
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
খুলনাতে তিন এমপি গ্রেপ্তারের পর অন্য ৫ জন এমপি বা দলের দায়িত্বশীল নেতারা সবাই যথেষ্ট সতর্ক অবস্থানে। এসব এমপি ও নেতাদের নামে হত্যাসহ হামলা- ভাংচুরের একাধিক মামলা বিদ্যমান। মামলা হওয়ায় প্রত্যেকের মোবাইল হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো সব বন্ধ। কর্মীরা এমপি বা কোন নেতাকেই ফোনে বা হোয়াটসঅ্যাপে পাচ্ছেন না। অন্যদিকে এমপি বা জেলা- নগরের নেতারাও আগ বাড়িয়ে কোন নেতা- কর্মীকে ফোন দিচ্ছেন না বা খোঁজখবর নিচ্ছেন না।
মন্ত্রী- এমপি- নেতা মিলিয়ে ১১ জন নেতা কে, কোথায়, কোন অবস্থানে আছেন, এই ১১ জনের পরে নেতা-কর্মীরাও বেশ ক্ষুব্ধ। এ তথ্য দলের নেতা কর্মীদের। ফলে বড় ধরনের হতাশা বিরাজ করছে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে। অভিযোগে জানা গেছে, ৫ই আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর খুলনার এমপিদের ফোন- হোয়াটসঅ্যাপ যেনো অটমেটিক বন্ধ হয়ে যায়। সব এমপি ঢাকা- খুলনা থেকে আত্মগোপনে চলে যান। খুলনার এমপিদের পাশাপাশি জেলা ও মহানগরের শীর্ষ নেতারাও রাতারাতি হাওয়া হয়ে যান।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আগস্টের প্রথম সপ্তাহে খুলনার এমপিরা ঢাকা- গোপালগঞ্জের আশেপাশেই ছিলেন। সূত্রমতে, এর মধ্যেই দেশ ত্যাগ করেছেন খুলনা ৩ আসনের এমপি এস এম কামাল হোসেন, খুলনা- সদর আসনের এমপি সেখ জুয়েল, অন্যদিকে, ক্যান্টনমেন্টে থেকে পরে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় খুলনার এমপিদের মধ্যে প্রথম গ্রেপ্তার হন খুলনা- ৪ আসনের এমপি আব্দুল সালাম মুর্শিদি, তিনি বসুন্ধরায় তার বিয়াইয়ের বাড়িতে ছিলেন। এরপর গ্রেফতার হন খুলনা- ৫ আসনের এমপি, সাবেক ভুমি মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। উনি গ্রেফতার হন ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর সীমান্ত থেকে। জনশ্রুতি আছে, সরকারের পদত্যাগ ও গ্রেফতারের আগে উনিও অন্যান্য মন্ত্রী- এমপিদের মতো সেনাবাহিনীর হেফাজতে ছিলেন। তার দু একদিন পরেই পটুয়াখালী থেকে গ্রেপ্তার হন খুলনা ৬ আসনের এমপি রশিদুজ্জামান মোড়ল। খুলনার ১ আসনের এমপি ননীগোপাল মণ্ডলও বর্তমানে ভারতে আছেন। সংরক্ষিত আসনের দুই মহিলা এমপি বেগম মন্নুজান সুফিয়ান ও রুনু বিথারের অবস্থান জানা যায় নি, একটি অসমর্থিত সুত্র বলেছে, সাবেক মন্ত্রী মন্নুজান উত্তরবঙ্গের দিকে আছেন, আর রুনু বিথার এবারই প্রথম এমপি, তার বিরুদ্ধে তেমন অভিযোগ নেই।
অন্যদিকে ৪ আগস্ট খুলনার সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের বাড়ি দুই তিন দফায় ভঙচুর হওয়ার পর তিনি খুলনা সিটি কর্পোরেশনের পেছন দিক দিয়ে পালিয়ে যান। একাধিক সুত্র বলেছে, হাসিনা সরকারের পতনের পরে তিনি বেশ কিছুদিন ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন, পরে সুবিধাজনক সময়ে স্ত্রী, সাবেক মন্ত্রী বেগম হাবিবুন্নাহারকে নিয়ে সিংগাপুরে চলে গেছেন। ৪ আগস্টের পরে খালেক তার ঘনিষ্ঠ দুই একজন ছাড়া কারোর সাথেই কথা বলেননি। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেছেন, তার ফোন বা হোয়াটসঅ্যাপে নক করে, ম্যাসেজ দিয়ে কেউই ফোনে পাননি, ম্যাসেজের উত্তর পাননি। তালুকদার খালেকের কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি, কেসিসিতে মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে নানা অনিয়ম, কথায় কথায় হুয়ারের বাচ্চা গালিগালাজ করাসহ নানামুখী অনৈতিক খবরাখবর বেরিয়ে পড়ায় তার ইমেজ এখন শূন্যের কোঠায়। তিনি আর রাজনীতি করবেন না বা করতে পারবেন না এটা ওপেন সিক্রেট। মাঝে দলের নেতা-কর্মীরা এক গ্রুপভিডিও- কলে এসে এক দেড় ঘন্টার আড্ডায় একজন নেতা বাদে তাকে সবাই ফ্রি স্টাইলে গালিগালাজ করেছেন।
অন্যদিকে, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা ৪ আগস্ট আন্দোলনকারি ছাত্র- জনতার হাতে বেধড়ক মার খেয়ে বলা যায় জীবনে এবারের মতো বেঁচে এসেছেন। তিনি আত্মগোপনে থেকে এখনও চিকিৎসা নিচ্ছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশিদও আত্মগোপনে আছেন। তিনি সিনিয়র সিটিজেন হিসাবে পরিচিত হলেও ব্যাপক ভাবে অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত একজন নিন্দিত ও বিতর্কিত মানুষ। তার নারী ঘটিত নানান কেচ্ছা- কাহিনী, দুর্নীতি নগর ও জেলাতে ওপেন সিক্রেট, জেলা পরিষদকে অসভ্য মহিলাদের বালাখানা বানিয়েছিলেন।
জেলার সাধারণ সম্পাদক এড: সুজিত অধিকারী ৫ আগস্টের পর থেকে নিখোঁজ, তার বাড়িও ৪ আগস্ট দুই দফায় ভাংচুর হয়েছে। তার পর থেকেই তিনি আত্মগোপনে। অসমর্থিত সুত্র বলেছে, তিনি ভারতে চলে গিয়েছেন। তিনি দেশে আর নাও ফিরতে পারেন এমন আভাস দিয়েছেন অনেকেই। দলের আর এক প্রভাবশালী নেতা, মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সভাপতি, খুলনা চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি কাজি আমিনুল হক সরকার পতনের আগেই মেয়েকে নিয়ে ব্যাংকক বেড়াতে গিয়েছিলেন। সরকার পতন হলে তিনি আর ফিরে আসেননি, ভিন্ন সুত্র বলেছে, তিনি ভারতে এসেছেন, সেখানেই আছেন, তবে দেশে কবে আসবেন কেউই বলতে পারেন নি।
এর বাইরে দুর্নীতির কারণে খুলনা- ৬ আসনের সাবেক এমপি আখতারুজ্জামান বাবু ও তার স্ত্রীর ব্যাংক একাউন্ট জব্দের পাশাপাশি বিদেশ যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে যা কিনা খুলনার অন্য কোন এমপি বা নেতার বেলায় ঘটেনি।