
অনলাইন ডেস্কঃ
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে একদল উচ্ছৃঙ্খল মানুষ মব সৃষ্টির মাধ্যমে হেনস্তা করার পর এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে সরকার ও সরকারের বাইরে। ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে যাওয়ার পরপরই সমালোচনার ঝড় ওঠে। সামাজিক ব্যক্তিত্ব, মানবাধিকার সংগঠন ও রাজনৈতিক দলগুলো এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায়। রাতেই অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বিৃবতি দিয়ে বলা হয়, ‘মব’ সৃষ্টি করে উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টিকারী সবাইকে চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
গতকাল সকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা গাজীপুর এক অনুষ্ঠানে গিয়ে বলেছেন, মব জাস্টিস গ্রহণযোগ্য নয়। পুলিশের ভূমিকা তদন্ত করা হবে।
গত ২২ জুন রাজধানীর উত্তরায় সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদাকে কিছু উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি সমবেত হয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে মারধর করে এবং পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। ওইদিন রাতেই কানাডা প্রবাসী সিনিয়র সাংবাদিক সওগাত আলী সাগর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে প্রশ্ন তুলেন, ‘কে এম নূরুল হুদার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকলে আইনানুগভাবে তার বিচার হবে।
কিন্তু মব এট্টোসিটির নামে এই জংলিপনা কেন?’
সাবেক সিইসিকে লাঞ্ছিত করা রাষ্ট্রীয় মর্যাদা অবমাননার শামিল -আসক
সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদার মবকাণ্ডের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেয় আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। বিবৃতিতে আসক জানায়, সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদা রাষ্ট্রের একজন নাগরিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাঁকে এভাবে সংঘবদ্ধ সহিংস গোষ্ঠীর দ্বারা হামলার শিকার করে লাঞ্ছিত করা শুধু ব্যক্তির অপমান নয়, এটি রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও আইনের শাসনের প্রতি অবমাননার শামিল। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে প্রকাশিত এই দৃশ্য শুধু একজন ব্যক্তির প্রতি নয় বরং দেশের সংবিধান, মানবাধিকারের ন্যূনতম মূল্যবোধ ও আইনের শাসনের প্রতি সরাসরি আঘাতের নামান্তর।
বিবৃতিতে আসক জানায়, শুধু ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে জুনের এ পর্যন্ত এ ধরনের অরাজকতায় উচ্ছৃঙ্খল জনতার হাতে কমপক্ষে ৮৩ জন নিহত হয়েছেন, যা একটি সভ্যরাষ্ট্রে ঘোরতর নৈরাজ্যের ইঙ্গিত বহন করে।
অভিযোগ উঠেছে হেনস্তার সঙ্গে জড়িতরা বিএনপির একটি সহযোগী সংগঠনের কর্মী। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বিএনপি মব সংস্কৃতির বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, আমরা মব কালচারে বিশ্বাস করি না, আমরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য অবিরাম সংগ্রাম করে যাচ্ছি। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার নূরুল হুদার ওপরে যে অবমাননাকর ব্যবহার করা হয়েছে এটা আমরা সমর্থন করি না।
এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। যদি বিএনপির কোনো নেতা-কর্মী এই ঘটনায় জড়িত থাকে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আমরা নেব, এটা আমাদের অবস্থান। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার নূরুল হুদার সঙ্গে সোমবার গ্রেপ্তারের সময় এবং কোর্টে যারা অসদাচরণ করেছে তাদের শাস্তি দাবি করেন দলটির আরেক নেতা রুহুল কবির রিজভী। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ে গণমাধ্যমের উদ্দেশে বলেন, যারা বিচারের নামে মব জাস্টিস করছেন, তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। বেগম রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির মহাসচিব কাজী মামুনুর রশিদ বলেছেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে প্রধান নির্বাচন কমিশনার একটি সাংবিধানিক পদ। এ ধরনের একজন ব্যক্তিকে মামলার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন আটক করতে পারে, কিন্তু পুলিশের উপস্থিতিতে কে এম নূরুল হুদাকে আটকের সময় একটি রাজনৈতিক দলের কিছু উচ্ছৃঙ্খল কর্মী যেভাবে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করল এটা কখনোই কাম্য নয়। এতে করে বোঝা যায় দেশের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সরকার ও প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন