
বিশেষ প্রতিনিধি, খুলনা থেকে ফিরে:
খুলনায় আওয়ামী লীগে পচন ধরেছে, নানামুখী অন্তদ্বন্দ্বে বিএনপি কোমায়, জনগন তাকিয়ে আছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দিকে। এনসিপিই এখন জনগনের ভরসা। আমরা জনগণকে ভালো কিছু দিবো। দিতে চেষ্টা করছি। ট্রাডিশনাল রাজনীতির বাইরে ভালো কিছু দিতে না পারলে রাজনীতি থেকে এনসিপি হারিয়ে যাবে।
২৪ এর জুলাইয়ের আম জনতার গন অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে রাজনীতির নতুন শুভ সুচনা শুরু হয়েছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে গিয়েছে। একটি দল বিগত ১৫ বছরের টানা শাসনে লুটপাটে সব শেষ করে দিয়েছে, আরেকটি দল সব কিছুই আবারও লুটেপুটে খাবার অপেক্ষায় আছে। সেটি হতে দেয়া হবে না এমনটি হুশিয়ারি দিয়ে এনসিপির নেতা, সাবেক বিএনপি নেতা এস এম আরিফুর রহমান মিঠু বলেছেন, জনগনের ভাগ্য নিয়ে বারবার ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না। জনগণ ক্ষমতার উৎস। তাদের হাতেই ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়া হবে।
খুলনা মহানগরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, এনসিপির সংগঠনক সাবেক ছাত্রনেতা মিঠু আরও জানান, শেখ হাসিনা সচিবালয়, বিচার বিভাগ, পুলিশ- সিভিল প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী, সংবিধান, উচ্চ আদালত, নির্বাচন কমিশন, ব্যাংক সেক্টর, সংবাদমাধ্যম, শিক্ষা ব্যবস্থা, রাজনীতি সব কিছুই ধ্বংস করে দিয়েছেন।
হাজার হাজার মানুষকে গুম- খুন করেছেন। লাখ লাখ নেতা-কর্মীদের নামে মামলা, গায়েবি মামলা করিয়েছেন। সীমাহীন দুর্নীতি করে দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। দিনের ভোট রাতে করে ক্ষমতাকে জিইয়ে রেখেছিলেন। এখন তিনি ভারতে পালিয়ে থেকে সরকারকে অস্থিতিশীল করতে সচেষ্ট। জাতির অভিভাবক ডক্টর ইউনুস সংস্কারে হাত দিয়েছেন। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন। ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার শেষে নির্বাচন।
শিববাড়ি মোড়ে নিজের বিলাসবহুল মনোরম অফিসে অন লাইন নিউজ পোর্টাল প্রথম সময় নিউজ ডটকমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ৩৬ জুলাই বিপ্লবে উঠে আসা ধনাঢ্য তরুন রাজনীতিবিদ মিঠু এসব কথা বলেন। আরিফুর রহমান মিঠু। খুলনার সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। পিতা এসএমএ রব বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। এরশাদ শাসন আমলে ও এরশাদের পতনের পরে জাতীয় পার্টির প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। দিঘলিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান ছিলেন। প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার ছিলেন।
খুলনা শিল্প ও বনিক সমিতির সভাপতিসহ অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ক্লাব, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের উদ্যেক্তা, সভাপতি- পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ, দানবির, পরহেজগার ব্যক্তি ছিলেন প্রয়াত এসএমএ রব। পিতার মতোই ধার্মিক হয়েছেন মিঠু। ২০০০ সালের ১১ নভেম্বর একদল দুষ্কৃতিকারীর গুলিতে বাসা থেকে জুম্মা নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় মসজিদের কাছাকাছি প্রকাশ্য দিবালোকে তিনি নিহত হন।
