
অনলাইন ডেস্কঃ
কাঠমান্ডুতে নেপালের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সমনে রোববার গভীর রাতে হঠাৎই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এদিনই প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন শুরু করেন সুশীলা কারকি। রাতে তাঁরই পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে সুদান গুরুংয়ের নেতৃত্বাধীন হামি নেপাল গ্রুপ।
গত সপ্তাহে নেপালে তুমুল বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়েছিল হামি নেপাল গ্রুপ। রোববার রাতের বিক্ষোভে অংশ নেন গ্রুপটির সদস্যসহ আন্দোলনে নিহতদের স্বজনরা। তারা স্লোগান দেন, ‘নিহতদের নিয়ে রাজনীতি চলবে না।’
সোমবার ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য প্রিন্ট তাদের এক প্রতিবেদনে লিখেছে, হামি নেপাল গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা না করেই গুরুত্বপূর্ণ তিনজন মন্ত্রীকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত হওয়ায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন শাহ এর আইন উপদেষ্টা ওম প্রকাশকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী করা হয়েছে, সাবেক অর্থ সচিব রামেশ্বর খানালকে। আর জ্বালানি মন্ত্রী হয়েছেন বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কুলমান ঘিসিং।
গত ৮ সেপ্টেম্বর হামি নেপালের নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হলে দেশজুড়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হয়। কে পি শর্মা অলির পদত্যাগের পর প্রশাসনিক শূন্যতা দেখা দেয়। আন্দোলনের সময় থেকেই হামি নেপাল গ্রুপ বলে আসছে, তারা রাজনৈতিক সংস্কার চায়। তারা সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবি জানায় এবং জেন-জিকে প্রতিনিধিত্বকারী অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের দাবি তোলে।
ওম প্রকাশের দিকে ইঙ্গিত করে সুদান গুরুং বলেছেন, ‘ওম প্রকাশ ভেতরে বসেই নিজেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বানিয়ে নিয়েছে। তিনি তরুণদের জোটকে উপেক্ষা করেছেন।’ হামি নেপালের সমর্থকরা বলছেন, তারা রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন এনে সুশীলা কারকিকে ক্ষমতায় বসিয়েছেন। কিন্তু তাদের সে অর্জন অভ্যন্তরীণ রাজনীতির মাধ্যমে দখল হয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে হওয়া বিক্ষোভে সুদান গুরুং ঘোষণা দেন, সব ক্ষমতা নেপালের জনগণের হাতে। সুতরাং কেউ আমাদের থামাতে পারবে না। আমরা তাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) যে আসনে বসিয়েছি, সেখান থেকেই আবার নামিয়ে ফেলবো।
সংবাদ সম্মেলনে হট্টগোল
রাতের বিক্ষোভের আগে রোববার সংবাদ সম্মেলন করেন সুদান গুরুং। এটি অনুষ্ঠিত হয় কাঠমান্ডু রিপোর্টার্স ক্লাবে। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনটি হামি নেপালের সদস্য ও সাংবাদিকদের মধ্যে হাতাহাতিতে গড়ায়।
রাষ্ট্রপতির দপ্তরে পর্দার আড়ালের আলোচনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে গুরুং হুঁশিয়ারি দেন, ‘আমাদের দাবি পূরণ না হলে এই সরকারেরও পতন ঘটবে।’ দ্য প্রিন্ট বলছে, সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা সুদান গুরুংকে চ্যালেঞ্জ করেন। এরপর ঘটনা হাতাহাতিতে গড়ায়। হট্টগোলের মধ্য দিয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনে শেষ হয়।
সাংবাদিকরা সুদান গুরুংকে কি নিয়ে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন তা উল্লেখ করেনি দ্য প্রিন্ট। ভারতেরই আগেরকটি গণমাধ্যম নিউজ ১৮ বলছে, সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে সুদান গুরুং উল্লেখ করেন তারা আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন এনেছেন। তখন ভিড়ের মধ্যে থাকা এক ব্যক্তি এই বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, ‘আপনি বলছেন পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু আজই (রোববার) তো প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নিলেন।’
ওই ব্যক্তি প্রশ্ন তোলেন, ‘ছয় মাসের অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য কি ৫১ জনের (বর্তমানে ৭২) মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে? আপনারা সংসদ ভেঙেছেন, এর প্রভাব কোথায় পৌঁছেছে? জবাবে সুদান গুরুং বলেন, কতদূর পৌঁছেছে তা আপনাকে বলতে হবে না।
এরপর প্রশ্নকারী ব্যক্তি আরও বলেন, ‘কিছুই পরিবর্তন হবে না। ছয় মাস পর আগের নেতারাই আবার ফিরে আসবে।’ তখন সুদান গুরুং বলেন, আমরা তাদের ফিরতে দেব না। আবার বিক্ষোভ করবো।
দ্য প্রিন্ট বলছে, প্রথম দিকে সুশীলা কারকিকে সমর্থন জানালেও সুদান গুরুং এখন সমালোচনামূলক অবস্থান নিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী চাই না। আমাদের সরকারও দরকার নেই। যদি দরকার হতো, আমি নিজেই পদটি গ্রহণ করতাম। আমরা পরিবর্তন চাই। চেয়ারে পৌঁছানোর পর অহংকার চলবে না। এখন প্রত্যেক নেপালির কথা শুনতে হবে।