
অনলাইন ডেস্কঃ
খুলনায় একটি সংঘবদ্ধ চক্র পরিকল্পিতভাবে বিএনপির জনপ্রিয়, সাংগঠনিক নেতাকর্মীদের সামাজিক ও রাজনৈতিক মর্যাদা ক্ষুন্ন করতে অপকৌশল অবলম্বন করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় ওই চক্রটি নামে-বেনামে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে বিএনপি নেতাদের নাম ব্যবহার করে ভুয়া দরখাস্ত দাখিলের অভিযোগ উঠেছে।
এ নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। আবার পুলিশের পক্ষ থেকে ওইসব দরখাস্তের ওপর নির্ভর করে বিশেষ ক্ষমতায় গ্রেপ্তারের জন্য জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মন্ত্রনালয়ের অনুমতি চাওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিএনপি নেতাদের জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে প্রতিপক্ষরা পরিকল্পিতভাবে এসব মিথ্যা দরখাস্ত তৈরি করছে। তারা বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা দাবি ও হুমকির বিষয় উল্লেখ করে পুলিশের শীর্ষকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে খুলনায় বিএনপি নেতাদের জড়িয়ে বিভিন্ন দপ্তরে ভুয়া আবেদন জমা দেওয়ার ঘটনা রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।
স্থানীয় নেতারা অভিযোগ করেছেন, এটি মূলত একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, যাতে জনপ্রিয় নেতাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ানো যায়। অভিযোগপত্রে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে নানা অসঙ্গতি ও অনিয়মের অভিযোগ আনা হচ্ছে। অথচ অনুসন্ধানে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়েছে।
মহানগর বিএনপির এক শীর্ষ নেতা জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি মাঠে নেমেছে। তারা জানে, জনগণ বিএনপির পক্ষেই ভোট দেবে। তাই নেতাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এবং প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করতে এ ভুয়া দরখাস্ত দেওয়া হচ্ছে। জনগণ সব জানে, মিথ্যা আবেদন কিংবা ষড়যন্ত্র করে বিএনপিকে দমিয়ে রাখা যাবে না। ফেব্রুয়ারির নির্বাচন জনগণের ভোটে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের মাইলফলক হবে।
তিনি আরো বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে একটি গোষ্ঠি বিভিন্ন ভূয়া আইডি থেকে নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন। এ ব্যাপারে একাধিক জিডি হলেও কেএমপির সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশরা কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারেনি। বরাবরই তারা ব্যর্থ হচ্ছে। কিন্তু ভূয়া দরখাপস্তের ওপর পুলিশের আন্তরিকতার অভাব নেই। উদাহরণ হিসেবে ওই নেতা বলেন, সম্প্রতি খুলনা সদর থানার সাধারণ সম্পাদক মোল্লা ফরিদ আহমেদসহ কয়েক জনকে বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ এর ৩(২) ধারা মোতাবেক আটকাদেশ প্রস্তাব সংক্রান্ত পত্র প্রেরণ করা হয়েছে মন্ত্রনালয়ে। ওই পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে খুলনা সদর থানায় গত ১২ আগস্ট জিডি নম্বর ৯১২ এবং সোনাডাঙ্গা থানায় ১১ আগস্ট জিডি নম্বর ৭৯০ মোতাবেক মোল্লা ফরিদ আহম্মেদ বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩(২) ধারা মোতাবেক আটকাদেশ প্রদানের প্রস্তাব এ কার্যালয়ে বিবেচনাধীন রয়েছে। ওই আটকাদেশ প্রস্তাবের বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে মতামত প্রয়োজন। অতিরিক্ত জেলা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্বাক্ষরিত গোপনীয় এ চিঠিটি প্রকাশ্যে আসায় নেতাকর্মীদের মধ্যে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এদিকে বিগত ১৪ আগস্ট স্যার ইকবাল রোডের জনৈক ব্যবসায়ীর নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে পুলিশ মহাপরিদর্শক বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন। আবেদনের অনুলিপি সরকারের ১১টি দপ্তরে প্রেরণ করেছেন। কিন্তু ওই ব্যবসায়ী জানান, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে তারা তার নিকট আত্মীয়। সম্পূর্ণ মনগড়া অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। তিনি জানান এ ব্যাপারে তিনি পাল্টা লিখিত দিবেন সকল দপ্তরে।
এসব দরখাস্তের ব্যাপারে খুলনা বিএনপি বলেছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি’র বিরুদ্ধে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। বিএনপি’র নেতাকর্মীদের নামে কুৎসা রটানো হলে তারা ভোটের রাজনীতিতে সুবিধা পাবেন এই উদ্দেশ্যে তারা অপপ্রচার চালাচ্ছে। এছাড়া জনগণের মধ্যে বিএনপির যে সমর্থন রয়েছে, তাতে ঈর্ষান্বিত হয়ে তারা মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের মনোবল ভাঙতে চাইছে।
অপরদিকে শনিবার (২৩ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন উপলক্ষ্যে মহানগর বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের যৌথ সভায় দলটির নেতারা বলেন, খুলনা সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোল্লা ফরিদ আহমেদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং এই অপপ্রচারের অংশ। তারা কোনো প্রকার উস্কানিতে পা না দিয়ে ধৈর্য ও সহনশীলতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। একই সাথে বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে এর পেছনের কুচক্রীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে খুলনা সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোল্লা ফরিদ আহমেদ বলেন, বিগত ১৬ বছর স্বেরাচার শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে রাজপথে ছিলাম। জুলাই অভ্যূত্থানের সময়ে ৪ আগস্ট আওয়ামী লীগ নেতা এড. সাইফুল ইসলাম এর অফিসে ছাত্র-জনতার হাতে আটক এবং নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে ৪জন পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করেছিলামা জীবনের ঝুকি নিয়ে। ৫ আগস্ট পরবর্তী হেলাতলার স্বর্ণ ব্যবসায়ী, বড় বাজারের ব্যবসায়ী, সনাতন ধর্মালম্বীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। অগ্নিসংযোগের হাত থেকে খুলনা সিটি কর্পোরেশনকে রক্ষা করেছি। এগুলোই আমার অপরাধ ছিলো। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আমি কোন ধরণের অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম না। যদি কেউ প্রমান দিতে পারে আমি বিচার মাথা পেতে নিবো। একটি মহল আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রপাগন্ডা ছড়াচ্ছেন। আমার বাসায় কোন ধরণের অভিযান না হওয়া সত্ত্বেও অভিযানের প্রচার করা হয়েছে। ১৬ বছর আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ছিলাম। দলের শীর্ষ নেতারাই সিদ্ধান্ত নিবেন আমার কি করণীয়।
অবশ্য এসব ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হয়নি পুলিশ কোন শীর্ষ কর্মকর্তা। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সহকারী পুলিশ কমিশনার জানান, ভুক্তভোগীর অভিযোগ প্রাথমিক সত্যতা পেলে মামলা হতে পারতো। তিনি বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটকাদেশ প্রস্তাব সংক্রান্ত পত্র প্রেরণ সম্পর্কে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।