
অনলাইন ডেস্কঃ
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দৃশ্যমান উন্নয়ন হলেও তা নাগরিক দুর্ভোগ কমাতে পারছে না। সম্প্রসারিত এ মহাসড়কে তৈরি হয়েছে সার্ভিস লেন, ফুট ওভারব্রিজ, সড়ক বিভাজকসহ আধুনিক অবকাঠামো; কিন্তু কিছু অনিয়ম, দখল ও নিয়মভাঙার কারণে এসব উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
হেমায়েতপুর, সাভার, নবীনগরসহ মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে দেখা গেছে, সার্ভিসলেন দখল করে রাখা হয়েছে প্রাইভেটকার ও ট্রাক। মূল লেনেই যাত্রী ওঠানামা করছে বাস ও গণপরিবহন, ফলে যানজট হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বাসচালকরা বলছেন, যাত্রীদের চাপে এবং সময় বাঁচাতে তারা নিয়ম ভেঙে মূল রাস্তায় যাত্রী তোলেন। যাত্রীরা বলছেন, এভাবে এক কিলোমিটার রাস্তা পার হতে সময় লাগে ঘণ্টারও বেশি।
ভাসমান দোকান, হকারদের দখল, সড়কঘেঁষে বাজার ও পণ্যবাহী যানবাহনের নৈরাজ্য মহাসড়ককে প্রায় অচল করে তুলেছে। শুধু হেমায়েতপুর নয়, সাভার থেকে নবীনগর পর্যন্ত প্রায় সব বড় বাস স্ট্যান্ডেরই একই চিত্র। বিকেলের পর সার্ভিসলেনগুলো হকারদের দখলে চলে যায়, হাঁটা তো দূরের কথা—যান চলাচলও হয় না ঠিকমতো।
সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে বারবার অভিযান চালানো হলেও তা টেকে না বেশিদিন। ঢাকা জেলা উত্তর ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরাফাতুল ইসলাম জানান, পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে, জরিমানা করছে এবং ভ্রাম্যমাণ দোকান উচ্ছেদ করছে। তবে মেনে নিচ্ছেন যে, সড়ক ব্যবহারে সাধারণ মানুষ এখনো ভোগান্তিতে আছেন। মূল লেনে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী তোলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা বন্ধ করতে হলে চালক ও সাধারণ নাগরিক—উভয়পক্ষেরই দায়িত্বশীল আচরণ দরকার।’
অবৈধ দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ থাকলেও পুলিশ বলছে, তাদের হাতে এমন নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তারা। উপজেলা প্রশাসন জানায়, একাধিকবার অভিযান চালানো হলেও কিছু গোষ্ঠী আবারও সড়ক দখল করে নিচ্ছে, ফলে যানজট ও দুর্ভোগ থামছে না।
সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুবকর সরকার বলেন, ‘সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে শুধু আইন প্রয়োগ যথেষ্ট নয়। দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা, জনপ্রতিনিধিদের আন্তরিকতা এবং সাধারণ মানুষের সচেতনতা।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি সঠিক ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণই উন্নয়নের সফলতা নিশ্চিত করতে পারে। উন্নয়নের সুফল পেতে হলে প্রশাসন, চালক, যাত্রী, ব্যবসায়ী—সবপক্ষকে দায়িত্বশীল হতে হবে। অন্যথায় নতুন করে উন্নয়ন হলেও নাগরিক দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলবে না।