ট তো দিতেই পারে। আপনি তো এটা শুনছেন, অনেকে তো আমাকে জামায়াতও বলে। একেকজন একেকটা বলে। এগুলো পলিটিক্যাল স্টেটমেন্ট। আমি এগুলোকে সেভাবে দেখি। উনারা বলতেই পারে। উনাদের তো বলার অধিকার আছে, বলবেই। আমাদের কাজকর্ম দেখে উনারা এক পর্যায়ে বুঝে যাবে যে এখান থেকে ন্যায়বিচার পাওয়া যায়।
আমি ওই চেয়ারটাকে (সিইসির চেয়ার) একটা বিচারকের আসন মনে করি। সুতরাং আমার হাত দিয়ে যেন অবিচার না হয়। আমি সবার জন্য যেন সমান সুযোগ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে পারি, বিচারকের মতো করেই আমি এই কাজটা করতে চাই।”