
অনলাইন ডেস্কঃ
দিনটা চব্বিশের পহেলা আগস্ট হলেও কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছাত্র-জনতার কাছে তখনও জুলাই চলমান। তাই তারিখ, ৩২ জুলাই। শিক্ষার্থী-শিল্পী-জনতা-শিক্ষক সবাই প্রতিবাদী। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও আন্দোলনে মুখর সারাদেশ। শেখ হাসিনার ক্ষমতার ভীত চরমভাবে কেঁপে ওঠে এদিন। সমন্বয়কদের মুক্তি দিয়ে সরকার কিছুটা নরম করে সুর। তবে, দেশজুড়ে চলতেই থাকে ছাত্র-জনতার প্রতিবাদ।
ছাত্র আন্দোলনে গুলি-হামলার প্রতিবাদে এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশ ও মিছিল করেন শিক্ষকরা। অভিযোগ করেন, যারা গুলি করেছে- তাদের বিচার না করে উল্টো গ্রেফতার ও হেনস্তা করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
দেশের শিক্ষক সমাজের সাথে একাট্টা হয় শিল্পী সমাজও। কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির সাথে সংহতি প্রকাশ করে রাজধানীর ফার্মগেটে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে দৃশ্যমাধ্যম শিল্পী সমাজ। দেশে হত্যা-সহিংসতা-গণগ্রেফতার ও হয়রানির প্রতিবাদ জানান তারকারা।
তবে এদিন শিল্পী সমাজের বিপরীত চিত্রও দেখেছে দেশ। ‘সকল সহিংসতার বিরুদ্ধে আমরা’ এই ব্যানারে প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড হাতে বিটিভি ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে শিল্পীদের একটি অংশ। দাবি করেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনাকে মুছে দিতেই পরিকল্পিতভাবে হামলা-সহিংসতা করছে একটি গোষ্ঠী।
এদিন সন্ত্রাস বিরোধী আইনে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবেই জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে জানান তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষকরা। শেখ হাসিনা বলেন, রাজনীতি নিষিদ্ধের পর জামায়াত-শিবির জঙ্গিবাদী হিসেবে আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে ধ্বংসাত্মক কাজ করার চেষ্টা করবে।
১ আগস্টেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, দেখামাত্র গুলির নির্দেশনা সরকার দেয়নি বলে মিথ্যাচার করেন। অথচ কারফিউ জারির প্রথম দিনেই তিনি বলেছিলেন, দেখামাত্র গুলির নির্দেশনা দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
অন্যদিকে, এক সপ্তাহ পর এদিনে ৬ সমন্বয়ককে ডিবি নিজস্ব পরিবহনে বাসায় পৌঁছে দেয়। জানায়, গেল ২ দিন কোন কিছু না খেয়ে অনশনে ছিলেন ৬ সমন্বয়ক। এদিকে অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদকে বদলি করা হয় ডিবি থেকে।
৬ সমন্বয়কের মুক্তির দাবিতে এদিন ডিবি কার্যালয়ের সামনে হাজির হয়েছিলেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। গোয়েন্দা কার্যালয় গিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়ার খবরে স্বস্তি জানান তারা।
এদিন জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন পাঠানোর প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এ কথা জানান তখনকার পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
প্রতিটি হত্যা-সহিংসতার বিচার বিভাগীয় তদন্তের ঘোষণা দেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত। তবে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা সাফ জানিয়ে দেন, লাশের কারবালায় দাঁড়িয়ে সরকারের ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘৭১ এ পাকিস্তানিরা যেভাবে নির্যাতন চালিয়েছে- সেভাবেই এখন নির্যাতন চলছে।
এমন অস্থিরতায় ১০ আগস্ট পর্যন্ত এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত রাখে সরকার। আর আন্দোলন ঘিরে সব হত্যার দ্রুত বিচারের দাবি জানায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।
এদিন ‘রিমেম্বারিং দ্যা হিরোস’ নামে নতুন কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। নতুন কর্মসূচিতে গ্রাফিতি, দেয়াল লিখন, ফেস্টুন তৈরি, ডিজিটাল পোট্রের্ট তৈরির পাশাপাশি ছিল প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক আয়োজন। আর চলমান থাকে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’।