
অনলাইন ডেস্কঃ
ভারতের বিরুদ্ধে আরও অতিরিক্ত ২৫ ভাগ শুল্ক আরোপ করায় যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ক্ষুব্ধ ভারত। এ জন্য মার্কিন অস্ত্র ও বিমান কেনার পরিকল্পনা স্থগিত করেছে দেশটি।
এ বিষয়টি জানেন এমন তিনজন ভারতীয় কর্মকর্তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ভারত প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংকে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ওয়াশিংটনে পাঠিয়ে কিছু অস্ত্র ক্রয়ের ঘোষণা দেয়ার পরিকল্পনা করেছিল মোদি সরকার। কিন্তু সেই সফর বাতিল করা হয়েছে বলে দু’জন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
এদিকে, ভারতের রাশিয়ান তেল কেনাকে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের অর্থায়ন হিসেবে অভিহিত করে ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ ভাগ শুল্ক আরোপ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর ফলে মার্কিন বাজারে ভারতের রপ্তানির মোট শুল্ক দাঁড়ায় ৫০ ভাগ। যা যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনও বাণিজ্যিক অংশীদারের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্ক নীতি প্রায়ই দ্রুত বদলানোর ইতিহাস রয়েছে এবং ভারত বলেছে, তারা ওয়াশিংটনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, শুল্ক ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের দিকনির্দেশনা পরিষ্কার হলে ক্রয় কার্যক্রম এগোতে পারে, তবে এখনই নয়। লিখিত নির্দেশনা দিয়ে কেনাকাটা স্থগিত করা হয়নি, অর্থাৎ দিল্লি চাইলে দ্রুত সিদ্ধান্ত বদলাতে পারে, তবে আপাতত কোনও অগ্রগতি হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আরেক কর্মকর্তা।
রয়টার্স প্রথমবারের মতো জানাচ্ছে যে, জেনারেল ডায়নামিক্স ল্যান্ড সিস্টেমসের তৈরি স্ট্রাইকার কমব্যাট ভেহিকল এবং রেথিয়ন ও লকহিড মার্টিনের যৌথভাবে তৈরি জ্যাভলিন অ্যান্টি-ট্যাংক ক্ষেপণাস্ত্র কেনার আলোচনা শুল্কের কারণে স্থগিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত ফেব্রুয়ারিতে এসব সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় ও যৌথ উৎপাদনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। রাজনাথ সিং তার স্থগিত সফরে ভারতের নৌবাহিনীর জন্য ছয়টি বোয়িং পি৮আই নজরদারি বিমান ও সহায়ক ব্যবস্থা কেনার প্রায় ৩.৬ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি ঘোষণা করার পরিকল্পনাও করেন। আলোচনাগুলো ছিল চূড়ান্ত পর্যায়ে।
চীনকে মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা সম্পর্ককে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম সাফল্য হিসেবে দেখা হয়েছিল। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক দেশ ভারত দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল ছিল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফ্রান্স, ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনার দিকে ঝুঁকেছে তারা। রাশিয়ার অস্ত্র রপ্তানির সক্ষমতা ইউক্রেন যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং পশ্চিমা বিশ্লেষকদের মতে কিছু রাশিয়ান অস্ত্র যুদ্ধক্ষেত্রে খারাপ পারফর্ম করেছে।
মার্কিন-ভারত গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় ও যৌথ সামরিক মহড়া স্বাভাবিকভাবেই চলছে বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা। ভারত রাশিয়ান তেলের আমদানি কমিয়ে আনার জন্যও উন্মুক্ত, যদি যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য কোথাও থেকে একই দামে জোগাড় করা যায়। তবে রাশিয়ার তেলের ডিসকাউন্ট ২০২২ সালের পর থেকে সর্বনিম্নে নেমেছে।
ট্রাম্পের হুমকি ও ভারতে বাড়তে থাকা মার্কিনবিরোধী মনোভাব মোদির জন্য রাশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সরাসরি ঝুঁকে পড়া রাজনৈতিকভাবে কঠিন করে তুলেছে বলে এক কর্মকর্তা জানান।
সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে, রাশিয়া ভারতকে নতুন অস্ত্র প্রযুক্তি যেমন এস-৫০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার প্রস্তাব দিয়েছে, যদিও ভারত আপাতত নতুন রাশিয়ান অস্ত্র কেনার প্রয়োজন দেখছে না। তবে দীর্ঘদিনের প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্বের কারণে ভারতীয় সামরিক ব্যবস্থাগুলো রাশিয়ার সহায়তা ছাড়া চলতে পারবে না, বলে জানান এক কর্মকর্তা।