
অনলাইন ডেস্কঃ
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আলাস্কায় পৌঁছার পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়। রুশ বিমান থেকে নেমে লাল কার্পেট দিয়ে হেঁটে অপেক্ষারত ট্রাম্পের সঙ্গে করমর্দন করেন পুতিন। এ সময় হাস্যোজ্জ্বল ছিলেন দুই নেতা। এরপরই তারা একসঙ্গে হাঁটতে শুরু করেন।
ঠিক সে সময় বিকট গর্জনে কেঁপে উঠলো আকাশ-বাতাস। হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেলেন রুশ প্রেসিডেন্ট। এরপর তাকালেন আকাশের দিকে। বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি রাষ্ট্রের একজন প্রেসিডেন্টের হঠাৎ করে বিচলিত হয়ে থমকে যাওয়া সেভাবে দেখা যায়নি কখনো।
বিশেষ করে ঠান্ডা মস্তিষ্কের নেতা হিসেবে পরিচিত পুতিনের এমন আচরণ তেমন চোখে পড়েনি এর আগে। যদিও এরপরই ট্রাম্প পুতিনের কাছে গিয়ে হাসিমুখে কিছু বললেন। এরপর আবার স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে শুরু করেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
অন ক্যামেরায় ধরা পড়া এই ঘটনার পর বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে বিশ্বজুড়ে। কারণ, আলাস্কার আকাশে ওই সময় উড়ছিল ভয়ংকর ও রহস্যময় যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক বি-২ বোমারু বিমানের বহর, যেটি সর্বশেষ ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ও বাঙ্কার ধ্বংসে ব্যবহার হয়েছিল। এরপরই বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আলোচনায় আসে ব্যয়বহুল এই সমরযানটি। বি-২ যুদ্ধবিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় প্রবেশ করতে এবং কঠিন লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুলভাবে আঘাত করতে সক্ষম।
২২ সেকেন্ডের একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে, আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজ শহরের এলমেনডর্ফ-রিচার্ডসন জয়েন্ট বেসে মঞ্চের দিকে লাল গালিচা বেয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পুতিন-ট্রাম্প, ঠিক তখনই বি-২ বোমারু বিমান এবং যুদ্ধবিমান তাদের ওপর দিয়ে উড়ে যায়। বোমারু বিমানটির গর্জনে থমকে গিয়ে ওপরের দিকে তাকাতে থাকেন পুতিন। মূলত তাকে সংবর্ধনা দিতেই এমন উদ্যোগ নেয় যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন বি-২ বিমানের প্রতিটির দাম প্রায় ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার, যা এটিকে এখন পর্যন্ত নির্মিত সবচেয়ে ব্যয়বহুল সামরিক বিমানে পরিণত করেছে। নর্থরপ গ্রুমম্যান নির্মিত অত্যাধুনিক স্টিলথ প্রযুক্তির এই বোমারু বিমানটি ১৯৮০ সালের শেষের দিকে উৎপাদন শুরু করে, কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের ফলে তা বন্ধ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত মাত্র ২১টি এ ধরনের সমরযান বহরে যুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র।
একবার জ্বালানি নিয়ে বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান ৬ হাজার নটিক্যাল মাইল (১১,১১২ কিমি) এর বেশি দূরে যেতে সক্ষম। অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী হামলার ক্ষমতা রাখে এই যুদ্ধযান। আকাশে জ্বালানি ভরার মাধ্যমে, বি-২ বিশ্বব্যাপী কার্যত যেকোনো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে, যেমনটি আফগানিস্তান, লিবিয়া এবং এখন ইরান পর্যন্ত অভিযানে দেখানো হয়েছে।
৪০,০০০ পাউন্ডের (১৮,১৪৪ কেজি) বেশি ওজনের এই বিমানের পেলোড ক্ষমতার কারণে এটি বিভিন্ন ধরনের প্রচলিত সমরাস্ত্র এবং পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে পারে। বিমানটি ১৬টি বি-৮৩ পারমাণবিক বোমা বহন করতে পারে। বোমারু বিমানের অভ্যন্তরীণ অস্ত্রের বে বিশেষভাবে স্টিলথ বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে ডিজাইন করা হয়েছে।
একই সঙ্গে এটি বৃহৎ অর্ডন্যান্স লোডও বহন করতে পারে, যার মধ্যে দুটি অত্যধিক ওজনের জিবিইউ-৫৭এ/বি বাঙ্কার বাস্টার বোমা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। গত জুনে ইরানের ফোর্ডো গবেষণা সাইটে এ ধরনের ছয়টি বাঙ্কার বাস্টার বোমা ব্যবহার করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে কিয়েভে মস্কোর আক্রমণের মাধ্যমে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত শুরু হয়। এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং মস্কো এখনও এই যুদ্ধ থেকে পিছু হটেনি। এটি বিগত ৮০ বছরের মধ্যে ইউরোপের সবচেয়ে মারাত্মক সংঘাতগুলোর মধ্যে একটি।
তবে আশা করা হচ্ছিল ট্রাম্প-পুতিনের বৈঠকের পর এই যুদ্ধ বন্ধে স্থায়ী কোনো সমাধানের পথ খুলবে। কিন্তু উভয় পক্ষ আলোচনাকে ইতিবাচক বললেও কোনো চুক্তি বা যুদ্ধ বন্ধে কোনো পদক্ষেপ আসেনি এই বৈঠক থেকে।
সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস, এনডিটিভি