
অনলাইন ডেস্কঃ
বাংলাদেশ বর্তমানে মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্য যত্নের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং ইউনিসেফের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলোতে উঠে এসেছে। ইউনাইটেড নেশনস ইন্টার-এজেন্সি গ্রুপ ফর চাইল্ড মরটালিটি এস্টিমেশন (ইউএন আইজিএমই) এর তথ্য অনুযায়ী, দেশটি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে মৃত সন্তান প্রসবের সর্বোচ্চ হার রেকর্ড করেছে এবং নবজাতক মৃত্যু কমানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
ইউনাইটেড নেশনস ইন্টার-এজেন্সি গ্রুপ ফর চাইল্ড মরটালিটি এস্টিমেশন (ইউএন আইজিএমই) এর চাইল্ড মরটালিটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ১ লাখেরও বেশি শিশু তাদের পঞ্চম জন্মদিনের আগেই মারা গেছে। এর মধ্যে প্রায় দুই তৃতীয়াংশই মারা গেছে শিশু বয়স ২৮ দিনের মধ্যে, যা একটি উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। একই সঙ্গে মৃত সন্তান প্রসবের ঘটনা প্রতিবছর প্রায় ৬৩ হাজার দুইটি, যার মানে হলো প্রতি ৪১টি শিশুর জন্মের মধ্যে একটি মৃত সন্তান প্রসবের ঘটনা ঘটে। এই হার দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি।
বাংলাদেশকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) পূরণ করতে হলে প্রতি বছর অতিরিক্ত ২৮ হাজার নবজাতককে বাঁচানো প্রয়োজন, যা মাতৃ ও নবজাতক স্বাস্থ্য সেবার উন্নতির ওপর গুরুত্বারোপ করছে।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের ওআইসি রিপ্রেজেন্টেটিভ ফারুক আদ্রিয়ান দুমুন বলেছেন, প্রতিরোধযোগ্য জটিলতার কারণে প্রতি বছর বাংলাদেশে ১ লাখেরও বেশি নবজাতক মারা যায়, যা মানবাধিকার লঙ্ঘন। তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার দিতে এবং ধাত্রী মায়েদের সংখ্যা বাড়াতে যথেষ্ট বিনিয়োগ করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশে নবজাতকের মৃত্যু ও মৃত সন্তান প্রসবের উচ্চ হারের পেছনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ঘরে শিশুর জন্ম, প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবার অভাব, দক্ষ সেবাদাতার ঘাটতি, উপজেলা পর্যায়ে ২৪/৭ সেবা না থাকা এবং অনিয়ন্ত্রিত বেসরকারি খাতের ফলে নানা ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এসব সমস্যার কারণে অপরিণত জন্ম ও সংক্রমণজনিত মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।
গর্ভকালীন ও সন্তান প্রসবকালীন সেবা বিষয়ে সামগ্রিক উন্নতির জন্য তহবিল এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য সম্পদের ঘাটতি একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে আনার অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশের সরকারকে স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে দক্ষ সেবাদাতার উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। নবজাতকের সেবা ইউনিটগুলোকে সম্প্রসারণ, প্রশিক্ষিত নার্সের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং গর্ভকালীন, সন্তান প্রসবকালীন ও প্রসবোত্তর সেবা মান উন্নত করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউনিসেফের প্রতিনিধি ডা. আহমেদ জামশিদ মোহামেদ বলেছেন, মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নে সরকারের অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে প্রতিটি শিশুর জন্য একটি স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা যায়।
বাংলাদেশে মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রে ইতিবাচক অগ্রগতি থাকলেও, সঠিক পদক্ষেপ না নিলে এই চ্যালেঞ্জগুলো বড় আকার ধারণ করবে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।