
অনলাইন ডেস্কঃ
সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পোতে নতুন বিদ্রোহী জোট অতর্কিত হামলা চালানোর পর আবার আলোচনায় এসেছে দেশটির গৃহযুদ্ধ। ২০১৬ সালের পর এই প্রথম বিরোধী বাহিনী আলেপ্পোর ভূখণ্ড দখল করেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ না হওয়া গৃহযুদ্ধ নতুন করে জেগে উঠছে।
নতুন করে সংঘাতের আগ পর্যন্ত তিন লাখেরও বেশি মানুষ এই গৃহযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন। প্রায় ৬০ লাখ শরণার্থী দেশ থেকে বের হয়ে গেছেন। এর ব্যাপক প্রভাব শুধু সিরিয়া অঞ্চল নয়, এর বাইরেও পড়েছে।
সিরিয়ার কী ঘটছে?
২০১১ সালে ‘আরব বসন্ত’র সময় বিক্ষোভকারীরা সিরিয়ার ‘স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট’ বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে। বিক্ষোভকারীদের মোকাবেলা করা হয় প্রচণ্ড শক্তি দিয়ে।
আসাদের বাহিনী গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকে দমন করার সঙ্গে সঙ্গে সিরিয়ার সামরিক বাহিনী থেকে কিছু দলত্যাগী ও আন্দোলনকারীরা একটি সশস্ত্র বিরোধী দল গঠিত হতে শুরু করে।
ভিন্ন মতাদর্শের সমন্বয়ে গঠিত সশস্ত্র বিরোধী দল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবেশী তুরস্ক, আঞ্চলিক জায়ান্ট সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশি কিছু শক্তি বিদ্রোহীদের সমর্থন করেছে।
সরকারবিরোধী বিদ্রোহীদের শক্তি বাড়তে থাকায় সিরিয়ার মিত্র ইরান ও রাশিয়া আসাদকে সমর্থন দেওয়া জোরদার করে। সশস্ত্র বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করেছে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড ও তাদের লেবাননের প্রক্সি হিজবুল্লাহ। আকাশে আসাদের বাহিনীকে শক্তিশালী করা হয়েছে রুশ যুদ্ধবিমান দিয়ে।
একদময় আল-কায়েদাসহ চরমপন্থীরা সিরিয়ার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। বিশেষ করে ২০১৪ সাল নাগাদ চরমপন্থীদের আধিপত্য বিস্তার শুরু হয়। দেশজুড়ে আইএসের ব্যাপক বিস্তার ঘটে।
২০২০ সালে রাশিয়া ও তুরস্ক বিরোধী-নিয়ন্ত্রিত সর্বশেষ প্রদেশ ইদলিবে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় এবং যৌথ টহলসহ একটি নিরাপত্তা করিডোর প্রতিষ্ঠা করা হয়।
এরপর থেকে বড় ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটলেও সিরিয়ার সরকার পুরো অঞ্চল পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। সাম্প্রতিক আলেপ্পোর ঘটনা থেকে বোঝা যায়, সশস্ত্র প্রতিরোধ এখনো পিছু হটেনি।
হঠাৎ কেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সংঘাত?
গত বুধবার বিদ্রোহীরা ‘মিলিটারি অপারেশনস কমান্ড’ নামে নতুন একটি জোট গঠন করার পর আলেপ্পোতে অভিযান শুরু করে। তারা দ্রুত আলেপ্পোর বাইরের গ্রামগুলোর মধ্য দিয়ে ঢুকে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, বিদ্রোহীরা এখন শহরের বেশিরভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। সরকারি বাহিনীর সামান্য প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছেন তারা।
বিদ্রোহীরা বলছে, তারা দখলকৃত অঞ্চল মুক্ত করতে চায় এবং সরকারি বাহিনী ও ইরানপন্থী মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোর ক্রমবর্ধমান হামলার জবাব দেবে।
বিদ্রোহীদের অগ্রগতির জবাবে রাশিয়া ও সিরিয়ার বিমান বাহিনী আলেপ্পো ও ইদলিব প্রদেশে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
আলেপ্পো হারানো আসাদ বাহিনীর জন্য একটি বড় ধাক্কা। একসময় জনসংখ্যার দিক থেকে সিরিয়ার বৃহত্তম শহর এবং অর্থনৈতিক রাজধানী এটি বিশ্বের প্রাচীনতম জনবহুল শহরগুলোর মধ্যে একটি।
২০১৬ সালে আসাদ ক্ষমতা দখলের আগ পর্যন্ত বিদ্রোহীদের প্রধান শক্ত ঘাঁটি ছিল আলেপ্পো। বিদ্রোহীরা সেখানে আবার পা রাখায় ইদলিবে সুবিধা করতে পারছে।
কারা এই বিদ্রোহী?
জানা যাচ্ছে, নতুন করে বিদ্রোহ অভিযানে নামা জোটটি ইসলামপন্থী দল থেকে শুরু করে মধ্যপন্থী ও আসাদ বিরোধীদের সমন্বয়ে গঠিত। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নামের একটি দল। সিরিয়ায় আল-কায়েদার সাবেক সহযোগী সংগঠন এটি, যারা আগে আল-নুসরা ফ্রন্ট নামে পরিচিত ছিল।
গোষ্ঠীটি আনুষ্ঠানিকভাবে আল কায়েদার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে আগেই। কার্যত তারা ইদলিবের শাসক ছিল। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে তুরস্ক সমর্থিত বিভিন্ন গোষ্ঠী, বিশেষ করে কুর্দি যোদ্ধারা।