
অনলাইন ডেস্কঃ
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে শহিদদের পরিবারে এখনো শোকের ছায়া। নেই ঈদের অনন্দ। কেউ হারিয়েছেন বাবা, কেউবা সন্তান অথবা কেউ স্বামী। পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশাহারা অবস্থায় অনেক পরিবার। এ আন্দোলনে মাদারীপুরে শহিদ ১৭ পরিবারে এবারের ঈদ যেন ফিকে হয়ে আছে। ঈদের প্রস্তুতি নেই এসব পরিবারে। এখনো স্বজন হারানো শোক কাটিয়ে উটতে না পারায় ঈদ যেন ধূসর হয়ে ধরা দিয়েছে। কিছুটা আক্ষেপও রয়েছে প্রশাসন আর বর্তমান সরকারের প্রতি। তবে প্রশাসন সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাদারীপুর জেলা সদরের ঘটমাঝি ইউনিয়নের খাগদী এলাকায় ছেলের কবরের পাশে দিনের অধিকাংশ সময় কাটাচ্ছেন শহিদ রোমান বেপারীর মা রিনা বেগম। গতবার রোজার ঈদে মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তানকে নতুন জামা কাপড় কিনে দিয়ে পুরো পরিবারকে আনন্দে মাতিয়ে রাখেন রোমান। সেই স্মৃতি এখন ধূসর মরুময়। তাই তো এবারের ঈদের আনন্দের ছিটেফোঁটাও পড়েনি রোমানের পরিবারে। তার মা এখনো ছেলের পুরারো জামা-কাপড় আর কাগজপত্র ঘেটে সময় কাটান। গত বছরের ১৯ আগস্ট মাদারীপুর জেলা সদরের যুব উন্নয়ন অফিসের সামনে যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ প্রশাসনের সঙ্গে ত্রিমুখী সংর্ঘষে ঘটনাস্থলেই মারা যান রোমান বেপারী। তার মা যেন এখনো শোকে পাথর।
শুধু রোমান বেপারীই নয়, মাদারীপুরের আরও ১৬ শহিদ পরিবারে একই চিত্র। কেউ স্বামী, কেউ বাবা ও কেউ সন্তান হারিয়ে শোক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি। উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তিকে হারিয়ে পরিবারগুলোয় এখন নুন আনতে পান্তা ফুরানোর জোগাড়। সেখানে ঈদ সামনে তাদের হারানোর ক্ষতকে নতুন করে জাগিয়ে তুলছে। সপরিবারে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার কথা মনে হলেই ডুকরে কেঁদে উঠছেন স্বজনরা।
শহিদ রোমান বেপারীর মা রিনা বেগম বলেন, ‘এবার আমাদের ঈদ নাই। গতবার আমার পোলায় সবাইকে জামা কাপড় দিছে। সেই কথা মনে পড়লে রাতে ঘুমাতে পারি না। ছেলের কবরের পাশে বসে থাকি। রোমানের স্ত্রী ও ছোট নাতনি তাদের নানা বাড়িতে থাকে। আমাদের শুরুতে কিছুটা সহযোগিতা করলেও এখন কেউ খোঁজটুকু নেয় না।’
একই সুরে কথা বলেন শহিদ মামুনের স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমার একমাত্র মেয়ে এখনো তার বাবাকে খোঁজে। সারা দিন বাবার ছবি নিয়ে চুমা দেয়। গতবার পুরো পরিবার আনন্দে কাটিয়েছি। এবার আমাদের ঈদের কোনো চিহ্ন নাই। এ ছাড়া এখনো কোনো টাকা পয়সা আমরা পাইনি। দিবে দিবে করেও তারা টাকা দেয়নি।’
তবে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে কিছু পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। তবে সব নিহতের পরিবার এখনো আর্থিক সহযোগিতা পাইনি। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও শহিদ পরিবারের পাশে আছেন বলে জানান জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহ্ মো. সজীব। তিনি বলেন, ‘যারা এখনো জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে সহযোগিতা পায়নি, তাদের কাগজপত্রের কারণে হয়ত পাইনি। তবে আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করবো।’
তিনি আরও বলেন, সরকারি হিসেবে মাদারীপুর জেলায় এ পর্যন্ত নিহতের তালিকায় ১৮ জন, এর মধ্যে একজন হিন্দু সম্প্রদায়ের। এ ছাড়া আহতের তালিকায় রয়েছেন ১৫৩ জন। এদের বিভিন্নভাবে চিকিৎসা সহায়তা দেয়া হচ্ছে।