
অনলাইন ডেস্কঃ
‘শরীর এত অসুস্থ, ঠিক মতো কথা বলতেও কষ্ট হয়। বিমানে ওঠানোর আগেই হাতকড়া পরানো হয় সবাইকে। শরীর ছিল শিকল দিয়ে বাঁধা। পাউরুটি আর চিপস ছাড়া কিছু দেওয়া হয়নি। পানি ছিল অপর্যাপ্ত। এমন অমানবিকভাবে পাঠানো হয়, মনে হয়েছে আমরা কোনো ভয়ংকর অপরাধী।’ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত আসা এক যুবক গতকাল শুক্রবার সমকালের কাছে তাঁর এই অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। এদিন দুপুরে ঢাকা থেকে নোয়াখালীতে নিজ বাড়িতে পৌঁছান তিনি।
হাতকড়া ও পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় এবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩০ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে তাদের বহনকারী ভাড়া করা উড়োজাহাজ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। রানওয়ে পর্যন্ত শিকল বেঁধেই তাদের আনা হয়েছে। রানওয়ে থেকে শিকল খুলে অ্যারাইভাল গেটে নেওয়া হয়। কাউকে কোনো ধরনের ছবি তুলতে দেওয়া হয়নি। তাদের মধ্যে একজন নারীও আছেন।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত আসা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একই ফ্লাইটে ২০০-এর মতো লোককে ফেরত পাঠানো হয়। তাদের মধ্যে নেপাল, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাওসের নাগরিকও ছিলেন। অবৈধ অভিবাসনের অভিযোগে তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা আরেকজন বলেন, পেটে শিকল থাকার কারণে ঠিক মতো খেতেও পারিনি। শৌচাগারে নেওয়ার সময় পুরোপুরি খুলে দেওয়া হতো হাতকড়া।
রাত ১১টার পরপর যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা একটি উড়োজাহাজ বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এর পর বিমানটি রানওয়েতে ছিল। ফ্লাইটে থাকা অবস্থায় আরোহীদের হাতকড়া ও শিকল খুলে দেওয়া হয়। পরে তাদের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বিমানবন্দরের অ্যারাইভাল এরিয়ায় নেওয়া হয়। এ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ টিম, কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ টিম এবং যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের পক্ষ থেকে তাদের বাড়ি পৌঁছানোর জন্য অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর অভিযান জোরদার করা হয়েছে। এর আগে আরও কয়েক দফায় বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো হয়। গত কয়েক মাসে অন্তত ১৮০ জন বাংলাদেশির ফিরে আসার তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল হাসান বলেন, হাতকড়া পরিয়ে ফেরত পাঠানো অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি অভিবাসনপ্রত্যাশী মানুষের জন্য সারা জীবনের ট্রমা হয়ে থাকে। আমরা আশা করি, যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে মানবিক দিকগুলো গুরুত্ব সহকারে দেখবে।
যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া অবস্থান করলে তাদের ফেরত পাঠানো হয়। যাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে, তাদের অনেকের বিরুদ্ধে মামলা আছে। বাংলাদেশিদের অনেকে মেক্সিকোসহ ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ হয়ে দালালদের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশ করে। জনপ্রতি ৩০ থেকে ৮০ লাখ টাকা দালালদের পেছনে খরচ করা হয়।