
৯৬ সালের শেষের দিক, তথন আমি প্রয়াত প্রেসিডেন্ট, ততকালীন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসাইন মুহাম্মাদ এরশাদের পত্রিকা দৈনিক জনতায়, সম্পাদক ছিলেন প্রয়াত ফকির আশরাফ, অফিস করছি আমি, এমন সময় ফ্রন্ট ডেস্ক থেকে ফোন এলো, আমায় বলা হলো, সম্পাদক সাহেব আমায় খুজছেন।
আমি তার রুমে গেলাম, তিনি একটা এসাইনমেন্ট দিলেন শাওন ও বরেন্য লেখক হুমায়ুন আহমেদ কে নিয়ে, আমি বরাবরই পলিটিক্যাল বিট করি, শাওন কে চিনিনা তখনো কিন্ত হুমায়ুন আহমেদের নাম শুনেছি ! তাদের প্রেম তখন তুংগে,
প্রেমের এসাইনমেন্ট পেয়ে ঘাবড়ে গেলাম, সিনিয়র কলিগ ও পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক শাহীন রেজা আস্বস্ত করলেন, নিউজের কিছু টিপস দিলেন। পরদিন যথারীতি হুমায়ুন আহমেদ কে ফোন করলাম । তিনি তখন আসিফ ম্যানসনে তার ফিল্ম অফিসে বসতেন, এটা ছিলো নুহাস চলচিত্রের অফিস, ল্যান্ড ফোনে ফোন দিতেই ওপাশ থেকে তার ম্যানেজার ফোন ধরলেন, আমি স্বভাবসুলভ ভংগিতেই জিগ্যাসা করলাম, হুমায়ুন আহেমদ আছেন ? তার ম্যানেজার একটা ধাক্কা খেলো, আমার পরিচয় জানতে চাইলো আবারও,
বলা বাহুল্য আমি আমার পরিচয় দিয়েই ফোন দিয়েছিলাম, ম্যানেজার আমায় জিজ্ঞাসা করলো, আমি কোন পাতার রিপোর্টার? এবার আমার অবাক হবার পালা, ম্যানেজার বললো, সব রিপোর্টাররা হুমায়ুন আহমেদকে স্যার বলে ডাকে! আমার ইগোতে বাধলো,
বয়সে আমি তরুন, নানা কারনে হুমায়ুন আহমেদ তখন বিতর্কিত, আমি তাকে নিয়ে নিউজ করতে যাচ্ছি, কেন তাকে স্যার বলতে যাবো ? শাহীন রেজা আমায় বুঝালেন, পরে ওটা নিয়ে সিরিজ নিউজ করেছিলাম!সেকেন্ড দিনেই হিউজ ফোন পেলাম, নিউজ বন্ধ করার জন্য রিকোয়েস্ট করতে লাগলো !
সাংবাদিক, অভিনয় জগতের অনেকেই ফোন করেছিলেন! মন্ত্রী ছিলেন, এমপি ছিলেন, এমন একজন দেশবরেণ্য অভিনেতাও ফোন করে নিউজ বন্ধের রিকয়েস্ট করেছিলেন, হুমায়ুন আহমেদের সাথে দু দফায় বসেছিলাম, একবার সোনারগাঁ হোটেলে, আরেক বার তার অফিসে, উনি আমায় পা থেকে মাথা পর্যন্ত মেপেছিলেন, প্রয়াত অভিনেতা মোজাম্মেল স্যারও ছিলেন এক মিটিং এ।
পরে মোজাম্মেল স্যার আমার এক নাটকে অভিনয়ও করেছিলেন, হুমা্য়ুন আহমেদ আমায় বন্ধু হিসাবে সম্বোধন করেছিলেন, তার বিরুদ্ধে নিউজ করলেও তিনি আমার সাথে এতটুকুন খারাপ ব্যবহার করেন নি, আমি তার আচারনে রীতিমতো অবাক হয়েছিলাম।
হুমায়ুন আহমেদ আজ নেই, কিন্ত তার কীর্তি বেচেঁ আছে সবার মাঝে, ভালো থাকুক মহান এই মানুষটি! আল্লাহ তাকে বেহশত নসীব করুক, আজ তার মৃত্যুবার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধা।
লেখক: শাহীন রহমান, সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট