
অনলাইন ডেস্কঃ
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মিলনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। একই উপজেলার এক তরুণী বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) সকালে অভিযোগ দাখিল করলে রাতে মামলাটি রুজু করা হয়। ছাত্রদলের আহ্বায়ক মিলনসহ তার দুই সহযোগীকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।
অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ্ আল মিলন পৌর এলাকার কলেজ রোডের বাসিন্দা মো. আরফিন মোল্লার ছেলে। ভুক্তভোগী ওই তরুণী পৌর এলাকার বাসিন্দা ও আলফাডাঙ্গা সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
জানা যায়, কলেজ পড়ুয়া এক তরুণী গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে উপজেলার ফায়ার সার্ভিসে কর্মরত এক বিবাহিত পুরুষের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। সম্প্রতি বিষয়টি তার পরিবারে জানাজানি হলে এ নিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে তার চরম বিবাদ শুরু হয়। পরে তরুণীকে এড়িয়ে যেতে থাকেন ওই বিবাহিত প্রেমিক। এদিকে তরুণী ওই ব্যক্তির স্ত্রী সন্তানের চরম আপত্তি সত্ত্বেও তাকে বিয়ে করার জন্য ফায়ার সার্ভিসের অফিসের সামনে যেয়ে ধর্না দিতে থাকেন। এ অবস্থায় বিষয়টি মধ্যস্থতা করার কথা বলেন ছাত্রদল নেতা আব্দুল্লাহ আল মিলন।
ঊর্ধ্বতন দফতরে যোগাযোগ করে এরপর ফায়ার সার্ভিসের ওই কর্মীকে অন্যত্র বদলি করা হয়। অন্যদিকে, আড়াই লাখ টাকা দেয়ার লিখিত শর্তে মেয়েটি ওই তরুণীর সঙ্গে প্রেমের কোনো সম্পর্ক রাখবে না এবং তাকে ফোন করবে না বলে রাজি হয়।
তরুণীর অভিযোগ, বৃহস্পতিবার সকালে তিনি ওই টাকা নিতে মিলনের বাসায় গেলে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন মিলন।
তরুণী এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে বলেন, তিনি ঘরে ঢুকে দেখেন মিলন বিছানায় শুয়ে আছেন। পাশের রুমে অন্য ভাইয়েরা ছিলেন। মিলন তাকে এসি চালানোর জন্য ঘরের দরজার সিটকানি আটকে দিতে বলেন। তাকে গরম লাগছে বলে বোরখা খুলে ফেলতে বলেন। এরপর তাকে তিনি পাশে বসতে বলেন এবং এক গ্লাস পানি দিতে বলেন। তরুণী মোবাইল ফোনের ভিডিও চালু করে রেখেছিলেন। মিলন তার নিকট থেকে ফোন নিয়ে চেক করে দেখেন।
তখন তিনি বলেন, ভাইয়া আমাকে পৌরসভায় যেতে হবে। রোজার মধ্যে এতো ঘুরাঘুরি করতে ভালো লাগে না। আমার টাকাটা দিয়ে দেন। তখন তাকে ৩০ মিনিট সময় দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
তরুণীর অভিযোগ, পানি খাওয়ার ছলে মিলন তার হাত স্পর্শ করেন এবং আপত্তিকর জায়গায় হাত দেন। এরমধ্যে বাইরে ঝামেলা হচ্ছে বুঝতে পেরে তাকে ঘর থেকে বের করে দেন। এ সময়কার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মিলনের বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে আছেন ওই তরুণী। একজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ আরও কয়েকজন ব্যক্তি তখন মিলনকে বেরিয়ে আসতে বলেন।
পরে মিলনকে একটি লুঙ্গি পরা ও খালি গায়ে দরজা খুলে দাঁড়াতে দেখা যায়। তরুণীকে দেখে তিনি জানতে চান, ও এখানে কেন? এক সাক্ষাৎকারে তরুণী স্বীকার করেন, ফায়ার সার্ভিসের ওই লোকটির সঙ্গে তার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। তবে তরুণীর এসব বিষয়ে তার বাবা কিছুই জানেন না বলে জানালেও তিনি বিচার দাবি করেন।
আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশিদ বলেন, বাদীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। মামলা নং: ৩, তারিখ: ৭ মার্চ ২০২৫। তিনি জানান, আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়কের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ প্রসঙ্গে ইতোমধ্যেই বিবৃতি দিয়েছেন উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব নূর জামাল খসরু ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খোসবুর রহমান খোকন। বিবৃতিতে তারা বলেন, এ বিষয়ে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়ায় তার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তবে ছাত্রদলের নেতার বিরুদ্ধে আনিত এ অভিযোগের বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে তারা কি সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবেন তা জানা যায়নি।
জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সৈয়দ আদনান হোসেন অনু জানিয়েছেন, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তারা তদন্ত করে দেখছেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তারা যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।
বিষয়টি নিয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ আল মিলনের সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদের কথা হলে তিনি বলেন, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য প্রতিপক্ষ আমাকে ফাঁসিয়েছে।