
অনলাইন ডেস্কঃ
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির ওপর সম্পূরক শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণের সংবাদকে ‘দেশের জন্য ভালো খবর’ অভিহিতি করে এজন্য অন্তবর্তীকালীন সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার (১ আগস্ট) বিকালে উত্তরার আজমপুরে এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এই প্রতিক্রিয়া জানান।
তিনি বলেন, ‘আজ একটা ভালো খবর আছে…কয়েক দিন আগে আপনারা দেখেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পণ্যের ওপর ট্যারিফ আরোপ করেছে। ট্যারিফ কী জানেন? আমরা যেসব পণ্য রপ্তানি করব, তার ওপরে ৩৫ ভাগ ট্যাক্স নিয়ে নেবে। অর্থাৎ আমাদের যে জিনিসটার দাম ৫০ টাকা, ওটার সাথে আরও ৩৫ টাকা যোগ হবে…তার মানে ১০০ টাকার জিনিস ১৩৫ টাকা দাম হবে। ফলে আমাদের জিনিসটা আর বিক্রি হবে না।’
‘ওটাকে (যুক্তরাষ্ট্র ট্যারিফ) আমাদের পররাষ্ট্র দপ্তর ও উপদেষ্টারা আলোচনা করে কমিয়ে ২০ শতাংশ পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। সে জন্য আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তারা একটা বড় দায়িত্ব পালন করেছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে…অনেকে অনেক কথা বলেন, অনেক ভুল আছে, ত্রুটি আছে, অভিজ্ঞতা নাই বেশি। আমি আশা করেছিলাম যে এক বছরের মধ্যে আমাদের যারা শহীদ হয়েছে, প্রকৃত তালিকা করে তাদের পরিবারের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে। দুর্ভাগ্য, তারা পুরোটা করতে পারেনি। কিন্তু তারা চেষ্টা করছে।’
‘গতকালই এই যে সংস্কারের যে বৈঠক সেই বৈঠকে গতকালই এই যে সংস্কারের যে বৈঠক সে বৈঠক গতকাল শেষ হয়েছে। আমরা আশা করছি, দুই এক দিনের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট আসবে।’
উত্তরার আজমপুরে আমির কমপ্লেক্সের সামনে মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শহীদদের স্মরণে এই সমাবেশ হয়।
নির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সবচেয়ে বড় ক্রাইসিস হচ্ছে যে ঘোষণা আমাদের প্রধান উপদেষ্টা দিয়েছেন যে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হবে। এই নির্বাচনটা আমরা চাই, দেশের মানুষ চায়, দেশের মানুষ একটা নির্বাচিত সরকারের অধীনে দেশ পরিচালনা করতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘আমার তো যাওয়ারই জায়গা নাই। এখন আমার কোনো সমস্যা হলে আমি কার কাছে যাব? কোনো এমপি নাই। তাহলে আমি যাব কার কাছে? আমার সমস্যাটা পার্লামেন্টে কে তুলে ধরবে? লোক নাই। কে পার্লামেন্টে আমার দাবি নিয়ে কথা বলবে? লোক নাই। এ জন্যই আমাদের দ্রুত নির্বাচন দরকার, খুব দ্রুত পার্লামেন্ট দরকার। যে পার্লামেন্টে আমরা আমাদের কথাগুলো বলতে পারব।’
লুটেরাদের সঙ্গে কোনো আপস নয় উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটা বিরাট ও ভয়ংকর ফ্যাসিবাদের হাত থেকে আমরা আপাতত মুক্তি পেয়েছি। এই মুক্তি তখনই চূড়ান্ত হবে যখন তাদের আমরা রাজনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারব।’
‘যারা লুটপাট করে, যারা ব্যাংক লুট করে, যারা চাঁদাবাজি করে, যারা মানুষের সম্পত্তি দখল করে নিয়ে যায় তাদের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো রকমের আপস থাকবে না। তাদের আমরা কখনোই স্বীকার করব না এবং তাদের আমরা কোনোমতেই সামনে আসতে দেব না।’
তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়ার ওপরে যে আস্থা রেখেছিল জনগণ, একইভাবে আজ তারা তারেক রহমান সাহেবের ওপর আস্থা রাখছে। অপেক্ষা করছি, কবে তারেক রহমান সাহেব দেশে আসবেন। কবে নেতৃত্ব দেবেন? আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করছি, যে তারেক রহমান সাহেব অতি দ্রুত দেশে আসেন আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে নেতৃত্ব দেন, সেটাই আমাদের কামনা।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব বারবার ও প্রতিদিন কথা বলছেন। প্রতিদিন তিনি বিভিন্ন জায়গায় মিটিং করছেন। তিনি বলছেন যে আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ তৈরি করব। যে বাংলাদেশে সব মানুষের সমান অধিকার থাকবে, যে বাংলাদেশে মানুষ ভোট দিতে পারবে, যে বাংলাদেশে সাধারণ গরিব মানুষ গরিব থাকবে না, আস্তে আস্তে সে উন্নতির দিকে যাবে এবং বারবার করে বলেছেন যে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা হবে।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আগামীতে তারেক রহমান নতুন বাংলাদেশ গড়তে প্রান্তিক মানুষের জন্য ফারমার্স কার্ড, হেলথ কার্ড, ফ্যামিলি কার্ড ইত্যাদি পরিকল্পনা নিয়েছেন।’
ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হকের সভাপতিত্বে যুগ্ম আহ্বায়ক এবিএমএ আবদুর রাজ্জাকের সঞ্চালনায় বিএনপি চেয়ারপারসনের ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মনি, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান বর্ষপূর্তি পালন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুল আলম নিরব, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, যুব দলের নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজিব আহসান, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, জাসাসের হেলাল খান, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব মোস্তফা জামান, যুগ্ম আহ্বায়ক এসএম জাহাঙ্গীরসহ শহীদদের পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য রাখেন।