
অনলাইন ডেস্কঃ
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে রমজানের আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণার পর মিত্রদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে বিএনপি। শনিবার (৯ আগস্ট) দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে ১৮টি দলের নেতারা অংশ নেন। রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে নির্বাচনসহ সাম্প্রতিক নানা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। এতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি আগামী দিনে একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে নেতাদের উদ্দেশে বলেন, আমরা যারা বিগত দিনে ঐক্যবদ্ধ ছিলাম। আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ছিলাম। জনগণের ভোটে যদি বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় যায় তাহলে সবাইকে নিয়েই জাতীয় সরকার গঠন করা হবে।
প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের রায়ে আমরা বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারব। পাশাপাশি নির্বাচনের বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে এমন বক্তব্য ও বিবৃতি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
দ্বিতীয় দিনে বৈঠকে ১৮টি দল ও জোটের মধ্যে প্রথমে জন অধিকার, পিপলস পার্টি, ন্যাপ ভাসানী, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, সাড়ে ৫টায় আমজনতা দল ও গণফোরাম, সন্ধ্যা ৬ টায় এনডিএম, সাড়ে ৬ টায় গণ অধিকার পরিষদ, সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তারেক রহমান সমমনা দল ও জোটগুলোকে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামার আহ্বান জানিয়েছেন বলে জানা গেছে।
তারেক রহমান ছাড়াও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু আলোচনায় অংশ নেন।
তাদের একজন নাম প্রকাশ না করে বলেন, সমমনা দল ও জোটগুলোকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, যার যার অবস্থান থেকে সর্বশক্তি নিয়ে এখন মাঠে নামতে হবে। ৩১ দফাকে জনগণের সামনে নিয়ে যেতে হবে। নির্বাচনে এটিই জনগণের কাছে তাদের প্রতিশ্রুতি।
বৈঠকের বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির মহাসচিব আব্দুল মতিন সাউদ জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে আমরা যেমন ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, আগামী দিনেও আমাদের তেমন ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কেউ যাতে আমাদের ঐক্য ফাটল ধরাতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
তিনি জানান, তারেক রহমান বলেছেন, জনগণের ভোটে বিএনপি রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব পেলে সবাইকে নিয়েই সরকার গঠন করা হবে। মতভিন্নতা থাকলেও জাতীয় স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
এনডিএম মহাসচিব মোমিনুল আমিন জানান, ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্য যাতে অটুট থাকে সেইদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কেউ যাতে নির্বাচনের এমন কোন বক্তব্য ও বিবৃতি না দেয়, যাতে নির্বাচনে বিরূপ প্রভাব পড়ে।
বৈঠক সূত্র জানায়, আলোচনায় বিএনপির সমমনা দল ও জোটের পক্ষ থেকে নির্বাচন সামনে রেখে তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। তার উদ্দেশ্যে বলা হয়, আগামী নির্বাচন জোটগত বা যেভাবেই হোক, সেখানে যেন শরিকদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়। তবে নির্বাচনে শরিকদের জন্য আসন বণ্টন নিয়ে কিছু বলেননি তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যুগপৎ আন্দোলনে যারা ছিল, বিগত দিনগুলোতে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে যারা ঐক্যবদ্ধ থেকেছে, আগামী দিনেও তারা যেন সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকে।
বৈঠক অংশ নেওয়া গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন বলেন, আমরা বলেছি, ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্যর মধ্যে ফাটল ধরলে আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদ একে অপরের বিরুদ্ধে কথা বললে ঐক্য ফাটল ধরবে। এই মুহুর্তে দলগুলোর মধ্যে ফাটল-বিভক্তি দেখা যাচ্ছে। সামনে এই দ্বন্দ্বে সুযোগ সংঘাত হতে পারে। সবার মধ্যে একতা, ছাড় দেওয়ার মানসিকতা, একসঙ্গে পথ চলে আগামীর বাংলাদেশ নির্মাণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের আসন বন্টন নিয়েও কোনো আলোচনা হয়নি।