
অনলাইন ডেস্কঃ
সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) শুনানিতে মানিকগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ জেলার চারটি আসন পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন প্রতিনিধিরা। অপরদিকে কামরাঙ্গীরচর উপজেলা ছাড়া ঢাকা-২ আসনের সীমানা নির্ধারণের বিষয়ে আপত্তি উঠেছে।
মঙ্গলবার ইসির সংসদীয় আসনের সীমানার খসড়া প্রস্তাবের ওপর তৃতীয়দিনের শুনানিতে এমন পরিস্থিতি দেখা যায়। আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবন মিলনায়তনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদের সঞ্চালনায় শুনানিতে চার নির্বাচন কমিশনার উপস্থিত ছিলেন।
এদিন ঢাকা অঞ্চলের ছয়টি জেলার ২৮টি আসনের দাবি-আপত্তির শুনানি করা হয়। আসনগুলো হলো–মানিকগঞ্জ-১, ২ ও ৩; মুন্সীগঞ্জ-১, ২ ও ৩; নরসিংদী-৩, ৪ ও ৫; গাজীপুর-১, ২ ও ৬; নারায়ণগঞ্জ-৩, ৪ ও ৫ এবং ঢাকা-১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ১০, ১৪, ১৫, ১৬, ১৮ ও ১৯।
ইসির জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক শরিফুল আলম জানান, মঙ্গলবার শুনানিতে ৬টি জেলার ২৫৯টি আপত্তি (বিপক্ষে) এবং ৫০টি পরামর্শসহ (পক্ষে) মোট ৩০৯টি আবেদনের নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
৪ আসন পুনর্বহাল দাবি
২০০১ সালের নির্বাচন পর্যন্ত মানিকগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ জেলায় চারটি করে আসনে ভোট হয়। কিন্তু ২০০৮ থেকে পরের সব নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়েছে তিনটি করে আসনে। এবার ২০০১ সালের সীমানায় ফিরে যাওয়ার দাবি উঠেছে দুই জেলার প্রতিনিধির পক্ষ থেকে।
মঙ্গলবারের শুনানিতে মানিকগঞ্জের প্রতিনিধি খাইরুল আলম চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে চারটি আসন থাকায় মানিকগঞ্জে যে উন্নয়ন বরাদ্দ ছিল, এখন তা কমে গেছে। এ কারণে তারা চারটি আসন বহাল চান।
মুন্সীগঞ্জ নাগরিক অধিকার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক রনি মল্লিক বলেন, মুন্সীগঞ্জের আসন বাড়িয়ে ২০০১ সালের মত চারটি করার দাবি জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে প্রবাসীদের ভোটাধিকারের বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন।
নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীর ক্ষেত্রে যেসব আপত্তি
শুনানিতে নারায়ণগঞ্জের প্রতিনিধি ছিলেন জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মাকসুদুল খন্দকার খোরশেদ, আবদুল কাউছার আশা, শাহাজাহান বেপারী ও মঈনুদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজন। তারা ইসির খসড়ায় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে বন্দর থানার পাঁচটি ইউনিয়ন বাদ দিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও) আসনে যুক্ত করার প্রতিবাদ জানান। তবে সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুর রহিম ইসির প্রস্তাবে সহমত পোষণ করেন। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে প্রায় সবাই মত দেন, নারায়ণগঞ্জের আসন পাঁচটি থেকে বাড়িয়ে ছয়টি করা হলে সব সমস্যার সমাধান হবে।
এদিকে, নরসিংদীর প্রতিনিধিরা নরসিংদী-৩, ৪ ও ৫ আসনে ২০০৮ সালের আগের সীমানা বহাল রাখার দাবি জানান।
কামরাঙ্গীরচর ছাড়া নয় ঢাকা-২
কামারাঙ্গীরচর থানা ছাড়া ঢাকা-২ আসন মানা হবে না বলে শুনানিতে জানান এই আসনের প্রতিনিধিরা। এই উপজেলার ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড ঢাকা-২ আসনের সঙ্গে রাখার দাবি জানান তারা।
অপরদিকে ঢাকা-৭ আসনের প্রতিনিধিরাও তাদের আসনের সঙ্গে কামরাঙ্গীরচরের ৫৫ নম্বর ওয়ার্ড যুক্ত করার দাবি জানান। তারা বলেন, ইসি ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডকে ঢাকা-৭ আসনে যুক্ত করেছে। এখন ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডও যুক্ত করা হলে এই আসন ভৌগলিক ও উন্নয়নের দিক থেকে বেশি সুবিধা পাবে।
শুনানি শেষে ঢাকা-২ আসনের প্রতিনিধি নুরে আলম সিদ্দিকী সোহাগ বলেন, ইসি বৈষম্যমূলকভাবে ঢাকা-২ আসন থেকে পৃথক করে ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডকে ঢাকা-১০ এবং ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডকে ঢাকা-৭ আসনে যুক্ত করেছে। এই তিনটি ওয়ার্ড ঢাকা-২ আসনে রাখতে হবে।
এদিকে, তুরাগকে ঢাকা-১৮ আসন থেকে ঢাকা-১৬ আসনে যুক্ত করার প্রতিবাদ জানান এই এলাকার প্রতিনিধিরা। ঢাকা-১ আসনের প্রতিনিধিরা দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলা নিয়ে আসনটির পুনর্বিন্যাস না করার দাবি জানান। এসব দাবি নিয়ে এলাকাবাসী আজ নির্বাচন ভবনের সামনে মানববন্ধনও করেছেন।
গাজীপুর নিয়ে প্রশংসা
ইসির খসড়ায় ভোটার সংখ্যার সমতা আনতে গাজীপুরে একটি আসন বাড়িয়ে ছয়টি করা হয়েছে। এতে ইসির প্রশংসা করেছেন জেলাটির প্রতিনিধিরা। শুনানি শেষে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ কে এম ফজলুল হক মিলন সাংবাদিকদের বলেন, ইসিকে কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে। ছোটখাটো দু-একটি বিষয়ে ইসি যে সিদ্ধান্ত দেবে, তা তারা মেনে নেবেন।