
অনলাইন ডেস্কঃ
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ কারণে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগের চেয়ে বেশিসংখ্যক সেনা মোতায়েন করা হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
গতকাল রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি, সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাস, প্রবাসীদের ভোটাধিকারসহ নানা বিষয় আলোচনা হয়। বৈঠকে বিএনপির প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ ও দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বৈঠক শেষে এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা যতটুকু নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় বুঝেছি, নির্বাচনী প্রস্তুতি তারা যথাযথভাবে নিচ্ছে। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তাদের কিছুটা উদ্বেগ রয়েছে। আসলে দেশে এখন পুলিশের ভূমিকা তুলনামূলকভাবে দুর্বল—এটা আমরা সবাই জানি কেন হয়েছে। আগের সরকার তাদের এমনভাবে ব্যবহার করেছে যে, আজ তারা নিজেরাই তাদের আচরণের জন্য লজ্জিত। সে কারণেই এই দুর্বলতা তৈরি হয়েছে। তবে এটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে। নির্বাচনের এখনো কয়েক মাস বাকি আছে, তাই এই সময়ের মধ্যে পরিস্থিতিরও কিছুটা পরিবর্তন হবে বলে আমরা আশা করি।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনী এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে সহযোগিতা করছে। নির্বাচন কমিশন থেকে যেটা বলা হলো, নির্বাচনের সময়ে যদি প্রয়োজন হয় তারা আরও বেশিসংখ্যক সেনাসদস্য মোতায়েনের ব্যাপারে অনুরোধ করবেন। সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাগুলোর জন্য কোস্টগার্ড এবং নেভি, তারা যাতে দায়িত্ব পালন করে সে ব্যাপারে কমিশন চেষ্টা করবে। আমরা জানি, নির্বাচন কমিশন কোনো অনুরোধ করলে সরকারকে সেটা রাখতে হয়। কাজেই ওই বিষয়েও আর খুব বেশি দুশ্চিন্তার কোনো কারণ দেখছে না কমিশন।
প্রবাসীদের ভোটাধিকার সম্পর্কে নজরুল ইসলাম খান বলেন, শুধু জাতীয় পরিপত্র (এনআইডি) বা ই-পাসপোর্সধারী নয়, সাধারণ পাসপোর্টধারী প্রবাসীরাও যাতে ভোট দিতে পারে, সে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। আপনারা জানেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভিশন ২০৩০ এবং আমাদের ৩১ দফা কর্মসূচিতে প্রবাসীদের ভোটের অধিকারের কথা বলা আছে। আমরা তাদের সম্পর্কে জানতে চেয়েছি।
এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার পথ রুখতে নির্বাচন কমিশনের করা ‘না’ ভোটের বিধান আনার উদ্যোগ বিএনপির প্রস্তাব নয়। আপনারা জানেন এটা এক-এগারো সরকারের সময়ে এটা ইন্ট্রোডিউস করা হয়েছিল। কিন্তু নিয়ম হলো যে যখন নির্বাচিত সরকার থাকে না বা ইন বিটুইন টু পার্লামেন্ট সেশন রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ করে। সেরকম করে আইন করা হয়েছিল ‘না’ ভোটের বিধান এবং একমাত্র ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই ‘না’ ভোটের বিধানটা কার্যকর ছিল। কিন্তু আপনারা জানেন যে, ‘না’ ভোট খুব একটা পড়ে না আমাদের দেশে। এটা আমাদের কারও দাবির ভিত্তিতে হয়নি। এটা কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তির মতামতের ভিত্তিতে হয়েছিল।
সংসদীয় সীমানা নিয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, কমিশন বলেছে যে, তারা চেষ্টা করেছেন যাতে ভৌগোলিক অখণ্ডতা থাকে, জেলার অখণ্ডতা থাকে, উপজেলার অখণ্ডতা থাকে। এটা তারা মূলনীতি ধরে অগ্রসর হয়েছেন এবং ভোটার সংখ্যার বিষয়টাও তারা বিবেচনায় নিয়েছেন।
নির্বাচন নিয়ে কোনো কোনো দলের নেতারা সংশয় প্রকাশ করছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, সবাই রাজনীতি করেন, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন, যদি মনে করেন ওনারা যদি বলেন নির্বাচন হবে, তাহলে হবে। আর যদি বলেন হবে না, হবে না। এটা তো ভিন্ন কথা আর কী। কিন্তু আমরা তো যতটুকু জানি যে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতি নিচ্ছে।
অনেক রাজনৈতিক দলের নেতারা আসন ভাগাভাগি নিয়ে কথা বলছেন, বিএনপির অবস্থান কী—এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির এই নেতা বলেন, আসন ভাগাভাগির বিষয়ে কোনো আলোচনা আমাদের দলে এখনো হয়নি। আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছিলেন, যারা আমরা যুগপৎ আন্দোলনে একসঙ্গে কাজ করেছি, সবাই মিলে একসঙ্গে থাকব এবং রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে একসঙ্গে সেই দায়িত্ব পালন করব। এখানে আসন ভাগাভাগির কোনো আলোচনা এখনো ফরমালি হয়নি।