
অনলাইন ডেস্কঃ
আশির দশকের দুই ডাকসাইটে ছাত্রদল নেতা সানাউল হক নীরু ও গোলাম ফারুক অভি। স্বৈরাচার এরশাদের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন। দুজনই ভুল স্বীকার করে বিএনপির রাজনীতিতে সরাসরি সম্পৃক্ত হতে চান। ইতিমধ্যে দলের হাই কমান্ডের কাছে আবেদন করেছেন তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ী, ইতিবাচক সাড়াও মিলেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শর্তসাপেক্ষে তাদের সুযোগ দিতে চান বলে জানা গেছে।
ছাত্রদলের অন্যতম স্তম্ভ ছিলেন রাজপথ কাঁপানো দুই ছাত্রনেতা অভি-নীরু। ভালো সংগঠক হিসেবে তাদের জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। তবে নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের সময় তৎকালীন স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের সঙ্গে হাত মেলানোর অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। সর্বদলীয় ছাত্র সংগঠনের চাপের মুখে ছাত্রদল থেকে বহিষ্কার করা হয় অভি ও নীরুকে।
সানাউল হক নীরু নিজ এলাকা নরসিংদীতে সক্রিয় থাকলেও অভি দীর্ঘদিন ধরে আছেন কানাডায়। তুখোড় ছাত্রনেতা নীরু ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ এনে নব্বইয়ের দশকে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ২০০৬ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারায় যোগ দেন তিনি। অবশ্য এরপর থেকে আবার বিএনপির রাজনীতিতে ফেরার চেষ্টা করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় থাকেন নীরু। নরসিংদী (বেলাবো-মনোহরদী) আসনে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। বহু বছর ধরে দলের বাইরে থাকা নীরু বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন এমন গুঞ্জন শোনা গেছে বহুবার। কিন্তু দলে ফেরা হয়নি তার। তবে দলের হাই কমান্ড এখন নীরুর প্রতি অনেকটাই ইতিবাচক বলে জানা গেছে।
বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা জানান, অভি, নীরু ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সাহাবুদ্দিন লাল্টুসহ আরও কয়েকজন সংস্কারপন্থি নেতা লন্ডনে তারেক রহমানের কাছে ভুল স্বীকার করে আবেদন করেছেন। তারা বিএনপিতে ফিরতে মরিয়া। তারেক রহমান বেশ কিছু শর্ত তাদের দিয়েছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো সামাজিক মাধ্যমে দলের জন্য ক্ষতিকর এমন লেখালেখি বন্ধ করা। তারেক রহমান নিজেই বিষয়টি দেখছেন। তিনি একটি সুযোগ দিতে চান। ওই সিনিয়র নেতা আরও বলেন, ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে নীরুদের দলে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর হয়নি। এবার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান উদ্যোগ নিয়েছেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাদেরকে দলে কাজে লাগাতে চান।
সানাউল হক নীরু ছাত্রদলের যে কমিটির নেতা ছিলেন একই কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন গোলাম ফারুক অভি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একসময় অভির গল্প তামিল সিনেমাকেও হার মানাত। এসএসসি, এইচএসসিতে বোর্ডে মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া অভি ছিলেন ক্যাম্পাসে অদ্বিতীয়। এরশাদের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগে তিনিও একই সময়ে ছাত্রদল থেকে বহিষ্কৃত হন। পরে এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। সেই ধারাবাহিকতায় জাতীয় পার্টির টিকেটে হন বরিশাল-২ আসনের সাংসদ। ২০০১-এর ভোটে জেপির (মঞ্জু) প্রার্থী হিসেবে হেরে যান তিনি।
রাজনীতির সঙ্গে অপরাধ জগতেও আলোচিত নাম ছিলেন অভি। পরকীয়ায় জড়িয়েছিলেন মডেল সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নির সঙ্গে। এক পর্যায়ে তিন্নি খুন হন। অভির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, সম্পর্ক বজায় রাখতে রাজি না হওয়ায় তিন্নিকে হত্যা করেছেন তিনি। এ ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড়ের এক পর্যায়ে দেশ ছাড়েন অভি। এখন অভির অবস্থান কানাডার টরন্টো শহরে।
বরিশালে অভির একজন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় জানান, দীর্ঘদিন ধরে কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে আছেন অভি। এখন তিনি দেশে ফিরতে মরিয়া। যেকোনো উপায়ে দেশে ফিরতে বিগত কয়েক বছর ধরে দফায় দফায় তিনি চেষ্টা করেছেন। তবে ইতিবাচক সাড়া পাননি। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পরও নতুনভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অভির ওই নিকটাত্মীয় বলেন, ২০১৪ সালে হাইকোর্ট আলোচিত মডেল তারকা তিন্নি হত্যার প্রধান আসামি গোলাম ফারুক অভির পাসপোর্ট ফিরিয়ে দিতে রায় দেন। তবে তার পাসপোর্ট ফেরত দেওয়া হয়নি। পাসপোর্ট পেলেই তিনি দেশে ফিরবেন। তিন্নি হত্যা মামলার রায়ের তারিখ ৪২ বার পেছানো হয়েছে। দেশে ফেরায় কোনো ঝুঁকি নেই ইতিমধ্যে এমন বার্তা পাওয়া গেছে।
দলে ফেরার বিষয়ে সানাউল হক নীরু বলেন, এতকিছুর পরও আমি শহিদ জিয়ার আদর্শের দল বিএনপি ছেড়ে যাইনি। দেখা যাক। আমি ভালো কিছুর অপেক্ষায় আছি। কেননা বিএনপি ভালো মানুষের দল। শীর্ষ নেতৃত্ব নিশ্চয়ই ভালো সিদ্ধান্ত নেবে। এলাকায় সামাজিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছি। আমার অনুসারী শুভাকাংখীদের তাকিয়ে আছে। নীরুর দাবি, ১৯৯০ সালে ডাকসুর নির্বাচনের সময় ভুল বোঝাবুঝি হয়। কোনোরকম শোকজ ছাড়াই দল তাকে বহিষ্কার করে। এখন তিনি আবার দলে ফিরতে চান।
একসময়ের ঘনিষ্ঠজন অভির সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে জানিয়ে নীরু বলেন, অভি ভালো আছে। সে কানাডা ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। তার সঙ্গে দেশে রাজনীতি নিয়ে নিয়মিত কথাবার্তা হয়। তবে একাধিক মাধ্যমে চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি গোলাম ফারুক অভিকে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বহিষ্কৃতদের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে দলে ফেরার সুযোগ থাকে। এগুলো সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার অংশ। তবে অভি-নীরুর ব্যাপারে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামে সুনির্দিষ্ট কোনো আলোচনা হয়নি।
সূত্রঃ সময়ের আলো