
অনলাইন ডেস্কঃ
জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগীয় সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেছেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে। এরপর ছাত্র-জনতার আকাঙ্খা অনুযায়ী অন্তবর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। সেই জনগণের ৭০ ভাগ পিআরের (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে। ঐকমত্য কমিশনে ৩১ দলের মধ্যে ২৫টি দল পিআরের পক্ষে রয়েছে। একটি দলের কেউ কেউ বলছেন, পিআর খায় না মাথায় দেয়। কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এটা বলতে পারেন না। তাই পিআর বাস্তবায়নের জন্য গণভোট দিন। রায় পিআরের পক্ষে আছে, নাকি বিপক্ষে আছে যাচাই করুন। জনগণ যদি পিআর মানে তাহলে আপনাদেরও মানতে হবে। আর জনগণের রায় যদি পিআরের বিপক্ষে যায় তাহলে আমরা মেনে নেবো। কিন্তু তারা তো গণভোটকে ভয় পাচ্ছে। পিআরের মধ্য দিয়ে সকলের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে যদি পেশীশক্তি ও কালো টাকামুক্ত কোয়ালিটিপূর্ণ পার্লামেন্ট হয়, সরকার গঠন হয়, তাহলে কোনো দলের পক্ষে ফ্যাসিবাদী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা নেই, তাই তারা পিআর ঠেকাতে চায়। তিনি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত জনগণকে রাজপথে থাকার উদাত্ত আহ্বান জানান।
শুক্রবার (১৯ সপ্টেম্বের) বিকেলে নগরীর প্রাণকেন্দ্র ডাকবাংলোস্থ সোনালী ব্যাংক চত্বরে জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনসহ ৫ দফা দাবিতে খুলনা মহানগরী ও জেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ আহবান জানান।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট মুহাম্মদ শাহ আলম ও প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম পরিচালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চল সহকারী পরিচালক খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা অঞ্চল টিম সদস্য মাস্টার শফিকুল আলম এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন খুলনা মহানগরী নায়েবে আমীর অধ্যাপক নজিবুর রহমান, খুলনা জেলা নায়েবে আমীর মাওলানা গোলাম সরোয়ার, নায়েবে আমীর ও খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী অধ্যক্ষ মাওলানা কবিরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য মহানগরী সেক্রেটারি ও খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল, খুলনা জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, বটিয়াঘাটা উপজেলা আমীর ও খুলনা-১ নং আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা শেখ মো. আবু ই্উসুফ, খুলনা জেলা সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, মহানগরী শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি আজিজুল ইসলাম ফারাজী, ইসলামী ছাত্রশিবিরের খুলনা জেলা সভাপতি মো. ইউসুফ ফকির, মহানগরী সেক্রেটারি রাকিব হাসান, প্রেরণা সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংসদের ক্বারী হাবিবুল্লাহ বেলালী।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সরকারের উদ্দেশ্যে জামায়াতের এই কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি বলেন, আর্টিকেল ৭-এর ভিত্তিতেই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে তার আলোকে নির্বাচন দিতে হবে। এখন যদি দুই–তিন মাস আলোচনার পর একটি দল বলে যে এটা পরে হবে, তাহলে কেন এত পরিশ্রম করালেন? সেজন্যই বলছি আমাদের আন্দোলন রাজনীতির অংশ। আমাদের রাজনীতি জনগণের আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরার জন্য। আমরা আলোচনার টেবিলে নিষ্পত্তির জন্য আশাবাদী। আমরা নিরাশ নই। তিনি বলেন, আপনারা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড মেইনটেইন করতে পারছেন না। তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কীভাবে? তাই আমাদের দাবি-আপনারা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিন। সাংবিধানিক অর্ডার জারি করুন। গণভোট দিন। ফ্যাসিবাদের কার্যক্রম স্থগিত করুন। এবং আপনারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, ‘নির্বাচনের আগে দৃশ্যমান বিচার করবেন।’ আমাদেরও দাবি নির্বাচনের আগেই তা দৃশ্যমান করতে হবে।
মতিউর রহমান আকন্দ আরও বলেন, আপনি সবাইকে ডাকুন, কনস্টিটিউশনাল অর্ডারের মাধ্যমে অথবা একটা রেফারেন্ডামের মাধ্যমে এখনো সময় আছে জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিয়ে নির্বাচন করুন।
তিনি বলেন, এই সংস্কার যদি এখন না হয়, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য যদি ঠিক করা না হয়, আর তা যদি নির্বাচনের আগে না হয়, বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামোতে যদি আবার নির্বাচন হয়, তাহলে এই নির্বাচনের মাধ্যমে আরেকটি ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে। বিদ্যমান কাঠামোতে নির্বাচন হলে আরেকটি হাসিনার জন্ম হবে। বাংলার মানুষ আর ফ্যাসিবাদের জন্ম হতে দেবে না।
সমাবেশ শেষে একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল নগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বর থেকে শুরু হয়ে ফেরীঘাট মোড়, পাওয়ার হাউজ মোড় ও সঙ্গীতার সামনে দিয়ে শিববাড়ি মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।