
বিশেষ প্রতিনিধি:
বহুল আলোচিত, নানা কারনে বিতর্কিত দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ডক্টর শাহেদা ওবায়েদ কোথায় আছেন, কি করছেন, কেউই জানে না। জানা গেছে, তিনি নিজের মেয়ে ও রাজনীতির প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে অনেকটা অভিমান করে দীর্ঘদিন দেশের বাইরে লোক চক্ষুর অন্তরালে আছেন। বিএনপির এক সময়ের জনপ্রিয় মহাসচিব ওবায়দুর রহমানের স্ত্রী শাহেদা ওবায়েদ দেশের রাজনীতিতে নানা কারনে বিতর্কিত ও আলোচিত ছিলেন।
ওবায়দুর রহমানের মৃত্যুর পর স্মার্ট, সুন্দরী, মধ্যবয়সী চির তরুন এই নারী পেশা জীবনে একজন শিক্ষিকা ছিলেন। ৯১ তে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিনি প্রচন্ড প্রভাবশালী মহিলা ছিলেন, রাজধানীর তিতুমির কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন। দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বিচারপতি দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সাবেক এমপি হেমায়েত উল্লাহ আওরংগ পর্যন্ত তার ছাত্র ছিলেন।
৯৬ তে বিএনপি ক্ষমতাচ্যুত হলে নরসিংদী তে বদলি হয়ে যান। এই সময়ে ৩ রা নভেম্বর জেল হত্যা মামলায় ওবায়দুর রহমান গ্রেফতার হলে তিনি নানামুখী হেনস্তার সম্মুখীন হন। পরে ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তিনি আবারও লাইলাইটে আসেন এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। চাকরি জীবন থেকে অবসরে চলে গিয়ে তিনি বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হবার চেষ্টা করেন।
দলের তৎকালীন চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া গবেষণা পরিষদের আহবায়ক হয়ে নিজেকে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় রাখেন, পাশাপাশি তিনি নিয়মিত টকশো করে নিজের ব্যক্তিগত ইমেজ গড়ে তোলেন।
পরে জনৈক কামরুল হাসান নাসিমের সাথে জাগো বাংলাদেশ নামে একটি নতুন সংগঠন গড়ে তোলেন, তবে তা পোস্টার, লিফলেট, পত্রিকায় বিবৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো। ২০০৬ এর নির্বাচন সামনে রেখে প্রয়াত স্বামী ওবায়দুর রহমানের ফরিদপুরের আসনে মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে নিজের আপন মেয়ে, বর্তমানে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের সাথে তার দুরত্ব সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে মা মেয়ের মধ্যে মুখ দেখাদেখি- কথা বলা বন্ধ এমনকি পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায়। পরে রাজনীতি থেকে একরকম হারিয়ে যান ঢাকায় জন্ম নেয়া ফরিদপুরের বউ শাহেদা ওবায়েদ।
ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, খন্দকার মোশতাক, জিয়া, সাত্তার সরকারের মন্ত্রী ওবায়দুর রহমানের উত্তরসূরী হিসাবে শামা ওবায়েদ ওরফে রিংকু নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। প্রথমে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও পরে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর বাইরেও শামা ওবায়েদ বিএনপির আন্তর্জাতিক ও কুটনৈতিক কোরের সাব কমিটির গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্য।
অন্যদিকে শাহেদা ওবায়েদ ও কামরুল হাসান নাসিম মিলে ২০০৯ এ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থার তত্ত্বাবধানে তৃণমূল বিএনপি নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনার জন্ম দেন। বেগম জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপিকে ডিস্টার্ব করাই ছিল তৃণমূল বিএনপির মূল লক্ষ্য। ২০১৪ তে ডঃ শাহেদা ওবায়েদ আওয়ামী লীগের সাথে সম্পর্ক রেখে সংরক্ষিত মহিলা আসনে এমপি হওয়ার জন্য নানামুখী চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ডেমোক্রেটিক রিফর্মস পার্টি নামে একটি দল করার চেষ্টা করেন। এক সময়ের প্লেবয় প্রেসিডেন্ট প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, ধনাঢ্য বিতর্কিত ফিল্ম ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ বান্ধবি হিসাবে পরিচিত ডক্টর শাহেদা ওবায়েদের সাথে কামরুল হাসান নাসিমের বিয়ের গুঞ্জন ছিলো চলতি দশকের ওপেন সিক্রেট ঘটনা।
এমন গুঞ্জনে শোনা গেলেও ডক্টর শাহেদা বিষয়টি নিয়ে সেই সময়ে মিডিয়ার কাছে স্বীকার বা অস্বীকার কোনটাই করেননি, অন্যদিকে কামরুল হাসান নাসিমা গোয়েন্দা সংস্থার নাম ভাংগিয়ে ও নানামুখি প্রতারণা করে বহু মানুষের টাকা আত্মসাৎ করে দেশ ছেড়েছেন।