
অনলাইন ডেস্কঃ
ইসলাম প্রচারের কাজ করা তাবলিগ জামাতের বিরোধ ৯ বছরে নিরসন না হয়ে রক্তাক্ত হয়েছে। দু’পক্ষের ভাষ্যে বিরোধের কারণও ভিন্ন। মাওলানা জুবায়েরপন্থি হিসেবে পরিচিতরা বলছেন, ভারতের নিজামুদ্দিন মারকাজের আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভির ইসলাম পরিপন্থি বক্তব্যের কারণেই বিরোধ। আবার মাওলানা সাদের অনুসারীরা বলছেন, ঐতিহ্য ভেঙে আমিরের পরিবর্তে শূরায়ে নেজামের (পরামর্শ সভা) মাধ্যমে তাবলিগ পরিচালনা নিয়েই মূল বিরোধ।
২০১৭ সাল থেকেই সরকারের মধ্যস্থতায় টঙ্গীর তুরাগতীরে পৃথক ইজতেমা করছে জুবায়েরপন্থি ও সাদপন্থিরা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জুবায়েরপন্থি হেফাজতে ইসলামের নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন, টঙ্গীতে আর সাদপন্থিদের ইজতেমা করতে দেওয়া হবে না।
ইজতেমার প্রস্তুতি হিসেবে জুবায়েরপন্থিরা টঙ্গীর ময়দানে জোড় ইজতেমা করছিলেন। গতকাল বুধবার ভোরে জোড় ইজতেমার জন্য সাদপন্থিরা ময়দানে গেলে দু’পক্ষের সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। সাদপন্থিদের শীর্ষ মুরব্বি সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম সমকালকে বলেছেন, যা ঘটেছে, তা দুঃখজনক। ওদের (জুবায়েরপন্থি) মাঠের বরাদ্দ ছিল ১৬ ডিসেম্বর দুপুর পর্যন্ত। জোড়ের জন্য মাঠ প্রস্তুতে আমরা বুধবার ভোরে টঙ্গীতে যাই। সেখানে ওরা হামলা করে।
তাবলিগ জামাত রাজনীতি থেকে দূরে থাকা এবং অহিংসার জন্য দুনিয়াজুড়ে পরিচিত। বাংলাদেশে কেন বারবার সংঘর্ষ হচ্ছে– প্রশ্নে ওয়াসিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘সমঝোতার জন্য তিনবার চিঠি দিয়েছি। ওরা বলে, আমরা নাকি মুসলমানই না। আমাদের সঙ্গে কী আলোচনা!’
জুবায়েরপন্থি হিসেবে পরিচিত হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী বলেছেন, ২০১৮ সালের মতো এবারও হামলা করেছে সাদের অনুসারীরা। এবার তাদের ইজতেমা করতে দেওয়া হবে না। সাদকেও বাংলাদেশে আসতে দেওয়া হবে না।
দু’পক্ষের সঙ্গে কথা জানা গেছে, ভারতের দিল্লির নিজামুদ্দিনে ১৯২৫ সালে তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মুহম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভি। তিনি ছিলেন জামাতের আমির। তাঁর মৃত্যুর পর ছেলে ইউসুফ কান্ধলভি আমির হন। সাদ কান্ধলভি তাঁর নাতি। মাওলানা সাদ ২০১৬ সালে অভিমতে জানান, ইসলাম শিক্ষার বিনিময়ে টাকা নেওয়া জায়েজ নয়। সমাজের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে মাদ্রাসা শিক্ষকদের মসজিদে এসে নামাজ আদায়ে জোর দেন।
এ বক্তব্যকে ইসলামবিরোধী বলছেন দেওবন্দ দারুল উলুমকে অনুসরণ করা বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসার পড়ুয়া। সাদপন্থিদের ভাষ্য, কওমি মাদ্রাসাগুলোর নিয়ন্ত্রণ হেফাজতে ইসলামের নেতাদের হাতে। তারা ইসলামী শিক্ষা দিয়ে, ওয়াজ করে টাকা নেন। এ কারণেই সাদ কান্ধলভির বক্তব্যকে মানতে পারছেন না তারা।
বাংলাদেশে তাবলিগ জামাত নিয়ন্ত্রিত হয় কাকরাইল মসজিদ থেকে। দেওবন্দের মতো এর খতিব মাওলানা জুবায়ের আহমদও সাদ কান্ধলভির বক্তব্যের বিরোধী। হেফাজত নেতারা মাওলানা জুবায়েরের মতের সমর্থক। তারা বলছেন, সাদ কান্ধলভিকে তওবা করতে হবে। এ বিরোধিতায় তিনি ২০১৮ সাল থেকে ইজতেমায় আসতে পারছেন না।
ওয়াসিফুল ইসলামের ভাষ্য, হেফাজতের নেতারা তাবলিগে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় বিতর্ক তৈরি করেছেন। তিনি বলেছেন, মাওলানা সাদ ভুল কিছুই বলেননি। তাঁর বিরোধীরা ২০১৫ সালে প্রস্তাব করেছিলেন, আমিরের পরিবর্তে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত পরামর্শ পরিষদ পরিচালনা করবে তাবলিগ। তা না হওয়ায় হিংসা থেকে মাওলানা সাদকে আমির পদ থেকে সরাতে তাঁর বক্তব্যকে ইসলামবিরোধী বলা হচ্ছে।
তবে অভিযোগ নাকচ করছেন মহিউদ্দিন রাব্বানী। গত ৫ নভেম্বর সাদবিরোধী ওলামা-মাশায়েখরা ঢাকায় সমাবেশ করে সাদপন্থিদের নিষিদ্ধসহ ৯ দফা দাবি জানান। এই সমাবেশের আগে তাবলিগের দুই গ্রুপই পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ডাক দিলে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে প্রশাসনের মধ্যস্থতায় সাদপন্থিরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন। ওয়াসিফুল ইসলাম বলেছেন, জোড় না হলেও ইজতেমা হবেই।