
দেখতে দেখতে সময় চলে যায়। সাত বছর হয়ে গেলো সারোয়ার ভাই চলে যাওয়ার। এই পেশায় আসার আগেই একজন সফল বার্তা সম্পাদকের নাম শুনতাম, তিনি গোলাম সারোয়ার । দৈনিক ইত্তেফাকে টানা বার্তা সম্পাদক ছিলেন। তারপর যুগান্তর ও সমকালের সফল সম্পাদক ।
সারোয়ার ভাইয়ের সঙ্গে আমার সরাসরি কাজ করা হয়নি। তবে সম্পাদক পরিষদে এক সঙ্গে ছিলাম। সরোয়ার ভাই সভাপতি , মাহফুজ আনাম সাধারণ সম্পাদক । সেই কমিটিতে আমিও ছিলাম। পরের কমিটিতে মাহফুজ আমান সভাপতি , আমি সাধারন সম্পাদক । সরোয়ার ভাই বৈঠকে যাওয়ার আগে ফোন দিতেন। বলতেন, এই বিষয়ে আলোচনা হবে। তুমি ভুমিকা রাখবে।
এর বাইরে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় তিনি ফোন করতেন। একবার সাংবাদিকদের সম্মানে বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়ার ইফতারের দাওয়াতে যাওয়ার আগে তিনি ফোন দিলেন। বললেন, তুমি যাবে? বুলবুল যাবে বলেছে। আমি বললাম আমিও যাব । দেখা হবে। আমরা গেলাম। সেই ইফতারের ছবি কিছু অতি উৎসাহি ভাইরাল করলেন । পরের বছর তিনি বললেন, যাবে তো ? জবাবে বললাম , অবশ্যই।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে ভোট ছাড়া কমিটিতে ইকবাল সোবহান চৌধুরী, শওকত মাহমুদ , রুহুল আমীন গাজী ভাইসহ দুই দিকের সকল নেতা সিদ্ধান্ত নিলেন ভোট বিহীন কমিটি করবেন দুই পক্ষের দুই জনকে নিয়ে। তারা সভাপতি পদে গোলাম সারোয়ার , কামরুল ইসলাম চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করার মত দেন । সেই দিন সারোয়ার ভাইকে বললাম , আপনি এমন কমিটির সভাপতি হবেন না। সেই দিন সম্পাদক পরিষদের বৈঠক ছিল। বৈঠকে সবার সামনে বললাম আপনি এমন ভোটহীন কমিটি যাবেন না। তিনি মাথা নাড়লেন।
তিনি হলেন না। পরে সদস্য পদে তার নাম দেখে ফোন করতেই বললেন , ইকবাল সাহেব রেখে দিয়েছে। কিছু করার ছিলো না।
প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে ২০১৭ সাল পর্যন্ত আমি যেতাম না। সারোয়ার ভাইকে বললাম আপনি কেন যান ? আপনি যাওয়ার কারণে আমরা চাপে থাকি । তিনি বললেন, ওরা সিনিয়রদের চায়। একবার ওনার বক্তব্য শুনে বললাম , এমনভাবে প্রশংসা করা যাবে না। প্রশ্ন করবে রিপোর্টার । বড় মনের মানুষটি যেকোন সমালোচনা নিতে পারতেন। জুনিয়রদের কাছ থেকে শুনতেন। কোন অহমিকা ছিলো না। যুক্তি দিয়ে পাল্টা কথা বলতেন। শিক্ষকের মতো ধৈর্যশীল ছিলেন।
সারোয়ার ভাইর শখ ছিলো মাছ কেনা। খেতে ও খাওয়াতে পছন্দ করতেন।
মৃত্যু বার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধা
সারোয়ার ভাই।
লেখক: নইম নিজামের ওয়াল থেকে, সাবেক সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন, লেখক, কলামিস্ট, সিনিয়র সাংবাদিক