৯০ এর দশকে এসএম এ রব কয়েক হাজার নেতা- কর্মীদেরকে নিয়ে জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন। যোগ দেবার সময়ে এসএমএ রবকে পরবর্তী মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হিসাবে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেই ঘোষণা দিয়েছিলেন। খুলনা হাজি বাড়ির সন্তান শেখ আবুল কাশেম জাতীয় পার্টির মহানগর সাধারণ সম্পাদক এসএমএ রব খুলনা মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি ছিলেন। খুলনার রাজনৈতিক মহলের ধারণা, রব- কাশেমের মতো রাজনৈতিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ জুটি খুলনা শহরে আর আসবে না।
আলাপকালে মিঠু জানান, জুলাই বিপ্লবের শুরুতেই মিঠু কোটা বিরোধী আন্দোলনে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সমর্থনে নিজের শক্তি- সামর্থের মধ্যে তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। সেই থেকে তরুন প্রজন্মের সাথে পথ চলা শুরু এক সময়ের খালিশপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও আরো পরে মহানগর বিএনপির কোষাধাক্ষের দায়িত্ব পালনকারী সাবেক বিএনপি নেতা মিঠুর।
তিনি জানান, ছাত্র- শিক্ষার্থীদের চোখ দিয়ে তিনি নতুন বাংলাদেশ দেখতে পেয়েছেন। নতুন রাজনীতির পদধ্বনি শুনতে পেয়েছেন। যা তাকে উৎসাহিত করেছে। বিমোহিত করেছে। মিডিয়া ও কর্মীবান্ধব তরুণ এ রাজনৈতিক নেতা জানান, দেশবাসী তাকিয়ে আছে মেধাবী শিক্ষার্থীদের দিকে। এরাই পারে নতুন এক দুর্ভেদ্য বাংলাদেশ উপহার দিতে।
আলাপকালে মিঠু জানান, খুলনা আওয়ামী লীগ তাদের কৃতকর্মের ফল পেয়েছে। অন্যদিকে, বিএনপি যেভাবে চাঁদাবাজি, লুটতরাজ, অন্তদ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে, তাতে তাদের দলটির ভবিষ্যৎ অন্ধকার। গুটি কয়েক নেতা ৫ জুলাইয়ের পরে ফুলে ফেপে রাতারাতি ধনী হয়েছেন, এমন অভিযোগ মিঠুর।
তিনি জানান, এসব নেতার দৃশ্যমান কোন ব্যবসা নেই, ট্রেড লাইসেন্স নেই, এমনকি টিন নাম্বার পর্যন্ত নেই। বাসা বাড়ি বা ব্যাংক একাউন্ট চেক করলে অবৈধ টাকার সন্ধান পাওয়া যাবে, এমন দাবি মিঠুর। সদ্য সমাপ্ত মহানগর বিএনপির সম্মেলনকে উদাহরণ টেনে মিঠু জানান, নিজেদের সাজানো বাগানের ৫০০ ভোটের মধ্যে দুইশত ভোট যেভাবে এদিক ওদিকে চলে গেছে, সেটার মুল্যায়ন তাদেরই করা উচিত।
আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের দায়িত্ব বিএনপি নিয়েছে এমন অভিযোগ জানিয়ে মিঠু বলেন, ওয়ার্ড বিএনপির বিভিন্ন কমিটিতে আওয়ামী লীগ নেতারা জায়গা পেয়েছেন, তাতে বিএনপির ত্যাগী নেতা-কর্মীরাই বিস্মিত। টাকার বিনিময়ে এসব পদ বিক্রি হচ্ছে আলাপচারিতায় যোগ করেন মিঠু। বিভিন্ন সময়ে বিএনপি নেতাদের প্রকাশিত কথোপকথনের অডিও ক্যাসেটে চাঁদাবাজির কেচ্ছা কাহিনি খুলনাবাসী শুনতে পেলেও বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা শুনেন কিনা, কিংবা শুনলে কি ব্যবস্থা নিয়েছেন, এমন প্রশ্ন রেখেছেন দলটির সাবেক নেতা মিঠু।
আলাপকালে মিঠু অবিলম্বে খুলনাতে গ্যাস সরবরাহ, শহর ধরে টাউন সার্ভিস, দ্রুত বিমানবন্দর নির্বাণ শেষ করা, দ্রুত মেয়র ও সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নির্বাচন সম্পন্ন করা, খুলনায় পরিকল্পিতভাবে অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ করা, খুলনা- বাগেরহাট- সাতক্ষীরাকে পর্যটনের আওতায় আনা, খুলনায় আরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, স্টেডিয়াম সংস্কার ও আরও খেলার মাঠ তৈরি, ৩৬ জুলাইয়ের পরে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের জন্য সরকার থেকে প্রনোদনার ব্যবস্থা করা, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সুদ মওকুফ করা, হারানো চিংড়ি রপ্তানি বানিজ্যের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা এবং দৌলতপুর- খালিশপুরে বন্ধ মিল কর কারখানা চালুর দাবি জানান। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এনসিপি চাইলে খুলনা-৩ আসনে প্রার্থী হবেন এসএম আরিফুর রহমান মিঠু।