
অনলাইন ডেস্কঃ
১০ কোটি চাঁদা না পেয়ে একটি গোষ্ঠী জনকণ্ঠ ভবন দখল করেছে। তারা পেশীশক্তি ও মবোক্রেসির মাধ্যমে ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতদের বের করে দিয়ে প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ভবনে দফায় দফায় ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটতরাজ চালিয়েছে। সোমবার নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) এর কাছে পাঠানো চিঠিতে এমন অভিযোগ করেছেন দৈনিক জনকণ্ঠের সম্পাদক শামীমা এ খান।
তবে এ অভিযোগের পুরোটাই ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন পত্রিকাটির সাংবাদিক ও কর্মচারীরা। একই সঙ্গে তারা মালিকপক্ষকে ‘ট্যাগ’ লাগানোর অপচেষ্টা থেকে সরে এসে পত্রিকাটির সাবেক ও বর্তমান সাংবাদিক ও কর্মচারীর বেতন বকেয়া পরিশোধে আল্টিমেটাম দিয়েছেন। গতকাল রাজধানীর ইস্কাটনে পত্রিকাটির নিজস্ব ভবনে সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব কথা জানান।
নোয়াবকে চিঠি
নোয়াবকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ভবন ও পত্রিকা দখলের নেপথ্যে নেতৃত্ব দিয়েছেন জনকণ্ঠের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) আফিজুর রহমান। এছাড়া প্রকাশ্যে নেতৃত্ব দিয়েছেন প্ল্যানিং এডিটর জয়নাল আবেদীন শিশির, উপদেষ্টা সাবরিনা বিনতে আহমেদ, ডেপুটি চিফ রিপোর্টার ইসরাফিল ফরায়েজী, অনলাইন চিফ ফুয়াদ হাসান, ডিজিটাল প্রধান নুরুজ্জামান, সিনিয়র রিপোর্টার আবদুর রহিম, সিকিউরিটি ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আহমেদ প্রমুখ।
এতে আরও বলা হয়, গত ১ আগস্ট রাতে আফিজুর রহমানের পরামর্শে ও তার সহযোগীরা দৈনিক জনকণ্ঠের অনলাইনে পরিকল্পিতভাবে টেমপ্লেট লাল থেকে কালো করে। এর আগে গত জুন থেকে প্ল্যানিং এডিটর জয়নাল আবেদীন শিশিরের মাধ্যমে তারা সম্পাদকের কাছে ১০ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে। দফায় দফায় চেষ্টা চালিয়ে তারা চাঁদা আদায় করতে না পেরে মব সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই এ কাজ করেছে। পরদিন ২ আগস্ট সম্পাদকের নির্দেশে জনকণ্ঠ পত্রিকার মলাট জুলাই আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে লাল রঙে প্রকাশ করা হয়।
চিঠিতে বলা হয়, জানা গেছে সিওও অবসরপ্রাপ্ত মেজর আফিজুর রহমান নানা অপকর্মের অভিযোগে সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত ছিলেন। জয়নাল আবেদীন শিশির এনসিপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এছাড়া সাবরিনা বিনতে আহমেদ বিএনপির একজন নেতার স্ত্রী।
শামীমা এ খান বলেন, ‘গোষ্ঠীটি জনকণ্ঠ ভবনে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার পর উল্টো আমি এবং আমার দুই সন্তান যারা এ শিল্প পরিবারের ভাইস চেয়ারম্যান তাদের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় একটি মামলা করেছে। আমি এবং আমার দুই সন্তানকে জনকণ্ঠ ভবন থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। একটি সম্পাদকীয় পরিষদ গঠন করেছে। দেশের সংবাদপত্র জগতের ইতিহাসে এটি অন্যায় অপকর্ম এবং দেশের প্রচলিত আইনের ক্ষেত্র একটি বিরল ঘটনা।’ তিনি নোয়াবের মাধ্যমে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ৮ দফা দাবি
