
দেশ সেরা বিদ্যাপীঠ ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। এখানকার মেধাবী ছাত্ররাই দেশের আগামী দিনের নেতা, আগামী দিনের নেতৃত্ব। ডাকসু- জাকসুকে দেশের মিনি পার্লামেন্ট বলা হয়।
সেই বিশ্ববিদ্যালয় সমুহের নির্বাচনে যদি কারচুপির অভিযোগ উঠে, ছাত্রসমাজ তথা দেশবাসী কই যাবে? নির্বাচন পরিচালনা করছেন দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকেরা। শিক্ষকেরা কেন শিক্ষকতা নিয়ে নেতাগিরি করবেন? দলবাজ নেতা-কর্মীদের মতো রাজনীতি করবেন? দুউ দুটি নামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি টিম ক্যাপ্টেন হিসাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। যার কারনে দেশ বিদেশে বিতর্কিত হয়েছেন। নিজেদের কলঙ্কিত করেছেন।
একজন শিক্ষক সব শিক্ষার্থীদের শিক্ষক। দল মত নির্বিশেষে সবার শিক্ষক। তিনি কেন বিএনপি- জামাত- আওয়ামী বা বামপন্থী শিক্ষক হিসাবে চিহ্নিত হবেন বা প্রকাশ্যে রাজনীতি করবেন? এমন না এসপি- ডিসি বা ইউএনও- ওসিরা ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন পরিচালনা করছেন। দেশ সেরা শিক্ষকেরা সেখানে শিক্ষকতা করেন। শিক্ষকেরা জাতির মেরুদন্ড, শিক্ষার্থী গড়ার কারিগর। দল মত নির্বিশেষে দিন শেষে সব শিক্ষার্থীর শিক্ষক।
তাদের লরিচালনায় নির্বাচন হবে স্বচ্ছ- অবাধ- নিরপেক্ষ- পরিচ্ছন্ন- তথা প্রশ্নবিদ্ধ বিহীন। প্রশবানে জর্জরিত ঢাবির ভিসি এর মধ্যেই বলতে বাধ্য হয়েছেন, তিনি জামাতের রাজনীতির সাথে জড়িত নন, অতীতে কোন দিনও তিনি জামাত বা অন্য দলের রাজনীতি করেন নি। কিন্তু আসলেই কি তাই? বুকে হাত দিয়ে তিনি এই কথা বলতে পারবেন সন্তান সমতুল্য হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের সামনে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ছেলেটি বাদাম বা চা বিক্রি করে সেই টোকাই ছেলেটিও ঢাবির ভিসির বর্তমান ও অতীত রাজনৈতিক পরিচয় জানে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বক্তব্য নিয়ে সর্বত্র হাসাহাসি হচ্ছে। মধুর ক্যান্টিন থেকে টিএসসি ভিসির বক্তব্য বলা যায় টক অব দ্য ঢাকা ইউনিভার্সিটি।
তাদের অতিমাত্রায় দলবাজির কারনে আজ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের পথে। শিক্ষকদের দলবাজি- রাজনীতি সব সরকারেই ছিলো কিন্তু এবারের ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে শিক্ষকদের নগ্ন রাজনীতি যেনো অতি মাত্রায় ফুটে উঠেছে। ডাকসু- জাকসু নির্বাচনে কেন ভোট কারচুপির অভিযোগ উঠবে? তাও শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের বিরুদ্ধে?
জাকসু নির্বাচনের ব্যালট ছাপা হয়েছে জামাতের এক নেতার প্রেস থেকে, এমন অভিযোগ এখন ওপেন সিক্রেট। দেশে কি আর কোন প্রেস ছিলো না, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে টিভি স্ক্রিনে বলতে দেখা গেছে কারচুপি করেছি, কি করবা? ছাত্রদের তাৎক্ষনিক প্রতিবাদে সেই শিক্ষক অবশ্য মিউ মিউ করে তার বক্তব্য থেকে পিছিয়ে গেছেন। কি ভয়ংকর কথা? চিন্তা করা যায়? এমনকি তিনজন বিএনপিপন্থী হিসাবে পরিচিত তিনজন শিক্ষক পর্যন্ত জাকসু নির্বাচন পরিচালনা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করেছেন
চোরের মায়ের বড় গলা, যাকে বলে! ইউনুস সরকার নির্বাচন- বিচার বিভাগসহ আরও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় নিয়ে সংস্কার করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের রাজনীতি করার বিষয়ে সংস্কার করার দরকার ছিলো, এটা নিসন্দেহে উদ্বেগ জনক। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিক্ষকদের দলাদলির কারনেই শিক্ষার পরিবেশ কলুষিত হচ্ছে, ছাত্ররাও দ্বিধা- বিভক্ত হচ্ছে, ডাকসু- জাকসু নির্বাচন কলঙ্কিত হচ্ছে, এই কলঙ্কের কারণে দেশ পিছিয়ে যাচ্ছে, বিষয়টি ভেবে দেখার সময় এসেছে। মাননীয় দুই ভিসি ও দুই ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বেয়াদবি মাফ করবেন।
লেখক: শাহীন রহমান, সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট, রাজনৈতিক বিশ্লেষক- পর্যবেক্ষক
সম্পাদক, প্রথম সময় নিউজ ডটকম