
অনলাইন ডেস্কঃ
এমাসের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় প্রেসক্লাবে আওয়ামী লীগের লিফলেট বিতরণ করা নিয়ে শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা মুকিব মিয়ার কর্মকাণ্ডে সমালোচনার ঝড় ওঠে। মুকিব ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা, তার এই কর্মকাণ্ডে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিব্রত হয়ে এক নতুন অভিযান শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ অভিযানের নাম রাখা হয়েছে ‘ডেভিল হান্ট ফর এডুকেশন ক্যাডার’।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এ অভিযানের লক্ষ্য হচ্ছে, যেসব কর্মকর্তা কলেজে যোগদান না করেও ঢাকা থেকে আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ইতোমধ্যে, মন্ত্রণালয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সাহায্যে এসব কর্মকর্তার তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে বলেও জানায় মন্ত্রণালয়।
সূত্র বলছে, মুকিব মিয়ার লিফলেট বিতরণসহ অন্যান্য ঘটনার পর শিক্ষাক্ষেত্রে গৃহীত বিভিন্ন সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রলীগের সাতজন পদধারী শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে এনসিটিবি এবং পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর থেকে। এসব কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রীও। মন্ত্রণালয় এখন নিয়মিতভাবে এই অভিযানে অংশ নেবে।
এছাড়া, মন্ত্রণালয় সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের দ্রুত বদলির প্রক্রিয়া শুরু করেছে। যারা রাজধানী এবং আশপাশের কলেজে আছেন, তাদের দূরবর্তী কলেজে বদলি করা হবে।
গত আগস্টে কোটা আন্দোলনের সময় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বাসায় হামলা চালিয়েছিল, যার পরিপ্রেক্ষিতে ৪ আগস্ট শিক্ষা ক্যাডারের ৩০ কর্মকর্তা শিক্ষাভবনে একটি মিছিল করেন। এর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন গ্রেপ্তার হওয়া মুকিব মিয়া। তিনি এই মিছিলে বিভিন্ন রাজনৈতিক স্লোগান দেন, যা এখনও অনেক শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে বিতর্ক তৈরি করেছে।
মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. নুরুজ্জামান জানিয়েছেন, পূর্ববর্তী সরকারের সময় যারা চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করেছেন, তাদের অনেককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং বাকিদের বিষয়ে নিয়মিত খোঁজখবর নিয়ে বদলি করা হচ্ছে।
তবে, অনেক কর্মকর্তা এখনো শিক্ষা প্রশাসনে বহাল রয়েছেন, যদিও তারা মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে বেশ কিছু কর্মকর্তার বদলি করা হয়েছে, আবার কেউ কেউ নিজের আবেদনেই বদলি হয়েছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় মনে করছে, এই শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে শিক্ষা ক্যাডারে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো কর্মকর্তাদের সঠিক স্থানে নিয়ে আসা সম্ভব হবে, যা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে গত সপ্তাহে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বদলি হয়েছেন একাধিক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। এর মধ্যে, সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী সাদিয়া সুলতানাকে বদলি করা হয়েছে, এদিকে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আসমা আক্তারকে শরীয়তপুর নড়িয়া কলেজে পাঠানো হয়েছে। তবে, এখনও বহাল রয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সোহান খানের স্ত্রী মনিরা মুর্শেদ, যিনি নিজেকে ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করছেন।
নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বদলি করা হয়েছে যারা, তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম এবং প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে মহিউদ্দিন আহমেদের বদলি, যিনি অভিযোগ করেছেন যে, তিনি নিজেই গাজীপুরে বদলি হয়ে যাওয়ার আবেদন করেছেন, তবে তাঁর বিরুদ্ধে টেন্ডার জালিয়াতি, সিন্ডিকেট তৈরি এবং সরকারি কোষাগারে অর্থ না পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন উইংয়ের পরিচালক ড. এ কিউ এম শফিউল আজম এবং এনসিটিবি সচিব শাহ মুহাম্মদ ফিরোজ আল ফেরদৌসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, বিশেষত মন্ত্রণালয়ের অর্থ নিয়ে অনিয়ম এবং ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মাধ্যমে সুবিধা নেয়ার অভিযোগ।
মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এই অভিযানের ফলে শিক্ষা প্রশাসনে একধরনের চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে, যা সরকারের শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে দেখানো হচ্ছে।