
অনলাইন ডেস্কঃ
দেনার টাকা পরিশোধ করতে পূর্ব রূপসার কৃষি ব্যাংক ব্যবস্থাপকের কাছে ১০ লাখ টাকা ঋণের আবেদন করে ইউনুস শেখ। ব্যবস্থাপক সেই ঋণ না দেওয়ায় মনের ক্ষোভে ব্যাংক লুটের পরিকল্পনা করে সে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুযোগ খুঁজতে থাকে ইউনুস। শুক্রবার ভোর ৬টার দিকে প্রহরী ব্যাংক ছেড়ে গেলে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে ইউনুস শেখ।
সোমবার (১৮ আগস্ট) এমনই বিবরণ জানিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে ব্যাংক লুটের প্রধান হোতা ইউনুস শেখ। তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, আমলী আদালত রূপসার বিচারক অনন্যা রায়। জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ প্রদান করেন আদালত।
এর আগে রোববার ভোর রাতে ব্যাংকের চারতলা থেকে ইউনুস শেখকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে পুলিশ তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক বিভিন্ন স্থান থেকে ১ লাখ ৫২ হাজার ৯১০ টাকা উদ্ধার করে।
ইউনুস শেখের জবানবন্দির বরাত দিয়ে রূপসা থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, দেনার দায়ে জর্জরিত ছিলেন ইউনুস শেখ। সেই দেনা পরিশোধের জন্য কৃষি ব্যাংক পূর্ব রূপসার ব্যবস্থাপকের কাছে ১০ লাখ টাকা ঋণের আবেদন করেন ইউনুস। সবকিছু ঠিকঠাক ছিল, কিন্তু ব্যাংক ব্যবস্থাপকের বাধায় সেই ঋণ আর পাওয়া হয়নি। পরবর্তীতে সে টাকা যোগাড় করার জন্য ব্যাংক লুটের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেন। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সুযোগ খুঁজতে থাকে সে। সুযোগও পেয়ে যায় শুক্রবার ভোররাতে। ব্যাংকের নিরাপত্তা প্রহরী না থাকায় নিচের ওয়ার্কশপে গিয়ে প্রথমে গ্রাইন্ডিং মেশিন এনে কলাপসিবলের তালা কেটে ফেলে। তালা কাটতে তার দেড় মিনিটের মতো সময় লাগে। এরপর সে মূল প্রবেশদ্বার ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে।
পরবর্তীতে স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে ভল্ট ভেঙে ফেলে। সেখান থেকে ২০ ও ৫০ টাকার নোটগুলো নিয়ে নেয়। সেগুলো নিয়ে তার তোশকের নিচে রাখে। এরপর আবারও দুপুরে ব্যাংকের মধ্যে প্রবেশ করে। ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোটগুলো লুঙ্গিতে করে তৃতীয় তলার ফাঁকা একটি কক্ষে রেখে দেয়। প্রথম পর্বে নেওয়া টাকাগুলো দিয়ে ইউনুস চালের দোকান, মুদি দোকান এবং বিভিন্ন সমিতির দেনা পরিশোধ করে।
তিনি আরও বলেন, তার শারীরিক অবয়ব কেউ কোনভাবে শনাক্ত করতে না পারে সেজন্য সে হাতে মোজা এবং মুখে পলিথিন পরে। পরবর্তীতে সিসি ফুটেজে তার শারীরিক গঠন দেখে রোববার ভোররাতে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে টাকা লুটের কথা স্বীকার করে। সে টাকাগুলো বিভিন্ন সমিতি এবং দেনা হওয়া দোকানগুলোতে পরিশোধ করে। দু’দিন ধরে বিভিন্ন স্থান থেকে টাকাগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া টাকার পরিমাণ ১ লাখ ৫২ হাজার ৯১০ টাকা।
ইউনুস স্বেচ্ছায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে চাইলে তাকে দুপুর ১টার দিকে আদালতে হাজির করা হয়। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জবানবন্দি শেষ হলে আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পুলিশ বাকী টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করছে।