সংবাদ সম্মেলনে পত্রিকাটির সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য ও ডেপুটি চিফ রিপোর্টার ইসরাফিল ফরাজি ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জনকণ্ঠের অফিসিয়াল হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থাকার পরও ৩১ জুলাই রাতে ‘২৫ আগস্ট’ নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলা হয় গ্লোব-জনকণ্ঠ শিল্প গ্রুপের ভাইস-চেয়ারম্যান জিশাল এ খানের নির্দেশে। এরপর রিপোর্টিং, অনলাইন ও মাল্টিমিডিয়ায় কর্মরত সব সাংবাদিককে গ্রুপে যুক্ত করে নিউজ ফেসবুকে আপলোডের ক্ষেত্রে টেমপ্লেট কালো করতে অনলাইন বিভাগকে নির্দেশ দেন তিনি। মূলত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল গ্রুপে সজীব ওয়াজেদ জয়ের আগস্ট মাসে কালো ব্যাচ ধারণের কর্মসূচির সঙ্গে সমন্বয় করে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ বিষয়ে কয়েকজন সাংবাদিক কারণ জানতে চাইলে তাদেরকে চাকরি থেকে ছাঁটাইয়ের হুমকি দেওয়া হয়।
ইসরাফিল ফরাজি বলেন, এ ঘটনার প্রতিবাদে এবং রক্তাক্ত জুলাই আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের স্মরণে আমরা পরদিন পত্রিকার কভার পেজ লাল করি, সবার সম্মিলিত পরামর্শে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ২ জুলাই ২০ সাংবাদিককে চাকরি থেকে বহিষ্কার করে মালিকপক্ষ।
সংবাদ সম্মেলনে ডিইউজের কোষাধ্যাক্ষ খন্দকার আলমগীর বলেন, ‘কোনো প্রতিষ্ঠান দখল করা সাংবাদিক ইউনিয়নের কাজ না। আমরা এসেছি আমাদের সহকর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে। বিগত সময়ে অনেক গণমাধ্যম জুলাই আন্দোলনের বিরুদ্ধে ভূমিকা রেখেছে, কিন্তু সে সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়নি। সেখানে আমাদের সহকর্মীরা কাজ করছেন, তাদের পরিবার আছে। আমরা চাই জনকণ্ঠের মালিকপক্ষের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। এই প্রতিষ্ঠানে পূর্বে ও বর্তমানে আমাদের যে সব সহকর্মী দীর্ঘ ১০-১২ মাস যাবত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না, অবিলম্বে তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হোক।’
এ সময় বিএফইউজে’র সাংগঠনিক সম্পাদক এরফানুল হক নাহিদ বলেন, এই প্রতিষ্ঠানে একসঙ্গে ৩০ জন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। সংবাদপত্রের ইতিহাসে একসঙ্গে ৩০ সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করার নজির নেই, যদি লে-অফ না করা হয়। প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে বন্ধ করে দেওয়ার জন্য। প্রতিষ্ঠানে সংবাদকর্মীদের প্রায় ১৫ কোটি টাকা বকেয়া। বেনিফিটসহ প্রায় ৩০-৪০ কোটি টাকার দায়। যদি বন্ধ করে দেওয়া হয় তারা কোথায় যাবে?
পত্রিকাটির ডিজিটাল টিমের অ্যাডভাইজার ও সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সাবরিনা বিনতে আহমদ সাংবাদিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে ৮ দফা দাবি তুলে ধরেন। এগুলো হলো-চাকরিচ্যুত সব সাংবাদিককে পুনর্বহাল করা, জুলাই বিপ্লবে কালো টেমপ্লেট ধারণ করার জন্য মালিক পক্ষকে শাস্তির আওতায় আনা, মালিকপক্ষের ফ্যাসিবাদী বেশ ধারণের প্রতিবাদে আগামী ৬-৭ আগস্ট প্রিন্ট ভার্সনের পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি, সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রায় ১৫ কোটি টাকা বকেয়া বেতন পরিশোধ করা, সরকার থেকে একজন প্রশাসক নিয়োগ।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাংগঠনিক সম্পাদক এরফানুল হক নাহিদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) কোষাধ্যাক্ষ খন্দকার আলমগীর হোসেন, নির্বাহী সদস্য আব্দুল্লাহ মজুমদারসহ জনকণ্ঠে কর্মরত সাংবাদিকসহ বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।