
অনলাইন ডেস্কঃ
জাতীয় পার্টির কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং নিবন্ধন স্থগিত করার দাবি উঠলেও তা আমলে নিচ্ছে না দলটি। নেতারা বলেছেন, কেবল আওয়ামী লীগের আমলে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য জাতীয় পার্টিকে ফ্যাসিস্টের দোসর তকমা দেওয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে তারা একমত নন তারা। কেননা ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামী আন্দোলন, মাহমুদুর রহমান মান্না এবং ড. কামালের দলসহ ৩১টি দল অংশ নিয়েছে। এখন নির্বাচনে অংশগ্রহণ যদি অপরাধ হয়, তাহলে ২০১৮ সালের নির্বাচনে যে ৩১টি দল অংশ নিয়েছে, তারাও অপরাধী। ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য জাপার নিবন্ধন স্থগিত হলে বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ ৩১টি দলের একই অবস্থা হওয়ার কথা।
আজ বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে দলের আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব ও প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া। তবে তিনি তার বক্তব্যে জামায়াত ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়েছে, বললেও নিবন্ধন বাতিল হওয়ার কারণে ওই নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল না।
এর আগে রেজাউলের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদের কাছে অডিট রিপোর্ট জমা দেয়। গত বছর জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন দলটির আয় ও ব্যয় দুটিই বেড়েছে।
জাতীয় পার্টিসহ ১৪টি দলকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন স্থগিত করার দাবিতে ইসিতে আবেদন দিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ।
রেজাউল ইসলাম বলেন, আরপিওর সব শর্ত মেনে নিবন্ধন পেয়েছে জাতীয় পার্টি। নিবন্ধন বাতিল হয়– আরপিওর এমন শর্ত ও আইন আমরা লঙ্ঘন করিনি। ফলে কে কোন দাবি জানাল, তা দেখার বিষয় নয়।
আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে তিনি বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকলে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেবে। তবে এখন পর্যন্ত এ ধরনের পরিবেশ নিশ্চিত হয়নি। সরকার একটি বিশেষ দলকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন জাপার উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য খলিলুর রহমান খলিল, নুরুজ্জামান ও দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম।
আয়-ব্যয় বেড়েছে
ইসিতে দেওয়া আয়-ব্যয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাপার আয় ২ কোটি ৬৪ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৮ টাকা। এ সময়ে ব্যয় করেছে ১ কোটি ৭৯ লাখ ৮৮ হাজার ৪৪ টাকা। স্থিতি রয়েছে ৮৪ লাখ ৫০ হাজার ৮৯৪ টাকা।
মনোনয়ন ফরম বিক্রি, সদস্য চাঁদা, অনুদান, প্রকাশনা বিক্রি ইত্যাদি থেকে আয় হয়েছে। আর সভা-সমাবেশ, প্রচার কার্যক্রম, অফিস কর্মচারীদের বেতন ইত্যাদি খাতে ব্যয় হয়েছে।
২০২৩ সালে জাপার আয় ছিল ২ কোটি ২২ লাখ ২ হাজার ৪০৫ টাকা। আর ব্যয় ছিল ১ কোটি ১৩ লাখ ১৮ হাজার ৫২৫ টাকা। এ হিসাবে গত বছর ৪২ লাখ ৩৬ হাজার টাকার বেশি আয় বেড়েছে।
২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালুর পর থেকে প্রতিবছর ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আগের পঞ্জিকা বছরের (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) আয়-ব্যয়ের হিসাব স্বীকৃত চার্টার্ড অ্যাকাউন্টিং ফার্ম দিয়ে নিরীক্ষা করে ইসিতে জমা দেয় রাজনৈতিক দলগুলো। বর্তমানে বিএনপি, জামায়াত, জাপাসহ নিবন্ধিত দল ৫০টি।
গত ১৩ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, এর সব অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কার্যক্রম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। একই দিনে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করে ইসি। ফলে অডিট রিপোর্ট দেওয়ার বাইরে রয়েছে দলটি। আইনে পরপর তিন বছর আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা না দিলে সংশ্লিষ্ট দলের নিবন্ধন বাতিলের বিধান রয়েছে।