
অনলাইন ডেস্কঃ
খুলনা জেলা কারারক্ষী রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে ডুমুরিয়া থানা আ’লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী আলমগীর হোসেনের স্ত্রী জাহানারা সুলতানা পিয়া সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন। বৃহস্পতিবার খুলনার আদালত সাইবার ট্রাইব্যুনালে তিনি সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫ এর ২৫(৩), ৩০ ধারায় এ মামলা করেন। মামলায় আ’লীগ নেতার স্ত্রী পিয়া কারারক্ষী রবিউলের বিরুদ্ধে করা মামলায় ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে অশোভন আচরণ, যৌন হয়রানী, মিথ্যা প্রলোভন, ভীতি প্রদর্শন, অশ্লীল ছবি প্রেরণ এবং ফেসবুকে প্রকাশের হুমকির অভিযোগ করেন। আসামি রবিউলের কারারক্ষী নং-৪১৯৩০। সে সাতক্ষীরা আশাশুনির ফকরাবাদ গ্রামের আফসার উদ্দিন গাজীর পুত্র। মামলাটিকে গুরুত্ব দিয়ে বিচারক মমিনুন নেছা তাৎক্ষণিক পুলিশকে এ ব্যাপারে তদন্তের নির্দেশনা প্রদান করেন। উলেখ্য, বাদীর স্বামী আলমগীর জেলা আ’লীগের সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক বিরোধীদলীয় হুইপ ও সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক শেখ হারুনুর রশিদের আপন ভাগ্নে।
মামলার নথির বিবরণ থেকে জানা যায়, বাদীর স্বামী কাজী আলমগীর হোসেন ডুমুরিয়া উপজেলা আ’লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তিনি ২০১৮ এবং ২০২৩ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১৩নং গুটুদিয়া ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি গত ২০ এপ্রিল গ্রেফতার হলে বাদী নিয়ম মাফিক জেলা কারাগারে স্বামীর সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করার জন্য আসতেন। একপর্যায়ে কারারক্ষী রবিউলের সাথে বাদীর পরিচয় হওয়ার পর আসামি নিজে যেয়ে বাদীকে তার স্বামীর সাথে দেখা করানো, খাবার-কাপড়-ওষুধ পৌঁছে দিতে সাহায্যের আশ্বাস দেয়। আসামি বাদীর শ্বশুর বাড়ির এলাকার লোক বলে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে স্বামীর খবরাখবর জানানোর জন্য বাদীর মোবাইল নাম্বার নেয়। এরপর থেকে যখনই বাদী স্বামীর সাথে দেখা করতে আসতো তখনই আসামি তাকে বিভিন্ন প্রকার প্রলোভন দেখিয়ে আরো ঘনিষ্ঠ ও কাছাকাছি আসার চেষ্টা করতে থাকে। এরপর থেকে আসামি বাদীকে বর্তমান প্রেক্ষাপটে তার স্বামীর ওপর নানা রকম নতুন-নতুন মামলায় আসামি করা, হাজতে ডান্ডাবেরী পরানোসহ বিভিন্ন প্রকার বিপদের কথা বলে মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলে। এই দুর্বলতার সুযোগে আসামি বাদীর দিকে অশোভন দৃষ্টিতে তাকানোসহ অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ইঙ্গিত দিতে থাকে। বাদীর স্বামীকে বয়রায় নতুন কারাগারে প্রেরণ করে শারীরিক নির্যাতন ও কনডেম সেলে আটকসহ নানাবিধ ভয়ভীতি দেখিয়ে মানসিকভাবে ভীত এবং দুর্বল করে তোলে। গত ২১ মে বেলা সাড়ে ১১টায় নতুন জেলখানায় নিয়ে গেলে কিভাবে এবং কোথায় দেখা করতে হবে বলে বাদীকে আসামি সেখানে নিয়ে যাওয়ার পথে ইজিবাইকে থাকাকালীন আসামি বাদীর অগোচরে তাদের দু’জনের কিছু ছবি ধারণ করেন এবং নানা রকম অশোভন কথা ও বাদীর শরীরের গোপন জায়গায় স্পর্শ করলে বাদী তাৎক্ষণিক বাধা দেয়। এরপর কারাগারের এক ফাঁকা কক্ষে নিয়ে আসামি বাদীকে জোরপূর্বক জড়িয়ে ধরে চুম্বনরত অবস্থায় ছবি তোলে এবং শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে বিবস্ত্র করার চেষ্টা করে। এ সময় বাদী প্রাণপণ চেষ্টায় নিজেকে মুক্ত করে নিজ বাড়িতে চলে আসে। এরপর থেকে বাদী নিরবে আসামির অশোভন ও নোংরা কথাবার্তা মুখ বুজে শুনে স্বামীর সাথে দেখা করতে আসা বন্ধ করে দেয়।
এরপর ২৮ মে বাদীর স্বামী জামিনে মুক্তি পেয়ে খুলনার বাইরে গেলে তাকে আসামি হুমকি দিতে থাকে এবং বাদীকে জড়িয়ে মিথ্যা ছড়িয়ে তার সাথে অনৈতিক সম্পর্কের দাবি করে। আসামি বারবার বাদীকে কল করে বিরক্ত করতে থাকে। এমনকি বাদীর স্বামীর মোবাইলে আসামি তার নিজের নগ্ন ছবি দিতেও দ্বিধা বোধ করেন না। বাদী তার স্বামীর সাথে আলোচনা করে ডুমুরিয়া থানায় মামলা করতে গেলে মামলা গ্রহণ না করায় তারা আদালতে মামলা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
সূত্রঃ খুলনা প্রতিদিন